বনু নাযীরকে রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে উসকে দেবার কাজে মুনাফিকদের প্ররোচনা দান, অতঃপর পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে আল্লাহ পাক সরাসরি শয়তানের কাজের সঙ্গে তুলনা করে বলেন,
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّيْ بَرِيْءٌ مِّنْكَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ- فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيْهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِيْنَ-
‘তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হ’তে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালক আল্লাহকে ভয় করি’। ‘অতঃপর তাদের পরিণতি হবে এই যে, তারা উভয়ে জাহান্নামে যাবে এবং সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। এটাই হ’ল যালেমদের যথাযোগ্য প্রতিফল’ (হাশর ৫৯/১৬-১৭)।
এ বিষয়ে সূরা হাশর ৬-৭ আয়াতদ্বয় নাযিল হয়। তাদের এই নির্বাসনকে কুরআনেأَوَّلُ الْحَشْرِ বা ‘প্রথম একত্রিত বহিষ্কার’ (হাশর ৫৯/২) বলে অভিহিত করা হয়।
মূলতঃ এর দ্বারা আল্লাহ পাক আরব উপদ্বীপকে কাফেরমুক্ত করতে চেয়েছেন এবং সেটাই পরের বছর বাস্তবায়িত হয় সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যার বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত শাস্তি ও সার্বিক বিতাড়নের মাধ্যমে। অতঃপর ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (১৩-২৩ হি.) এদের অবাধ্যতা ও চুক্তি ভঙ্গের কারণে তিনি খায়বর থেকে এদেরকে নাজদ ও আযরূ‘আতে, মতান্তরে তায়মা ও আরীহা-তে নির্বাসিত করেন। ইতিহাসে যাকে ‘২য় হাশর’ বলা হয়ে থাকে’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা হাশর ২ আয়াত)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,
لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنُ بِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انْفِصَامَ لَهَا وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ- (البقرة 256)
‘দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ যবরদস্তি নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি ত্বাগূতকে প্রত্যাখ্যান করবে ও আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে দৃঢ়মুষ্ঠিতে ধারণ করবে এমন এক সুদৃঢ় হাতল, যা ভাঙ্গবার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৫৬) আয়াতটি মদীনার আনছারদের কারণে নাযিল হয়। যদিও এর হুকুম সর্বযুগে সকলের জন্য প্রযোজ্য। জনৈকা আনছার মহিলা যার কোন সন্তান বাঁচতো না, তিনি মানত করেন যে, যদি এবার তার কোন পুত্র সন্তান হয় ও বেঁচে থাকে, তাহ’লে তিনি তাকে ইহূদী বানাবেন। কিন্তু (৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে) যখন মদীনা থেকে বনু নাযীর ইহূদী গোত্রের উচ্ছেদের হুকুম হ’ল, তখন আনছারগণ বলে উঠলেন যে, আমরা আমাদের সন্তানদের ছাড়তে পারি না, যারা দুগ্ধপানের জন্য ইহূদী দুধমাতাদের কাছে রয়েছে। তখন অত্র আয়াত নাযিল হয়।[1] যাতে বলা হয় যে, ধর্মের ব্যাপারে কোন যবরদস্তি নেই। হক ও বাতিল স্পষ্ট হয়ে গেছে। অতএব আনছার সন্তানরা দুগ্ধপানের কারণে ইহূদী দুধমাতাদের কাছে থাকলেও তারা ‘হক’ বুঝে সময়মত ইসলামে ফিরে আসবে’।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, বনু নাযীরকে মদীনা থেকে বিতাড়নকালে আনছাররা যখন তাদের সন্তানদের ইহূদী দুধমাতাদের নিকট থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করল, তখন রাসূল (ছাঃ) চুপ থাকলেন। অতঃপর উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। অতঃপর তিনি বললেন,قَدْ خُيِّرَ أَصْحَابُكُمْ فَإِنِ اخْتَارُوكُمْ فَهُمْ مِنْكُمْ وَإِنِ اخْتَارُوهُمْ فَأَجْلُوهُمْ مَعَهُمْ ‘সন্তানের অভিভাবকদের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এক্ষণে যদি সন্তানেরা তোমাদের পসন্দ করে, তাহ’লে তারা তোমাদের মধ্যকার বলে গণ্য হবে। আর যদি তারা তাদেরকে (ইহূদীদেরকে) পসন্দ করে, তাহ’লে তাদের সাথে এদেরকেও বহিষ্কার কর’।[2]
ইমাম খাত্ত্বাবী (৩১৯-৩৮৮ হি.) বলেন, উক্ত হাদীছে দলীল রয়েছে যে, ইসলাম আসার পূর্বে শিরক ও কুফরী থেকে ইহূদী বা নাছারা ধর্মে গমন করা জায়েয ছিল। অতঃপর ইসলাম আসার পরে সেটি নিষিদ্ধ হয়’ (‘আওনুল মা‘বূদ শরহ আবুদাঊদ হা/২৬৮২)।
[2]. ইবনু জারীর হা/৫৮১৮; বাগাভী, মা‘আলিমুত তানযীল, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ২৫৬ আয়াত; বায়হাক্বী হা/১৮৪২০ ৯/১৮৬ পৃঃ।