ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রমযান মাসের ৩০ আসর পঞ্চবিংশ আসর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
হাদীসে জাহান্নামের বর্ণনা

অনুরূপভাবে হাদীসেও জাহান্নামের বর্ণনা রয়েছে: যেমন,

* হাদীসে রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا ».

‘জাহান্নামকে কিয়ামতের ময়দানে আনা হবে। যা ৭০ হাজার ফেরেশতা ৭০ হাজার শিকল দ্বারা (বেঁধে) টেনে উঠাবে।’[1]

* হাদীসে আরো রয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا».

‘দুনিয়ার আগুন থেকে জাহান্নামের আগুনের তাপ সত্তর গুণ বেশি। তখন সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দুনিয়ার আগুনই তো শাস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তিনি উত্তর দিলেন, এর তাপ দুনিয়ার আগুনের ওপর ৬৯ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। প্রত্যেকটিই এর মত গরম।’[2]


* হাদীসে আরো আছে, আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذْ سَمِعَ وَجْبَةً فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- « تَدْرُونَ مَا هَذَا ». قَالَ قُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ « هَذَا حَجَرٌ أرسله الله في جهنم مُنْذُ سَبْعِينَ خَرِيفًا فَالآنَ حين انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا ».

‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে হাজির ছিলাম হঠাৎ আমরা একটা শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি বলেন, তোমরা কি জান এটা কিসের শব্দ? আমরা বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ এ ব্যাপারে বেশি জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা জাহান্নামের একটি পাথরের শব্দ। যা আল্লাহ ৭০ বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছিলেন, আজ তা জাহান্নামের শেষ প্রান্তে পৌঁছল।’[3]

* উৎবাহ ইবন গাযওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু তার খুৎবার মধ্যে জাহান্নামের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন, তিনি বলেন,

قَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ فَيَهْوِى فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا لاَ يُدْرِكُ لَهَا قَعْرًا وَوَاللَّهِ لَتُمْلأَنَّ أَفَعَجِبْتُمْ

‘জাহান্নামের একটি পাথর জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হবে তা নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে ৭০ বছর লাগবে। এতদসত্ত্বেও জাহান্নাম পাপীদের দ্বারা ভর্তি হয়ে যাবে। তোমরা কি আশ্চর্যাম্বিত হয়েছ?’[4]

* ‘ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীসে আরও রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَوْ أَنَّ قَطْرَةً مِنَ الزَّقُّومِ قُطِرَتْ فِى دَارِ الدُّنْيَا لأَفْسَدَتْ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا مَعَايِشَهُمْ».

‘যদি জাহান্নামের যাক্কুম ফল দুনিয়াতে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তার দুর্গন্ধে দুনিয়াবাসীর জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে যাবে।’[5] আবু ঈসা তিরমিযী হাদীসটিকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন।

* অন্য হাদীসে নু‘মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلاَنِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ يَغْلِى مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِى الْمِرْجَلُ مَا يَرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا ».

‘জাহান্নামে যাকে সব চেয়ে কম শাস্তি দেয়া হবে, তাকে জাহান্নামের দু’টি স্যান্ডেল পরিধান করানো হবে যার ফিতাদ্বয় হবে আগুনের। তার উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির ন্যায়। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেয়া হচ্ছে।’[6]

* আরও হাদীসে রয়েছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِى النَّارِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ فَيَقُولُ لاَ وَاللَّهِ يَا رَبِّ. وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِى الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِى الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ فَيَقُولُ لاَ وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِى بُؤُسٌ قَطُّ وَلاَ رَأَيْتُ شِدَّةً قَطُّ ».

