(১) শুষ্ক ঝর্ণায় পানির স্রোত(جريان العين اليابس بماء منهمر) :
তাবূকের নিকটবর্তী পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إنَّكُمْ سَتَأْتُوْنَ غَدًا إنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى عَيْنَ تَبُوْكَ ‘আগামীকাল ইনশাআল্লাহ তোমরা তাবূকের ঝর্ণার নিকটে পৌঁছবে। তবে দিন গরম হওয়ার পূর্বে তোমরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। যদি তোমরা কেউ আগে পৌঁছে যাও, তবে আমি না পৌঁছা পর্যন্ত যেন কেউ ঝর্ণার পানি স্পর্শ না করে’।
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, আমরা গিয়ে দেখি আমাদের দু’জন লোক আগেই পৌঁছে গেছে এবং কিছু পানিও পান করেছে। (হয়তবা তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা জানতে পারেনি)। এ সময় খুব ধীরগতিতে পানি আসছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের কিছু ভৎর্সনা করলেন। অতঃপর ঝর্ণা থেকে অঞ্জলী ভরে একটু একটু করে পানি নিলেন ও সঞ্চয় করলেন। অতঃপর তা দিয়ে স্বীয় হাত ও মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। অতঃপর ঐ পানি পুনরায় ঝর্ণায় নিক্ষেপ করলেন। ফলে ঝর্ণায় তীব্রগতিতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি হ’ল এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পানি রাশি জমা হয়ে গেল। ছাহাবায়ে কেরাম তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলেন। এসময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আযকে লক্ষ্য করে বললেন,يُوشِكُ يَا مُعَاذُ إنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ أَنْ تُرَى مَا هَاهُنَا قَدْ مُلِئَ جِنَانًا ‘যদি আল্লাহ তোমার হায়াত দীর্ঘ করেন, তবে তুমি এই স্থানটিকে সবুজ-শ্যামল বাগিচায় পূর্ণ দেখতে পাবে’ (মুসলিম হা/৭০৬ (১০)। উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হয়েছে- আলহামদুলিল্লাহ।
তাবূক পৌঁছার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সবাইকে বললেন, আজ রাতে তোমাদের উপর প্রবল বালুঝড়(رِيْحٌ شَدِيْدَةٌ) বয়ে যেতে পারে। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন দাঁড়ায় না। যাদের উট আছে, তারা যেন উটকে শক্তভাবে বেঁধে রাখে’। দেখা গেল যে, প্রবল বেগে ঝড় এলো। তখন (সম্ভবতঃ কৌতূহল বশে) একজন উঠে দাঁড়ালো। ফলে ঝড় তাকে উড়িয়ে নিয়ে ‘ত্বাঈ’ পাহাড়ের(فِي جَبَلِ طَيْءٍ) মাঝখানে নিক্ষেপ করল’।[1]
(২) দুর্বল উট সবল হ’ল(البعير الضعيف صار قويا) :
ফাযালাহ বিন উবায়েদ আনছারী (মৃ. ৫৩ হি.) বলেন, তাবূক থেকে ফেরার পথে আমাদের উটগুলি কষ্টে হাসফাস করতে থাকে। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বিষয়টি পেশ করা হ’লে তিনি দো‘আ করে বলেন,اللَّهُمَّ احْمِلْ عَلَيْهَا فِى سَبِيلِكَ إِنَّكَ تَحْمِلُ عَلَى الْقَوِىِّ وَالضَّعِيفِ وَعَلَى الرَّطْبِ وَالْيَابِسِ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ‘হে আল্লাহ! তোমার রাস্তায় এগুলির উপরে আরোহণ করাও। নিশ্চয় তুমি আরোহণ করিয়ে থাক শক্তিশালী ও দুর্বলের উপরে। নরম ও শুষ্ক যমীনের উপরে এবং স্থলভাগ ও সমুদ্রের উপরে’। অতঃপর মদীনায় আসা পর্যন্ত তারা আর দুর্বল হয়নি’। রাবী বলেন, এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আর বরকত। তাঁর এই দো‘আ শক্তিশালী ও দুর্বলের উপরে আমরা ফলতে দেখেছি। অতঃপর সমুদ্রের উপরে ফলতে দেখলাম তখনই, যখন আমরা ২৭ হিজরীতে ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর নেতৃত্বে রোমকদের বিরুদ্ধে নৌযুদ্ধে গমন করলাম’ (আহমাদ হা/২৪০০১, হাদীছ ছহীহ)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মু‘জেযা (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫৩৫)।