ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের] গৃহে একদিন বিষয়সূচী এবং বিস্তারিত ইসলামহাউজ.কম
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক বিবাহ

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগারজন মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন, তাদেরকে মুমীন জননী বলা হয়..। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তখন নয়জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। তারা মহা সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিত হয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বয়স্কা, বৃদ্ধা, বিধবা, তালাক প্রাপ্তা ও দুর্বল মহিলাদের বিবাহ করেছিলেন, শুধু মাত্র আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাই ছিলেন কুমারী।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন জননীদেরকে বিবাহ করে তাদেরকে ইনসাফের সাথে একত্রিত করেন। তিনি ছিলেন ইনসাফ ও তাদের হক বণ্টনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

«كان رسول لله - صلى الله عليه وسلم - إذا أراد سفرًا أقرع بين نسائه فأيتهن خرج سهمها خرج بها معه، وكان يقسم لكل امرأة منهن يومها وليلتها».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন সব স্ত্রীদের নামে লটারি করতেন, যার নাম উঠত তাকেই তিনি সফর সঙ্গী করতেন, আর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পালা ক্রমে দিন-রাত বণ্টন করতেন।[1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনসাফের এক বাস্তব নমুনা বর্ণনা করতে গিয়ে আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

«كان للنبي - صلى الله عليه وسلم - تسع نسوة، فكان إذا قسم بينهن لا ينتمي إلى المرأة الأولى إلا في تسع فكن يجتمعن كل ليلة في بيت التي يأتيها، فكان في بيت عائشة فجاءت زينب فمد يده إليها فقالت عائشة: هذه زينب، فكف النبي - صلى الله عليه وسلم - يده».

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নয় জন স্ত্রী ছিলেন, তিনি যখন তাদের মাঝে দিন বণ্টন করতেন তখনও তিনি নয়জনকেই সমান চোখে দেখতেন। প্রতি নিশিতে তারা পালা প্রাপ্ত বাড়ীতে একত্রিত হতেন, এক রাত্রিতে আয়েশার বাড়ীর পালার দিনে যয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা উপস্থিত হওয়াতে তিনি তাঁর হাত বাড়ালেন, এ দেখে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: তিনি তো যয়নাব, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত ঘুরিয়ে নিলেন”।[2]

আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে ওহী ও তাওফিক না থাকলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাড়ী এত সুন্দর ও সুচারু রূপে পরিচালিত হত না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজ ও কথার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করতেন। তিনি স্ত্রীদেরকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের দিকে উৎসাহ প্রদান করতেন এবং আল্লাহর হুকুম পালনার্থে তাতে তিনি সহযোগিতা করতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ لَا نَسۡ‍َٔلُكَ رِزۡقٗاۖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكَۗ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ ١٣٢ ﴾ [طه: ١٣٢]

অর্থাৎ আর তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও ও তাতে অবিচলিত থাক, আমি তোমার নিকট কোন রুযী কামনা করি না, আমিই তোমাকে রুযী দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।[3]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

«كان النبي - صلى الله عليه وسلم - يصلي وأنا راقدة معترضة على فراشه فإذا أراد أن يوتر أيقظني».

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [রাতে উঠে তাহাজ্জুদের] সালাত পড়তেন। আর আমি তাঁর বিছানায় গতিরোধ করে শুয়ে থাকতাম, যখন তিনি বিতর সালাত পড়তেন তখন আমাকে জাগাতেন”।[4]

তাহাজ্জুদ নামাযে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সাহায্য করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ প্রদান করেছেন, এবং সুন্দর পন্থা শিক্ষা দিয়েছেন, আর তা হল: স্বামী স্ত্রীর চোখে বা স্ত্রী স্বামীর চোখে পানি ছিটিয়ে জাগাবে।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:

«رحم الله رجلاً قام من الليل فصلى وأيقظ امرأته فصلت فإن أبت نضح في وجهها الماء، ورحم الله امرأة قامت من الليل فصلت وأيقظت زوجها فصلى فإن أبى نضحت في وجهه الماء». ‌‍

আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির উপর দয়া করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত পড়ল এবং স্বীয় স্ত্রীকেও জাগাল, স্ত্রী যদি উঠতে অলসতা করে তবে তার মুখে পানি ছিটা দিল। অনুরূপ আল্লাহ তা'আলা সে মহিলার উপর দয়া করুন, যে রাতে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের সালাত পড়ল এবং স্বীয় স্বামীকেও জাগাল, সে উঠতে অলসতা করলে তার মুখে পানি ছিটা দিল।[5]

পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়া ও তাঁর দ্বীনের প্রতি গুরুত্ব প্রদানের অন্তর্ভুক্ত হল: সে যেন তার আভ্যন্তরীণ পূত-পবিত্রতা পরিপূর্ণতার স্বরূপ বাহ্যিক দিকেরও গুরুত্ব বজায় রাখে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তর যেমন পবিত্র, তেমনি ভাবে তার শরীর ছিল পরিষ্কার ও সুগন্ধিময়, তিনি বেশী বেশী মিসওয়াক করতে ভালবাসতেন এবং এ কাজে তিনি উম্মতকে আদেশ দিয়ে বলেন:

«لو لا أن أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة».

আমি যদি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম তবে প্রত্যেক নামাযের আগে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।[6] হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

إذا قام من النوم يشوص فاه بالسواك.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন, তখন তিনি মিসওয়াক দ্বারা স্বীয় মুখ মেজে নিতেন।[7]

শুরাইহ বিন হানী বলেন:

قلت لعائشة رضي الله عنها: بأي شيء كان يبدأ النبي - صلى الله عليه وسلم - إذا دخل بيته؟ قالت: بالسواك.

আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম: যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীতে প্রবেশ করতেন, তখন সর্ব প্রথম কোন কাজটি করতেন? উত্তরে বলেন: মিসওয়াক করতেন।[8]

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে পরিবারের অভ্যর্থনার প্রস্তুতি কতই না সুন্দর কাজ!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে, বাড়ীর লোকদের সালাম জানিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করতেন:

بسم الله ولجنا، وبسم الله خرجنا، وعلى ربنا توكلنا.

অর্থাৎ আল্লাহর নামে প্রবেশ করলাম এবং আল্লাহর নামেই বাহির হয়েছিলাম ও আমাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করি।[9] হে মুসলিম ভাই! আপনিও পরিষ্কার হয়ে ও বাড়ীর লোকদের সালাম জানিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করুন। যারা এ সুন্দর প্রথার পরিবর্তে পরিবারের লোকদেরকে গালি-গালাজ করতে করতে বাড়ীতে প্রবেশ করে আপনি তাদের মত হবেন না!!

[1] বুখারি, হাদিস: ২৮৭৯; মুসলিম, হাদিস: ২৫৯৩

[2] মুসলিম, হাদিস: ১৪৬২

[3] সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১৩২

[4] বুখারী, হাদিস: ৯৯৭।

[5] আবুদাউদ, হাদিস: ১৩০৮ নাসায়ী, হাদিস: ১৬১০

[6] আহমাদ, হাদিস: ২৬৭৬৩

[7] মুসলিম, হাদিস: ২৫৫

[8] মুসলিম, হাদিস: ২৫৩

[9] আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৯৬