ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রাহে বেলায়াত দ্বিতীয় অধ্যায় - বেলায়াতের পথে যিকরের সাথে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
চ. আত্মশুদ্ধিমূলক মানসিক ও দৈহিক কর্ম - (৯) সুন্দর আচরণ

সমাজের সকলের সাথে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ করা আল্লাহর প্রিয়তম ইবাদতসমূহের অন্যতম। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

مَا مِنْ شَيْءٍ يُوضَعُ فِي الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلَاةِ


“কিয়ামতের দিন কর্মবিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান কর্ম হবে সুনদর আচরণ এবং সুনদর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়েই নফল সালাত ও নফল সিয়াম পালন করার সাওয়াব অর্জন করবে।[1]


মুমিনের আচরণ এমনই যে সহজেই তিনি মানুষকে আপন করে নেন এবং অন্যেরাও তাকে আপন করে ভালবেসে ফেলে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ

الْمُؤْمِنُ يَأْلَفُ وَيُؤْلَفُ ، وَلا خَيْرَ فِيمَنْ لا يَأْلَفُ وَلا يُؤْلَفُ


“মুমিন ঐ ব্যক্তি যে নিজে অন্যদেরকে ভালবাসে এবং অন্যেরাও তাকে ভালবাসে। যে ব্যক্তি নিজে অন্যদের ভালবাসে না এবং অন্যরাও তাকে ভালবাসে না তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।” হাদীসটি হাসান।[2]


হাদীসের আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, হুসনে খুলুক বা সুন্দর আচরণের তিনটি দিক রয়েছে। প্রথমত: কথা ও আচরণের

ক্ষেত্রে বিনম্রতা, প্রফুল্ল চিত্ত, হাস্যোজ্জ্বল মুখ, সত্য পরায়ণতা, কম কথা বলা ও বেশি শ্রবণ করা। দ্বিতীয়ত, কোনো কারণে ক্রোধান্বিত হলে গালি গালাজ, অভিশাপ ও সীমালঙ্ঘণ বর্জন করা। তৃতীয়ত, ক্ষমা করা, বিশেষত প্রতিশোধ নেওয়া বা প্রতিউত্তর দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে ক্ষমা করে দেওয়া। এইরূপ আচরণের অধিকারী কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সবচেয়ে নৈকট্যের মর্যাদায় সমাসীন হবেন। আর এর বিপরীত আচরণের অধিকারী সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানে থাকবেন। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا ، وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ ، وَالْمُتَشَدِّقُونَ ، وَالْمُتَفَيْهِقُونَ


“তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কেয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থান লাভ করবে যাদের আচরণ সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় এবং কেয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে তারা যারা বেশি কথা বলে, যাদের কথায় বা আচরণে অহংকার প্রকাশিত হয় এবং যারা কথাবার্তায় অন্যের প্রতি অবজ্ঞা বা অভদ্রতা প্রকাশ করে।” হাদীসটি হাসান।[3]

[1] হাদিসটি সহীহ। তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৩৬৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২২; আলবানী, সহীহুল জামে’ ২/৯৯৮।

[2] আলবানী, সহীহুল জামে’ ২/৯৯৮।

[3] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৩৭০। তিনি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।