ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
খায়বর যুদ্ধ (غزوة خيبر) (৭ম হিজরীর মুহাররম মাস)

কুরায়েশদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তির পর সকল ষড়যন্ত্রের মূল ঘাঁটি খায়বরের ইহূদীদের প্রতি এই অভিযান পরিচালিত হয়। হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বায়‘আতে রিযওয়ানে উপস্থিত ১৪০০ ছাহাবীকে নিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং এই অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি কোন মুনাফিককে এ যুদ্ধে নেননি।[1] এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ১৬ জন শহীদ এবং ইহূদী পক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়। ইহূদীদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে তাদের আবেদন মতে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক ভাগ দেবার শর্তে তাদেরকে সেখানে বসবাস করার সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয় (বুখারী হা/৪২৩৫)

যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গণীমত হস্তগত হয়। যাতে মুসলমানদের অভাব দূর হয়ে যায়। এই সময়ে ফাদাকের ইহূদীদের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুহাইয়েছাহ বিন মাসঊদকে(مُحَيِّصَةُ بنُ مسعودٍ) প্রেরণ করেন। খায়বর বিজয়ের পর তারা নিজেরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে দূত পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ করে এবং খায়বরবাসীদের ন্যায় অর্ধেক ফসলে সন্ধিচুক্তি করে। বিনাযুদ্ধে ও স্রেফ রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াতে বিজিত হওয়ায় ফাদাক ভূমি কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।-

যিলহাজ্জের মাঝামাঝিতে হোদায়বিয়া থেকে ফিরে মুহাররম মাসের শেষভাগে কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বর অভিমুখে যাত্রা করেন। এ সময় তিনি সেবা‘ বিন উরফুত্বাহ গেফারীকে মদীনার প্রশাসক নিয়োগ করে যান।[2]

মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তিনটি শক্তি- কুরায়েশ, বনু গাত্বফান ও ইহূদী- এগুলির মধ্যে প্রধান শক্তি কুরায়েশদের সাথে হোদায়বিয়ার সন্ধির ফলে বনু গাত্বফান ও বেদুঈন গোত্রগুলি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। বাকী রইল ইহূদীরা। যারা মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে খায়বরে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং সেখান থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল প্রকারের ষড়যন্ত্র করে। বরং বলা চলে যে, খায়বর ছিল তখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। তাই এদেরকে দমন করার জন্য এই অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানে যাতে কোন মুনাফিক যেতে না পারে, সেজন্য আল্লাহ পূর্বেই আয়াত নাযিল করেন (ফাৎহ ৪৮/১৫)। তাছাড়া এ যুদ্ধে যে মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হবে এবং প্রচুর গণীমত লাভ করবে, সে বিষয়ে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী নাযিল হয়েছিল (ফাৎহ ৪৮/২০)। ফলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কেবলমাত্র ঐ সকল সাথীকে সঙ্গে নিলেন, যারা হোদায়বিয়ার সফরে ‘বায়‘আতুর রিযওয়ানে’ শরীক ছিলেন। যাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪০০। এঁদের সাথে কিছু সংখ্যক মহিলা ছাহাবী ছিলেন।[3] যারা আহতদের সেবা-যত্নে নিযুক্ত হন। আল্লাহপাকের এই আগাম হুঁশিয়ারীর কারণ ছিল এই যে, মুনাফিকদের সঙ্গে ইহূদীদের সখ্যতা ছিল বহু পুরাতন। তাই তারা যুদ্ধে গেলে তারা বরং ইহূদীদের স্বার্থেই কাজ করবে, যা মুসলিম বাহিনীর চরম ক্ষতির কারণ হবে।

[1]. আর-রাহীক্ব ৩৬৫ পৃঃ।

ওয়াক্বেদী এখানে সনদ বিহীনভাবে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যা নিম্নরূপ :

রাসূল (ছাঃ) যখন সবাইকে খায়বর গমনের জন্য প্রস্ত্ততি নিতে বললেন, তখন হোদায়বিয়া থেকে বিভিন্ন অজুহাতে পিছিয়ে পড়া লোকেরা এসে বলল, আমরা আপনার সাথে যুদ্ধে যাব। তখন রাসূল (ছাঃ) একজন ঘোষককে দিয়ে ঘোষণা প্রদান করলেন যে,لاَ يَخْرُجَنَّ مَعَنَا إلاَّ رَاغِبٌ فِي الْجِهَادِ، فَأَمَّا الْغَنِيمَةُ فَلاَ- ‘আমাদের সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণে আগ্রহীগণই কেবল বের হবে। অতঃপর তারা গণীমত পাবে না’। এই ঘোষণা শোনার পর তারা আর বের হয়নি (ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৬৩৪; সীরাহ হালাবিইয়াহ ৩/৪৫)।

[2]. হাকেম হা/৪৩৩৭; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৫১; আর-রাহীক্ব ৩৬৫ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/২৮১।

ইবনু ইসহাক নুমায়লাহ বিন আব্দুল্লাহ লায়ছীর কথা বলেছেন (ইবনু হিশাম ২/৩২৮)। কিন্তু উরফুত্বাই অধিক সঠিক (ফাৎহুল বারী ‘খায়বর যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ; আর-রাহীক্ব ৩৬৫ পৃঃ)।

[3]. ইবনু হিশাম ও ত্বাবারী সংখ্যা নির্ধারণ করেননি (ইবনু হিশাম ২/৩৪২; তারীখ ত্বাবারী ৩/১৭)। মানছূরপুরী সূত্রহীনভাবে ২০ জন মহিলা ছাহাবী লিখেছেন, যারা সেবা করার জন্য এসেছিলেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/২১৯)।