বৃহস্পতিবার রাসূল (ছাঃ)-এর রোগযন্ত্রণা বেড়ে যায়। পরে যন্ত্রণা খুব বৃদ্ধি পেলে রাসূল (ছাঃ) বলে ওঠেন,هَلُمُّوا أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لاَ تَضِلُّوْا بَعْدَهُ ‘কাগজ-কলম নিয়ে এসো! আমি তোমাদের জন্য লিখে দিয়ে যাই। যাতে তোমরা পরে পথভ্রষ্ট না হও’। উপস্থিত লোকদের মধ্যে ওমর (রাঃ) বললেন,قَدْ غَلَبَهُ الْوَجَعُ وَعِنْدَكُمُ الْقُرْآنُ، حَسْبُنَا كِتَابُ اللهِ ‘তাঁর উপরে এখন রোগ যন্ত্রণা বেড়ে গেছে। তোমাদের নিকটে কুরআন রয়েছে। আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট’। এতে গৃহবাসীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। কেউ কাগজ-কলম আনতে চান। কেউ নিষেধ করেন। ফলে এক পর্যায়ে রাসূল (ছাঃ) বললেন,قُوْمُوْا عَنِّىْ ‘তোমরা এখান থেকে চলে যাও’।[1]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর মৃত্যুকালীন রোগশয্যায় আমাকে বললেন,ادْعِى لِى أَبَا بَكْرٍ وَأَخَاكِ حَتَّى أَكْتُبَ كِتَابًا فَإِنِّى أَخَافُ أَنْ يَتَمَنَّى مُتَمَنٍّ وَيَقُولَ قَائِلٌ أَنَا أَوْلَى. وَيَأْبَى اللهُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلاَّ أَبَا بَكْرٍ ‘তোমার পিতা আবুবকর ও তোমার ভাই (আব্দুর রহমান)-কে আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাদেরকে একটি কাগজ লিখে দেব। কেননা আমি ভয় পাচ্ছি যে, কোন উচ্চাভিলাষী (খেলাফতের) উচ্চাকাংখা পোষণ করতে পারে এবং কোন ব্যক্তি দাবী করতে পারে যে, আমিই এর অধিক হকদার(أَنَا أَوْلَى)। অথচ আল্লাহ ও মুমিনগণ আবুবকর ব্যতীত অন্য সবাইকে প্রত্যাখ্যান করে’।[2]
এতে বুঝা যায় যে, খিলাফত লিখে দিলে তিনি আবুবকর (রাঃ)-এর নামেই লিখতেন। আয়েশা (রাঃ)-এর বাধার কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি। অথচ আলী (রাঃ) প্রথম খলীফা না হওয়ার জন্য শী‘আরা অন্যায়ভাবে তাঁকেই দায়ী করে থাকে।
এ ঘটনা থেকে শী‘আরা ধারণা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) হযরত আলীর নামে ‘খিলাফত’ লিখে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওমর (রাঃ) সেটা হ’তে দেননি। অতএব আবুবকর, ওমর, ওছমান সবাই তাদের দৃষ্টিতে অন্যায়ভাবে খেলাফত ছিনতাইকারী এবং কাফের (নাঊযুবিল্লাহ)। এজন্য ইবনু আববাস (রাঃ) রাবী সুলায়মান আল-আহওয়ালের সামনে একদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, يَوْمُ الْخَمِيسِ، وَمَا يَوْمُ الْخَمِيسِ বৃহস্পতিবার, হায় বৃহস্পতিবার! এসময় তাঁর চোখের পানিতে কংকর-বালু ভিজে যায়। মদীনার শ্রেষ্ঠ সপ্ত ফক্বীহর অন্যতম ওবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উৎবাহ বিন মাসঊদ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) উক্ত ঘটনা স্মরণ করে প্রায়ই বলতেন, إِنَّ الرَّزِيَّةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ ‘হায় বিপদ চরম বিপদ, যা লোকদের শোরগোল ও রাসূল (ছাঃ)-এর অছিয়ত লিখে দেওয়ার মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল’ (বুখারী হা/৪৪৩২; মুসলিম হা/১৬৩৭; মিশকাত হা/৫৯৬৬; বঙ্গানুবাদ হা/৫৭১৪)। অথচ আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ (বুখারী হা/৫৬৬৬; মিশকাত হা/৫৯৭০) দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহর নবী (ছাঃ) যদি ‘খিলাফত’ লিখতেন, তবে সেটা আবুবকর (রাঃ)-এর নামেই লিখতেন।
[2]. মুসলিম হা/২৩৮৭; মিশকাত হা/৬০১২; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫৭৬৭ ‘আবুবকরের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; বুখারী হা/৫৬৬৬; মিশকাত হা/৫৯৭০; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫৭১৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়।