‘কিয়ামতের ময়দানে দুনিয়ার মধ্যে সব যেয়ে ধনাঢ্য ও সুখী ব্যক্তিকে আনা হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নাম থেকে অল্প সময় ঢুকিয়ে এনে জিজ্ঞাসা করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনও দুনিয়াতে সুখ-শান্তিতে ছিলে? তুমি কি কখনও দুনিয়ার নিয়ামত পেয়েছিলে? সে বলবে, না-আল্লাহর কসম! হে আমার রব! আমি কখনও দুনিয়তে শান্তি পাই নি। ঠিক তদ্রুপ দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সর্বাধিক কষ্টকর ও অশান্তিতে ছিলে, তাকে অল্প সময়ের জন্য জান্নাতে ঢুকিয়ে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনও অভাব অনটনে ছিলে? সে আল্লাহর কসম করে বলবে, না, আমি কখনও কোনো অভাব-অনটনে বা কষ্টে ছিলাম না।’[7]

অর্থাৎ জাহান্নামী ব্যক্তি দুনিয়ার সকল শান্তি ও নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে। আর জান্নাতী ব্যক্তি দুনিয়ার সকল কষ্ট-ক্লেশের কথা ভুলে যাবে।

* অপর হাদীসে রয়েছে, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يُقَالُ لِلرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ لَكَ مَا عَلَى الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ أَكُنْتَ مُفْتَدِيًا بِهِ ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: نَعَمْ ، قَالَ: فَيَقُولُ: قَدْ أَرَدْتُ مِنْكَ أَهْوَنَ مِنْ ذَلِكَ ، قَدْ أَخَذْتُ عَلَيْكَ فِي ظَهْرِ آدَمَ أَنْ لاَ تُشْرِكَ بِي شَيْئًا ، فَأَبَيْتَ إِلاَّ أَنْ تُشْرِكَ».

‘কিয়ামতের ময়দানে এক জাহান্নামী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের মালিক হলে কি তা প্রাণের ফিদয়াস্বরূপ খরচ করতে? সে বলবে হে আমার রব! আমি তা করতাম। তখন আল্লাহ বলবেন, হে আমার বান্দা! আমি তোমাকে তার চেয়েও সহজ হুকুম দিয়েছিলাম, যখন আমি তোমাকে আদম (‘আলাইহিস সালাম) এ পিঠ থেকে বের করেছিলাম। তখন বলেছিলাম তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি আমার কথা অমান্য করে আমার সঙ্গে অন্যকে শরীক করেছিলে।’[8]

* অন্য হাদীসে,

«عَنْ يَعْلَى بْنِ مُنْيَةَ ، وهو ابن أمية، ومنيه أمه ـ : يُنْشِئُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لأَهْلِ النَّارِ سَحَابَةً سَوْدَاءَ مُظْلِمَةً مُدْلَهِمَّةً ، فَإِذَا أَشْرَفَتْ عَلَيْهِمْ نَادَاهُمْ: يَا أَهْلَ النَّارِ، أَيَّ شَيْءٍ تَطْلُبُونَ ؟ وَمَا الَّذِي تُسْأَلُونَ ، فَيَذْكُرُونَ بِهَا سَحَابَ الدُّنْيَا ، وَالْمَاءَ الَّذِي كَانَ يَنْزِلُ عَلَيْهِمْ ، فَيَقُولُونَ: نَسْأَلُ بَارِدَ الشَّرَابِ ، فَيُمْطِرُ عَلَيْهِمْ أَغْلالا تُزَادُ فِي أَغْلالِهِمْ ، وَسَلاسِلَ تُزَادُ فِي سَلاسِلِهِمْ ، وَجَمْرًا تُلْهِبُ النَّارَ عَلَيْهِمْ»

