ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুতার যুদ্ধ (سرية مؤتة) ৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা (আগষ্ট অথবা সেপ্টেম্বর ৬২৯ খৃ.)

ওমরাতুল ক্বাযা থেকে ফিরে এসে যিলহাজ্জ মাসের শেষ দিনগুলিসহ পরবর্তী চার মাস রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় অবস্থান করেন। অতঃপর মদীনার নিরাপত্তা বিধান ও শাম অঞ্চলে মুসলমানদের উপর খ্রিষ্টান শাসকদের অব্যাহত অত্যাচার দমনের উদ্দেশ্যে জুমাদাল ঊলা মাসে এই অভিযান প্রেরণ করেন। এটিই ছিল খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম যুদ্ধাভিযান (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৭০)। এ যুদ্ধের কারণ হিসাবে ওয়াক্বেদী যা বর্ণনা করেছেন,[1] তা বিদ্বানগণের নিকট গ্রহণযোগ্য না হ’লেও এটা নিশ্চিত যে, إن الله إذا أراد شيئا هيأ له الأسباب ‘আল্লাহ যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্য কারণসমূহ সৃষ্টি করে দেন’। অতএব বাহ্যিক ও প্রত্যক্ষ কারণ নিশ্চয়ই কিছু ছিল। যার জন্য যুদ্ধ যাত্রা অপরিহার্য হয়েছিল। তবে এটা নিশ্চিত ধারণা করা যায় যে, মদীনাকে ইহূদীমুক্ত করার পর এবং হোদায়বিয়াতে প্রধান প্রতিপক্ষ কুরায়েশদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি হওয়ার পর তৃতীয় প্রতিপক্ষ খ্রিষ্টান রোমক শক্তিকে পদানত করা ও ইসলামী বিজয়ের পথ সুগম করা মুতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হ’তে পারে। এর মাধ্যমে আল্লাহ চেয়েছিলেন শাম ও পারস্যে রাজত্বকারী রোমক ও পারসিক দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয়াভিযান শুরু করতে। যা ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে সুসম্পন্ন হয়।

যায়েদ বিন হারেছাহর নেতৃত্বে ৩০০০ সৈন্যের অত্র বাহিনী প্রেরিত হয়। পক্ষান্তরে বিরোধী বুছরার রোমক গবর্ণর শুরাহবীল বিন ‘আমর আল-গাসসানীর ছিল প্রায় ২ লাখ খ্রিষ্টান সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী (ইবনু হিশাম ২/৩৭৫)। বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নিকটবর্তী মু’তা (مُؤْتَة) নামক স্থানে সংঘটিত এই যুদ্ধে সেনাপতি যায়েদ বিন হারেছাহ, অতঃপর জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব, অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা পরপর তিনজন সেনাপতি শহীদ হ’লে সকলের পরামর্শে খালেদ বিন অলীদ সেনাপতি হন। অতঃপর তাঁর হাতে বিজয় অর্জিত হয়। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।-

এই বাহিনীর সেনাপতি হিসাবে যায়েদ বিন হারেছাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসময় রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি যায়েদ নিহত হয়, তবে তার স্থলে জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব সেনাপতি হবে। যদি সে নিহত হয়, তাহ’লে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি হবে (বুখারী হা/৪২৬১)। বস্ত্ততঃ এই ধরনের সাবধানতা ছিল এটাই প্রথম (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৭)।

মুসলিম বাহিনী শামের মা‘আন (مَعَانُ) অঞ্চলে অবতরণ করে। অতঃপর তারা হঠাৎ জানতে পারেন যে, রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস এসময় এক লাখ সৈন্য নিয়ে শামের বালক্বা অঞ্চলের মাআবে (مَآبُ) অবস্থান করছেন। সেখানে তার সাথে যোগ হয়েছে লাখাম, জুযাম, ক্বাইন (الْقَيْنُ), বাহরা ও বালী প্রভৃতি আরব-খ্রিষ্টান গোত্র সমূহের আরো এক লাখ যোদ্ধা।

অভাবিতভাবে বিরোধী পক্ষের বিশাল সৈন্য সমাবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। অতঃপর পরামর্শ সভায় বসেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের মত। যেখানে পূর্ব থেকে কেউ জানতেন না যে, তারা এত বড় একটি সিদ্ধান্তকারী যুদ্ধের সম্মুখীন হবেন। সভায় কেউ মত প্রকাশ করেন যে, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে শত্রু সংখ্যার খবর দিয়ে পত্র লিখি। অতঃপর তিনি আমাদের জন্য সাহায্যকারী বাহিনী পাঠাবেন অথবা আমাদেরকে যা নির্দেশ দিবেন, তাই করব। তখন আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ওজস্বিনী ভাষায় সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,

