ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
উপদেশ ১১. সুন্নাত বনাম বিদ‘আত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ
সুন্নাত বনাম বিদ‘আত - ২

145. عَنْ أنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِىِّ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِىِّ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِىِّ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ. قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّى أُصَلِّى اللَّيْلَ أَبَدًا. وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ. وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا. فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّى لأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّى أَصُومُ وَأُفْطِرُ، وَأُصَلِّى وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى.

আনাস (রা.) বলেন, ‘একদিন তিনজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীগণের নিকটে এল তাঁর ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য। অতঃপর যখন রাসূলের ইবাদত সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা হ’ল। তখন তারা যেন তাকে কম মনে করল এবং বলল, নবী(সা.) থেকে আমরা কত দূরে! তাঁর আগে-পিছের সকল গুনাহ মাফ। অতঃপর তাদের একজন বলল, ‘আমি এখন থেকে সর্বদা সারা রাত ছালাতে রত থাকব’। অন্যজন বলল, ‘আমি প্রতিদিন ছিয়ামে কাটাব, কখনো ইফতার করব না’। অন্যজন বলল, ‘আমি নারীসঙ্গ থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করব না’। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.)তাদের মধ্যে ইপস্থিত হলেন এবং বললেন তোমরাই কি সেই লোকেরা, যারা এমনামন কথা বলছিলে? শুনে রাখ, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু ও সর্বাধিক পরহেযগার। কিন্তু আমি ছিয়াম রাখি আবার ছেড়েও দেই। ছালাত পড়ি, নিদ্রাও যাই। আমি বিবাহ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে ব্যক্তি আমার শরী‘আতের অমত্মর্ভুক্ত নয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, যে ব্যক্তি কাউকে সৎ পথের দিকে আহবান করে, তার জন্য সেই পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ এতে তাদের নিজস্ব ছওয়াবে কোনরূপ কমতি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কাউকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে, তার জন্যও ঠিক সেই পরিমাণ গোনাহ রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ তাদের নিজস্ব গোনাহে কোনরূপ কমতি হবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৮)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَدَأَ الإِسْلاَمُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ. وَفِيْ التِّرْمِذِىِّ (إِنَّ الدِّيْنَ بَدَأَ غَرِيْبًا فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءِ الَّذِيْنَ يُصْلِحُوْنَ مَا أَفْسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدِيْ مِنْ سُنَّتِيْ).

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)এরশাদ করেছেন যে, ইসলাম মুষ্টিমেয় লোকদের মাধ্যমে সূচনা করেছে। সত্বর তা মুষ্টিমেয় লোকদের মধ্যেই ফিরে আসবে, যেমন সূচনাতে ছিল। অতএব সুসংবাদ হল ঐ মুষ্টিমেয় লোকদের জন্য’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৯)। আর তিরমিযী গ্রন্থে রয়েছে, নিশ্চয়ই সংখ্যালঘু অবস্থায় দ্বীন ছড়িয়ে পড়েছে। আর সংখ্যালঘুরাই সফল। আর তারা ওরাই, যারা আমার পরে আমার সুন্নাতের সংশোধন করে মানুষ যেগুলির বিপর্যয় ঘটিয়েছে’ (তিরমিযী হা/২৬৩০)

عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا فَقَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ.

ইরবায বিন সারিয়াহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় ওয়ায করলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে গেল। এমন সময় একজন লোক বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছি এবং তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি সমূহ হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের ব্যাপারে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫)।

عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تُعْجِبُنَا أَفْتَرَى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ فَقَال أَمُتَهَوِّكُونَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى؟ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلاَّ إِتِّبَاعِيْ.

জাবের (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন যখন ওমর (রা.) তাঁর কাছে এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের নিকটে তাদের অনেক পুরানো ধর্মীয় কাহিনীগুলি, যা আমাদের নিকটে চমৎকার বোধ হয়, তার কিছু কিছু লিখে রাখার জন্য আপনি আমাদের অনুমতি দিবেন কি? তখন জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)বললেন, তোমরা কি দিকভ্রান্ত হয়েছ, যেমন ইহুদী-নাছারারা দিকভ্রান্ত হয়েছে? অথচ আমি তোমাদের কাছে এসেছি উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে। যদি আজকে মূসাও বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁর পক্ষেও আমার অনুসরণ ব্যতীত গত্যন্তর থাকতো না’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, মিশকাত হা/১৭৭)।

عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ مُرْسَلًا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِهِ.

ইমাম মালেক বিন আনাস (রা.) মুরসাল সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)এরশাদ করেছেন যে, আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে গেলাম। তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না, যতদিন তোমরা সে দু’টিকে কঠিনভাবে ধরে থাকবে। সে দু’টি বস্ত্ত হ’ল : আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’ (মুওয়াত্তা, মিশকাত হা/১৮৬)।

عَنْ حَسَّانَ قَالَ مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِيْ دِيْنِهِمْ إِلاَّ نَزَعَ اللهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا ثُمَّ لاَ يُعِيْدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

হাসসান বিন আত্বিয়াহ মুহারেবী (রা.) বলেন, যখনই কোন সম্প্রদায় তাদের দ্বীনের মধ্যে কোন বিদ‘আত সৃষ্টি করে, তখনই আল্লাহ তাদের মধ্য হ’তে সেই পরিমাণ সুন্নাত উঠিয়ে নেন। অতঃপর ক্বিয়ামত অবধি তা আর তাদের মধ্যে ফিরে আসে না (দারেমী, মিশকাত হা/১৮৮)।

عَنْ جَابِرٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ: فَقَالَ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسَى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِيْ لاَتَّبَعَنِيْ.

জাবের (রা.) বলেন যে, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রা.) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন নিহিত, তার কসম করে বলছি, যদি আজ মূসা তোমাদের নিকটে আবির্ভূত হতেন। আর তোমরা তার অনুসরণ করতে এবং আমাকে পরিত্যাগ করতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা সরল পথ হতে বিচ্যুত হতে। যদি মূসা বেঁচে থাকতেন ও আমার নবুঅতকাল পেতেন, তাহ’লে অবশ্যই তিনি আমার অনুসরণ করতেন’ (দারেমী, মিশকাত হা/১৯৪)।