‘ইয়া‘লা ইবন মুনইয়াহ – তাঁর পিতার নাম উমাইয়া আর মুনইয়াহ তার মায়ের নাম- বর্ণনা করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামীদের জন্য ঘন কালো মেঘ সৃষ্টি করবেন। যখন মেঘ তাদের সামনে দেখা যাবে তখন মেঘ তাদের ডেকে বলবে, হে জাহান্নামীরা! তোমরা মেঘ থেকে কি কিছু চাও, তখন তারা দুনিয়ার মেঘের কথা চিন্তা করবে এবং দুনিয়ার পানির কথা ভাববে, তাই তারা বলবে, আমরা পিপাসিত, আমরা মেঘ থেকে বৃষ্টি চাই, পানি চাই। অতঃপর মেঘ তাদের জন্য আগুনের বেড়ী, শিকল ও আগুনের কয়লা অধিক পরিমাণে বর্ষণ হতে থাকবে। আর আগুনের কয়লা আগুনের দাহ্য আরও শক্তি বাড়িয়ে দেবে।’[9]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ: مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَقَاطِعُ رَحِمٍ ، وَمُصَدِّقٌ بِالسِّحْرِ . وَمَنْ مَاتَ مُدْمِنًا لِلْخَمْرِ سَقَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ نَهْرِ الْغُوطَةِ . قِيلَ: وَمَا نَهْرُ الْغُوطَةِ ؟ قَالَ: نَهْرٌ يَجْرِي مِنْ فُرُوجِ الْمُومِسَاتِ يُؤْذِي أَهْلَ النَّارِ رِيحُ فُرُوجِهِمْ».

‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না ১. মদ্যপায়ী, ২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ও ৩. জাদুতে বিশ্বাসী। যে ব্যক্তি মদ পান করে মারা যাবে, আল্লাহ তাকে গুওত্বাহ নদীর রক্ত পান করাবেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নহরে গুওত্বাহ কী? তিনি উত্তরে বললেন, যে নদী দিয়ে জাহান্নামী মহিলাদের লজ্জাস্থানের দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত বইতে থাকবে, তার দুর্গন্ধ প্রত্যেক জাহান্নামীর কষ্ট বৃদ্ধি করবে।’[10]

* অন্য হাদীসে জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ: «عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ» أَوْ «عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ»

‘আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা; যে ব্যক্তি নেশা করবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে ‘তীনাতুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলে, হে আল্লাহর রাসূল! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম।’[11]

* বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের বলা হবে,

مَاذَا تَبْغُونَ؟ قَالُوا عَطِشْنَا يَا رَبَّنَا فَاسْقِنَا. فَيُشَارُ إِلَيْهِمْ أَلاَ تَرِدُونَ؟ فَيُحْشَرُونَ إِلَى النَّارِ كَأَنَّهَا سَرَابٌ يَحْطِمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيَتَسَاقَطُونَ فِى النَّارِ.

‘তোমরা কী চাও? তারা বলবে হে রব! আমরা পিপাসিত। আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তখন তাদেরকে ইঙ্গিত করে বলা হবে যে তোমরা কি হাওযে নামবে না? এরপর তাদেরকে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে; তারা দেখতে পাবে জাহান্নামকে মরীচিকার মত; যার একাংশ আরেক অংশকে বিধ্বংস করছে; তারপর তারা জাহান্নামে পতিত হবে।’[12]

হাসান বছরী রহ. বলেন, ‘তোমাদের ওই জাহান্নামীদের সম্পর্কে কী ধারণা, যারা ৫০ হাজার বছর পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, যেখানে তারা কোনো খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না এবং এক ফোঁটা পানিও পান করতে পারবে না। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হবে। তাদের পেট ক্ষুধায় আগুনের মত জ্বলতে থাকবে। অতঃপর তাদের জাহান্নামের আগুনের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, আর সেখানে তাদেরকে ফুটন্ত গরম পানি পান করনো হবে। যার উত্তপ্ততার কোনো তুলনা নেই, যে উষ্ণতা ও উত্তপ্ততা পরিপক্কতা পেয়েছে।’[13]