يَا قَوْمِ، وَاللهِ إنَّ الَّتِي تَكْرَهُونَ لَلَّتِي خَرَجْتُمْ تَطْلُبُونَ، الشَّهَادَةُ- وَمَا نُقَاتِلُ النَّاسَ بِعَدَدِ وَلاَ قُوَّةٍ وَلاَ كَثْرَةٍ، مَا نُقَاتِلُهُمْ إلاَّ بِهَذَا الدِّينِ الَّذِي أَكْرَمَنَا اللهُ بِهِ، فَانْطَلِقُوا فَإِنَّمَا هِيَ إحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ إمَّا ظُهُورٌ وَإِمَّا شَهَادَةٌ. قَالَ: فَقَالَ النَّاسُ: قَدْ وَاللهِ صَدَقَ ابْنُ رَوَاحَةَ-

‘হে আমার কওম! আল্লাহর কসম! তোমরা যেটাকে অপছন্দ কর, নিশ্চয় তোমরা সেটা অন্বেষণের জন্যই বের হয়েছ। আর তা হ’ল ‘শাহাদাত’। আমরা মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করিনা সংখ্যা দ্বারা, শক্তি দ্বারা বা আধিক্য দ্বারা। আর আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করিনা কেবলমাত্র এই দ্বীনের স্বার্থ ব্যতীত। যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। অতএব সামনে বাড়ুন। নিশ্চয় এর মধ্যে কেবলমাত্র দু’টি কল্যাণের একটি রয়েছে। হয় বিজয় নয় শাহাদাত। অতঃপর সকলে বললেন,قَدْ وَاللهِ صَدَقَ ابْنُ رَوَاحَةَ অবশ্যই, আল্লাহর কসম! ইবনু রাওয়াহা সত্য বলেছেন’। এরপর তিনি সকলের উদ্দেশ্যে ৮ লাইনের একটি স্বতঃস্ফূর্ত কবিতা পাঠ করেন’।[2]

অতঃপর সকলে নতুন উদ্দীপনায় স্রেফ আল্লাহর উপর ভরসা করে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি শুরু করেন এবং দু’দিন পর যুদ্ধে রওয়ানা হন ও মুতা (مُؤْتَةُ) নামক স্থানে খ্রিষ্টান বাহিনীর মুখোমুখি হন। অতঃপর তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে সেনাপতি যায়েদ বিন হারেছাহ বর্শার আঘাতে শহীদ হন। অতঃপর জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব যুদ্ধের ঝান্ডা তুলে নেন। এসময় তাঁর ঘোড়া শাক্বরা (شَقْرَاءُ) নিহত হয়। অতঃপর মাটিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাবস্থায় তাঁর ডান হাত কর্তিত হয়। তখন তিনি বাম হাতে ঝান্ডা আঁকড়ে ধরেন। এরপর বাম হাত কর্তিত হয়। তখন বগলে ঝান্ডা চেপে ধরেন। অতঃপর তিনি শহীদ হন। তাঁর পরে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা পতাকা তুলে ধরেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনিও শহীদ হয়ে যান।[3] তখন সকলের পরামর্শক্রমে খালেদ বিন অলীদ সেনাপতি হন।[4] অতঃপর তাঁর হাতেই বিজয় অর্জিত হয়। মুসলিম বাহিনীর সীসাঢালা ঐক্য, অপূর্ব বীরত্ব, অভূতপূর্ব শৌর্য-বীর্য, নিখাদ শাহাদাতপ্রিয়তা, খালেদের অতুলনীয় যুদ্ধ নৈপুণ্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অত্যন্ত অল্প ক্ষতির বিনিময়ে বিশাল বিজয় সাধিত হয়। ফালিল্লাহিল হাম্দ।[5]

এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মাত্র ১২ জন শহীদ হন’ (ইবনু হিশাম ২/৩৮৮-৮৯)। রোমক বাহিনীর হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও একা খালেদ বিন অলীদের যেখানে নয় খানা তরবারি ভেঙ্গেছিল’ (বুখারী হা/৪২৬৫), তাতে অনুমান করা চলে কত সৈন্য তাদের ক্ষয় হয়েছিল। বলা বাহুল্য, এটাই ছিল ‘খন্দক’ যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।


