(ক) যুদ্ধ শেষে কিছু মুসলিম মহিলা ময়দানে আগমন করেন। তাঁদের মধ্যে হযরত আয়েশা বিনতে আবুবকর (রাঃ), আনাস (রাঃ)-এর মা উম্মে সুলায়েম(أم سُلَيم) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর মা উম্মে সুলাইত্ব(أم سُلَيط) মুছ‘আব বিন উমায়ের (রাঃ)-এর স্ত্রী হামনাহ বিনতে জাহশ আল-আসাদিইয়াহ প্রমুখ ছিলেন। যারা পিঠে পানির মশক বহন করে এনে আহত সৈনিকদের পানি পান করান ও চিকিৎসা সেবা দান করেন।[1]
(খ) যুদ্ধ শেষে ঘাঁটিতে স্থিতিশীল হওয়ার পর কন্যা ফাতেমা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যখম ধুয়ে ছাফ করেন এবং জামাতা আলী তার ঢালে করে পানি এনে তাতে ঢেলে দেন। কিন্তু যখন দেখা গেল যে, তাতে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। তখন ফাতেমা (রাঃ) চাটাইয়ের একটা অংশ জ্বালিয়ে তার ভস্ম ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন। তাতে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়।[2] এতে প্রমাণিত হয় যে, চিকিৎসা গ্রহণ করা নবীগণের মর্যাদার বিরোধী নয় এবং এটি আল্লাহর উপরে ভরসা করারও বিরোধী নয়। তাছাড়া এটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মানুষ নবী ছিলেন, নূরের নবী নন। এটাও প্রমাণিত হয় যে, মেয়েরা চিকিৎসক হ’তে পারে। যদি তা তাদের পর্দা ও মর্যাদার খেলাফ না হয়।
প্রসিদ্ধ আছে যে, উম্মে আয়মন এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যখন তিনি দেখলেন যে, কুরায়েশ বাহিনীর শেষোক্ত হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে মুসলিম বাহিনীর কেউ কেউ মদীনায় ঢুকে পড়ছে, তখন তিনি তাদের চেহারায় মাটি নিক্ষেপ করতে লাগলেন ও বলতে লাগলেন هَاكَ الْمِغْزَلُ فَاغْزِلْ بِهِ وَهَلُمَّ سَيْفَكَ ‘তোমরা এই সূতা কাটার চরকা নাও এবং আমাদেরকে তরবারি দাও’। এই বলে তিনি দ্রুতগতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছেন এবং আহতদের পানি পান করাতে শুরু করেন। তার উপরে জনৈক শত্রুসৈন্য তীর চালিয়ে দিলে তিনি পড়ে যান ও বিবস্ত্র হয়ে যান’। এ দেখে আল্লাহর শত্রু হো হো করে হেসে ওঠে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছকে একটি পালকবিহীন তীর দিয়ে বলেন, এটা ওর উপরে চালাও’। সা‘দ ওটা চালিয়ে দিলে ঐ শত্রুটির গলায় বিদ্ধ হয় ও চিৎ হয়ে পড়ে বিবস্ত্র হয়ে যায়। তাতে রাসূল (ছাঃ) হেসে ওঠেন’ (আর-রাহীক্ব ২৭৭ পৃঃ; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ১/২৭৮; বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ৩/৩১১)।
ঘটনাটি ওয়াক্বেদী বিনা সনদে বর্ণনা করেছেন। বিদ্বানগণের নিকটে ওয়াক্বেদী পরিত্যক্ত (مَتْرُوك)। বায়হাক্বীও তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হাজার উম্মে আয়মানের জীবনীতে এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। তিনি ওয়াক্বেদীর বরাতে কেবল এতটুকু বলেছেন যে, حَضَرَتْ أُمُّ أَيْمَنَ أُحُدًا وَكَانَتْ تَسْقِي الْمَاءَ وَتُدَاوِي الْجَرْحَى- ‘উম্মে আয়মান ওহোদ যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সৈন্যদের পানি পান করাতেন ও আহতদের সেবা দিতেন’ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক সংখ্যা ১১৮৯৮)। অতএব বিষয়টি আদৌ প্রমাণিত নয় এবং এটি তাঁর মর্যাদার উপযোগীও নয়। ছহীহ হাদীছে যুদ্ধের ময়দানে সেবা দানে যেসব মহিলার নাম পাওয়া যায়, সেখানে উম্মে আয়মানের উল্লেখ নেই।
[2]. বুখারী হা/৪০৭৫।
প্রসিদ্ধ আছে যে, উম্মে ‘উমারাহ নুসাইবাহ বিনতে কা‘ব, যিনি ১৩ নববী বর্ষে মক্কায় অনুষ্ঠিত আক্বাবায়ে কুবরায় শরীক ছিলেন, তিনি অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে আহতদের সেবা-শুশ্রূষায় রত ছিলেন। যখন শুনলেন যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কাফেরদের মধ্যে ঘেরাও হয়েছেন তখন ছুটে এসে বীর বিক্রমে কাফেরদের প্রতি তীর বর্ষণ শুরু করেন। ইবনু সা‘দ ওয়াক্বেদী সূত্রে বলেন, এই সময় রাসূল (ছাঃ) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি যা পারছ তা কে পারবে হে উম্মে ‘উমারাহ! তিনি আরও বলেন, ‘আমি ডাইনে-বামে যেদিকে তাকাই, সেদিকেই কেবল উম্মে ‘উমারাহকে দেখি, সে আমার জন্য লড়াই করছে’ (তাবাক্বাত ইবনু সা‘দ ৮/৪১৪-১৫)। রাসূল (ছাঃ)-কে আঘাতকারী ইবনু ক্বামিআহকে তিনি তরবারি দ্বারা কয়েকবার আঘাত করেন। কিন্তু লৌহ বর্মধারী হওয়ায় সে বেঁচে যায়। পাল্টা তার আঘাতে উম্মে ‘উমারাহর স্কন্ধে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়’ (ইবনু হিশাম ২/৮১-৮২; আর-রাহীক্ব ২৭২ পৃঃ; সনদ মুনক্বাতি‘ (মা শা-‘আ ১৬০; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৯০)।
মুবারকপুরী উক্ত ১২টি যখম ওহোদের যুদ্ধে লেগেছিল বলেছেন (আর-রাহীক্ব ২৭২ পৃঃ), যা ঠিক নয়। বরং এটি ছিল আবুবকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ১১-১২ হিজরীতে সংঘটিত ভন্ডনবীদের বিরুদ্ধে ইয়ামামাহর যুদ্ধের ঘটনা, যেখানে উম্মে ‘উমারাহ সশরীরে যোগদান করেছিলেন ও ১২টি যখম দ্বারা গুরুতর আহত হয়েছিলেন’ (ইবনু হিশাম ১/৪৬৭)।