ইবনুল জাওযী রহ. জাহান্নামের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, জাহান্নাম এমন ঘর যার অধিবাসীদের শান্তি থেকে দূরে রাখা হয়েছে। সকল প্রকারের আনন্দ ও শান্তি তেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। তাদের সাদা চামড়া কাল রঙে পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। তাদের পাহাড়ের চেয়ে শক্ত হাতুড়ি দ্বারা পিটানো হচ্ছে। সেখানে শাস্তি দেওয়ার জন্য কঠোর হৃদয়ের ও কঠিন শাস্তিদাতা ফেরেশতা রয়েছে। হায়! যদি তুমি তাদেরকে দেখতে সেই ফুটন্ত পানিতে সাঁতার কাটতে। কঠিন ঠাণ্ডাতে নিক্ষিপ্ত হতে। চিন্তা ও কষ্ট সর্বক্ষণ তাদের সাথী থাকবে, ফরে তারা কখনও খুশী হতে পারবে না। তাদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাই তারা সে স্থান ত্যাগ করতে পারবে না। স্থায়ীভাবে, চিরকাল সেখানে তারা থাকবে, তারা তা থেকে মুক্তি পাবে না। তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে, যারা কঠোর হৃদয়ের হবে। যাদের ধমক আযাব থেকে বড় কষ্টদায়ক হবে। যাদের অনুশোচনা তাদের বিপদের চেয়েও অধিক শক্তিশালী। তাদের যৌবনকালকে পাপ দ্বারা ধ্বংস করার কারণে তার কাঁদতে থাকবে। তারা যত কাঁদবে কঠোর হৃদয় কঠিন ফেরেশতাগণ তাদেরকে তত বেশি কষ্ট দিতে থাকবে। হায় আফসোস তাদের জন্য যে তারা তাদের রবের রোষানলে পড়েছে! হায় আফসোস তাদের বড় বিপদের জন্য! আহা তাদের কত অপমান যে সকল মানুষের সামনে অপমানিত হচ্ছে। হে সৃষ্টির ঘৃণিত ব্যক্তিরা! এখন তোমাদের দুনিয়ার হারাম উপার্জন কোথায় গেল? আজ তোমাদের পাপ করার আগ্রহ কোথায় গেল? মনে হবে যেন তা ছিল তাদের আকাশ কুসুম কল্পনা। তারপর তাদের এ শরীরকে জাহান্নামে পোড়ানো হবে, যখনই তাদের শরীর পুড়ে যাবে, আল্লাহ নতুন দেহ পরিবর্তন করে দেবেন। যখন শরীরের চামড়া পুড়ে যাবে, নতুন চামড়া দ্বারা পরিবর্তন দেবেন। সেখানে তাদের শাস্তি বাড়ানোর জন্য কঠিন হৃদয়ের ফেরেশতা সর্বক্ষণ নিযুক্ত থাকবে।’

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচান। আমাদের চিরস্থায়ী আপমান ও ধ্বংস হতে বাঁচান। হে আল্লাহ আপনি আপনার রহমতে আমাদেরকে মুত্তাকীদের ঘরের বাসিন্দা করুন করুন। আর আমাদের ও আমাদের পিতা-মাতাসহ মুসলিমদের ক্ষমা করে দিন। হে করুণাময় রব!আর আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর সালাত পেশ করুন।

[1] মুসলিম: ২৮৪২।

[2] বুখারী: ৩২৬৫; মুসলিম: ২৮৪৩।

[3] মুসলিম: ২৮৪৪।

[4] মুসলিম: ২৯৬৭।

[5] আহমাদ ১/৩০১, ৩৩৮; তিরমিযী: ২৫৮৫; ইবন মাজাহ: ৪৩২৫।

[6] বুখারী: ৬৫৬১, ৬৫২৬; মুসলিম: ২১৩।

[7] মুসলিম: ২৮০৭।

[8] বুখারী: ৩৩৩৪, ৬৫৫৭; মুসলিম: ২৮০৫;

[9] ফাওয়ায়েদ তামাম: ৯৬১; তাবারানী ফিল আওসাত্ব, দেখুন: মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/৩৯০। দুর্বল।

[10] আহমাদ ৪/৩৯৯; মুস্তাদরাকে হাকেম ৪/১৪৬। দুর্বল।

[11] মুসলিম: ২০০২।

[12] বুখারী: ৪৫৮১; মুসলিম: ১৮৩।

[13] (বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ) উমদাতুল কারী: ২৮/৪৮৩।