[1]. ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৭৫৫; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৩৬-৩৭; আর-রাহীক্ব ৩৮৭ পৃঃ।

(১) ওয়াক্বেদী বর্ণনা করেন যে, রোম সম্রাট ক্বায়ছারের পক্ষ হ’তে সিরিয়ার বালক্বায় (الْبَلْقَاءُ) নিযুক্ত গবর্ণর শুরাহবীল বিন ‘আমর আল-গাসসানীর নিকটে পত্র সহ প্রেরিত রাসূল (ছাঃ)-এর দূত হারেছ বিন উমায়ের আযদীকে হত্যা করা হয়। যা ছিল তৎকালীন সময়ের রীতি-নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। ফলে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান প্রেরিত হয় (ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৭৫৫)। এটি ওয়াক্বেদী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আর ওয়াক্বেদীর একক বর্ণিত কোন খবর বিদ্বানগণের নিকট مَتْرُوكٌ বা পরিত্যক্ত’ (মা শা-‘আ ১৮৩ পৃঃ; আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৬৮ পৃঃ)।   

(২) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, যোহরের ছালাতের পর রাসূল (ছাঃ) তাঁর সাথীদের নিয়ে মসজিদে বসেন এবং যায়েদ বিন হারেছাহকে মুতার যুদ্ধের সেনাপতি হিসাবে ঘোষণা দেন। অতঃপর তিনি শহীদ হ’লে জা‘ফর বিন আবু ত্বালেব এবং তিনি শহীদ হ’লে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি হবেন বলে নির্দেশনা প্রদান করেন। ঐ সময় নু‘মান বিন ফুনহুছ (نُعْمَانُ بْنُ فُنْحُصٍ) নামক জনৈক ইহূদী এসে লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর সে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-কে বলে, আপনি যাদের নাম বললেন, তারা অবশ্যই নিহত হবে। যেমন আমাদের বনু ইস্রাঈলের কোন নবী এভাবে যদি ১০০ ব্যক্তিরও নাম বলতেন, তাহ’লে তারা নিহত হ’ত। অতঃপর সে যায়েদ বিন হারেছাহকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ তুমি কখনই মুহাম্মাদের কাছে ফিরে আসতে পারবেনা, যদি তিনি নবী হন। উত্তরে যায়েদ বললেন, أَشْهَدُ أَنَّهُ نَبِيٌّ صَادِقٌ بَارٌّ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি অবশ্যই সত্যবাদী নবী ও পূত-চরিত্র’ (ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৭৫৬; রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২২৯)। বর্ণনাটি ‘মাতরূক’ ও অবাস্তব। কেননা ৫ম হিজরীর যিলহজ্জ মাসেই সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যার বিতাড়নের পর মদীনা ইহূদীশূন্য হয়। ফলে ৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে মুতার যুদ্ধের সময় মদীনায় কোন ইহূদীর অবস্থান এবং রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের পরে এসে এরূপ দুঃসাহস প্রদর্শন আদৌ সম্ভব নয়।

(৩) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, মদীনা থেকে রওয়ানার সময় লোকেরা তাদেরকে বিদায় জানাতে আসে। তখন আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা কাঁদতে থাকেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! দুনিয়ার মহববত বা তোমাদের প্রতি ভালবাসা নয়, বরং আমি রাসূল (ছাঃ)-কে একটি আয়াত পড়তে শুনেছি। যেখানে জাহান্নাম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,وَإِنْ مِنْكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا- ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে সেখানে পৌঁছবে না। এটা তোমার পালনকর্তার অমোঘ সিদ্ধান্ত’ (মারিয়াম ১৯/৭১)। আমি জানিনা সেখানে (পুলছিরাতে) পৌঁছার পর আমার অবস্থা কি হবে? অতঃপর লোকেরা তাকে বিদায় দেওয়ার সময় তিনি তিন লাইন কবিতা পাঠ করেন। যার শুরুতে তিনি বলেন,

لَكِنَّنِي أَسْأَلُ الرَّحْمَنَ مَغْفِرَةً + وضربة ذَات فرغ تَقْذِفُ الزَّبَدا

أَوْ طَعْنَةً بِيَدَيْ حَرَّانَ مُجْهِزَةً + بِحَرْبَةٍ تُنْفِذُ الْأَحْشَاءَ وَالْكَبِدَا

