ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ৪ - আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলার শ্রবণ ও দৃষ্টি ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলার শ্রবণ ও দৃষ্টি

৪- إثبات السمع والبصر لله سبحانه وتعالى

৪- আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলার শ্রবণ ও দৃষ্টি:

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر ‘‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ ﴿إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সর্বোত্তম উপদেশ দান করেন৷ আর আল্লাহ সবকিছুই শোনেন ও দেখেন’’। (সূরা নিসাঃ ৫৮)


ব্যাখ্যা:وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر ليس كمثله شيئ এ আয়াতের প্রথম অংশ হচ্ছে﴿فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ﴾ ‘‘আল্লাহ তাআলা আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তিনি তোমাদের নিজ থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, অনুরূপ অন্যান্য জীব-জন্তুর জোড়া বানিয়েছেন এবং এই নিয়মে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার ঘটান’’।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ যিনি সকল মানুষকে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপ অন্যান্য জীবজন্তুর জোড়া বানিয়েছেন, তার মত আর কিছুই নেই। কেননা তিনি সেই একক অমূখাপেক্ষী সত্তা, যার কোনো নযীর (সদৃশ) নেই। তিনি السميع (সর্বশ্রোতা), যিনি সকল ভাষার সকল আওয়াজই শুনেন। তিনি البصير (সর্বদ্রষ্টা), তিনি সবকিছুই দেখেন। আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়।[1]

ইমাম শাওকানী (রঃ) তাঁর তাফসীরে বলেনঃ যে ব্যক্তি ভালভাবে এই আয়াতটি বুঝতে সক্ষম হবে এবং যথাযথভাবে তা নিয়ে গবেষণা করবে, আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে মতভেদকারীদের মতভেদ করা সত্ত্বেও সে উজ্জল ও সুস্পষ্ট পথে চলতে পারবে। সে যদি আল্লাহর বাণী: وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر (তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা) নিয়ে চিন্তা করে, তাহলে তার জ্ঞান আরো বৃদ্ধি পাবে। কেননা আল্লাহর অনুরূপ কোন জিনিষ হওয়াকে পরিহার করার পর আল্লাহর জন্য উপরোক্ত দু’টি নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করার দ্বারা আল্লাহর আসমা ও সিফাতের প্রতি বিশ্বাস মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি আনয়ন করে, অন্তর থেকে সকল ব্যাধি সরিয়ে দেয় এবং হৃদয়কে শীতল করে তুলে।

সুতরাং হে সত্যের সন্ধানী! তুমি এই উজ্জল প্রমাণ এবং মজবুত দলীলের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করো। এর মাধ্যমেই তুমি অনেক বিদআতকে ভেঙ্গে চুরমার করতে পারবে, গোমরাহীর ইমামদের ভিত্তিকে ধ্বংস করতে পারবে এবং যুক্তিবাদীদের নাকে মাটি লাগাতে পারবে। বিশেষ করে যখন তুমি আল্লাহ তাআলার এই বাণীকে তার সাথে যুক্ত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃيَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا তিনি লোকদের সামনের ও পেছনের সব অবস্থা জানেন। তারা তাদের জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেনা।

[1] - আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নে আরো কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো। আওস ইবনে সাবেতের স্ত্রী খাওলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ﴾

‘‘যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ তোমাদের উভয়ের কথা শুনেন। সব কিছু দেখেন এবং শুনেন’’। (সূরা মুজাদালাহঃ ০১) আল্লাহ ইহুদীদের প্রতিবাদ করে বলেনঃ

﴿لَقَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءُ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا وَقَتْلَهُمْ الْأَنْبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَنَقُولُ ذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ﴾

‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে যে, আল্লাহ হচ্ছেন অভাবগ্রস্ত আর আমরা বিত্তবান। এখন আমি তাদের কথা এবং যেসব নবীকে তারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, তা লিখে রাখব, অতঃপর বলবঃ ‘আস্বাদন কর জ্বলন্ত আগুনের আযাব। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৮১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ﴾

‘‘তারা কি মনে করে যে আমি তাদের গোপন বিষয় গোপন পরামর্শ শুনিনা? হাঁ, শুনি। আমার প্রেরিত দূতগণ তাদের নিকটে থেকে লিপিবদ্ধ করে’’। (যুখরুফঃ ৮০) আল্লাহ তা’লা মূসা ও তাঁর ভাই হারূন (আঃ)কে লক্ষ্য করে বলেন: قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى ‘‘আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় করনা, আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি শুনি ও দেখি। (সূরা তোহা: ৪৬)

উপরোক্ত আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, বাস্তবেই আল্লাহর শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি রয়েছে। তবে তাঁর দেখা ও শুনা কোন সৃষ্টিজীবের মত নয়। কোন মানুষ যখন বন্ধ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে তখন সে বাহিরের কিছুই দেখতে পায়না এবং বাহিরের কোন কথাও শুনতে পায়না। কিন্তু মহান আল্লাহ আরশের উপর থেকে মাখলুকের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্তই দেখতে পান এবং সকল কথাই শুনেন।