মদীনায় ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি সংকীর্ণ গিরিসংকট অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তাঁর সাথে কেবল ‘আম্মার বিন ইয়াসির ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ছিলেন। ‘আম্মার রাসূল (ছাঃ)-এর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে সামনে হাঁটছিলেন এবং হুযায়ফা পিছনে থেকে উষ্ট্রী হাঁকাচিছলেন। মুসলিম বাহিনী তখন পিছনে উপত্যকায় ছিল। ১২ জন মুনাফিক যারা এতক্ষণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, তারা মুখোশ পরে দ্রুত এগিয়ে এসে ঐ গিরিসংকটে প্রবেশ করল এবং পিছন থেকে অতর্কিতে রাসূল (ছাঃ)-কে হত্যা করতে উদ্যত হ’ল। হঠাৎ পদশব্দে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পিছন ফিরে তাকান এবং হুযায়ফাকে ওদের ঠেকানোর নির্দেশ দেন। হুযায়ফা তাঁর ঢাল দিয়ে ওদের বাহনগুলির মুখের উপরে আঘাত করতে থাকেন। এতেই আল্লাহর ইচ্ছায় তারা ভীত হয়ে পিছন ফিরে দৌড় দিয়ে দ্রুত সেনাবাহিনীর মধ্যে হারিয়ে যায়।
এভাবেই মুনাফিকরা অন্যান্য সময়ের ন্যায় এবারেও রাসূল (ছাঃ)-এর ক্ষতি সাধনে ব্যর্থ হ’ল। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,وَهَمُّوْا بِمَا لَمْ يَنَالُوْا ‘তারা চেয়েছিল সেটাই করতে, যা তারা পারেনি’ (তওবাহ ৯/৭৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের সকলের নাম ও তাদের অসদুদ্দেশ্য সম্পর্কে হুযায়ফাকে অবহিত করেন। তবে সেগুলি প্রকাশ করতে নিষেধ করেন। একারণে হুযায়ফাকেصَاحِبُ سِرِّ رَّسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর গোপন রহস্যবিদ’ বলে অভিহিত করা হয়’।[1] ঐ মুনাফিকদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ فِىْ أُمَّتِىْ اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدُوْنَ رِيْحَهَا حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِىْ سَمِّ الْخِيَاطِ ‘আমার উম্মতের মধ্যে ১২ জন মুনাফিক রয়েছে, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। তাদের জান্নাতে যাওয়া ঐরূপ অসম্ভব, যেরূপ সূঁচের ছিদ্রপথে উটের প্রবেশ অসম্ভব’।[2] ফলে মদীনায় কেউ মারা গেলে ওমর (রাঃ) তার জানাযায় যাওয়ার পূর্বে খোঁজ নিতেন হুযায়ফা যাচ্ছেন কি-না। হুযায়ফা না গেলে তিনি যেতেন না, এই কারণে যে, যদি ঐ মৃত ব্যক্তি ঐ মুনাফিকদের মধ্যকার কেউ হয়।[3]
[2]. মুসলিম হা/২৭৭৯; মিশকাত হা/৫৯১৭।
[3]. আল-বিদায়াহ ৫/১৯; আল-ইছাবাহ ক্রমিক ১৬৪৯; মির‘আত ১/১৪০ ‘হুযায়ফার জীবনী’ দ্রষ্টব্য।