‘বরং আমি দয়াময়ের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তরবারির একটি বড় আঘাত কামনা করছি, যা ফিনকি দিয়ে রক্ত বের করে দিবে’। ‘অথবা রক্তপিপাসু সুসজ্জিত ব্যক্তির দু’হাতে ধরা একটি বর্শার আঘাত, যা আমার নাড়ী-ভুঁড়ি ও কলিজা ভেদ করে যাবে’... (আর-রাহীক্ব ৩৮৮ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/৩৭৩-৭৪)। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬২৩)।

[2]. ইবনু হিশাম ২/৩৭৫; আর-রাহীক্ব ৩৮৯ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৮। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’। তবে উরওয়া বিন যুবায়ের (রাঃ) পর্যন্ত বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬২৬)।

[3]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ) যখন মুতা যুদ্ধের সেনাপতিদের শাহাদতের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা সম্পর্কে বলতে গিয়ে চুপ হয়ে যান। এতে আনছারদের চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তারা আব্দুল্লাহ সম্পর্কে মন্দ কিছু ধারণা করতে থাকেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাদের সবাইকে আমার নিকটে স্বর্ণের খাটের উপর উঁচু করে জান্নাতে দেখানো হয়েছে। যেভাবে স্বপ্নযোগে মানুষ দেখে থাকে। আমি দেখলাম যে, সাথী দু’জনের খাটের চাইতে আব্দুল্লাহর খাটটি একটু বাঁকাচোরা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিজন্য? তখন বলা হ’ল যে, ঐ দু’জন জিহাদে চলে গেল, কিন্তু আব্দুল্লাহ কিছুটা ইতস্ততঃ করেছিল। অতঃপর গিয়েছিল’ (ইবনু হিশাম ২/৩৮০; আর-রাউযুল উনুফ ৪/১২৬; আল-বিদায়াহ ৪/২৪৫)। বর্ণনাটির সনদ মুনক্বাতি‘ বা ছিন্নসূত্র (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬৩৩; মা শা-‘আ ১৮৪-৮৫ পৃঃ)।

[4]. প্রসিদ্ধ আছে যে, পরপর তিন জন সেনাপতি শহীদ হওয়ার পর বনু ‘আজলানের ছাবেত বিন আরক্বাম এগিয়ে এসে ঝান্ডা উত্তোলন করেন এবং সবাইকে ডেকে বলেন, হে মুসলমানেরা! তোমরা একজন ব্যক্তির উপরে ঐক্যবদ্ধ হও। লোকেরা বলল, তুমি হও। তিনি বললেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই। তখন সকলে খালেদ বিন অলীদের ব্যাপারে একমত হ’ল। অতঃপর তিনি ঝান্ডা হাতে নিলেন এবং তীব্র বেগে যুদ্ধ শুরু করলেন’ (আর-রাহীক্ব ৩৯০-৯১ পৃঃ)। ঘটনাটি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। বরং যঈফ (আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৬৮ পৃঃ)।

[5]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, এদিন সেনাপতি খালেদ বিন অলীদ সম্মুখের দলকে পিছনে ও পিছনের দলকে সম্মুখে এবং ডাইনের দলকে বামে ও বামের দলকে ডাইনে নিয়ে এক অপূর্ব রণকৌশলের মাধ্যমে মুসলিম বাহিনীকে সসম্মানে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনেন। নতুন সেনাদল যুক্ত হয়েছে ভেবে এবং মুসলমানেরা তাদেরকে মরু প্রান্তরে নিক্ষেপ করবে সেই ভয়ে রোমকরা পিছু হটে যায় (আর-রাহীক্ব ৩৯১ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৮)। ঘটনাটি ওয়াক্বেদী কর্তৃক এককভাবে বর্ণিত। যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ওয়াক্বেদীর একক বর্ণনা বিদ্বানদের নিকট مَتْرُوكٌ বা পরিত্যক্ত’ (মা শা-‘আ ১৮৬ পৃঃ)। বরং স্থানীয় খ্রিষ্টান অধিবাসী ও নওমুসলিমদের প্রতি রোমকদের অব্যাহত অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ, খালেদের অভূতপূর্ব রণকৌশল, তাঁর নিজস্ব শক্তিমত্তা, মুসলিম বাহিনীর সুদৃঢ় ঐক্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছিল এ যুদ্ধ জয়ের মূল উৎস। যেমন বদরের যুদ্ধে বিজয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই (বদরের যুদ্ধে) দু’টি দলের মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছিল এবং অপরটি ছিল অবিশ্বাসী। যারা স্বচক্ষে মুসলমানদেরকে তাদের দ্বিগুণ দেখছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দানে শক্তিশালী করেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে চক্ষুষ্মানদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৩)।