কাফিরদের পলায়ন ও মুসলিম বাহিনীর গণীমত জমা করার হিড়িক দেখে গিরিপথ রক্ষী তীরন্দায দল ভাবল যে, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। অতএব আর এখানে থাকার কি প্রয়োজন? গণীমতের মাল ও দুনিয়ার লোভরূপী শয়তান সাময়িকভাবে তাদের মাথায় চেপে বসল। ‘গণীমত’ ‘গণীমত’(الْغَنِيمَةَ الْغَنِيمَةَ) বলতে বলতে তারা ময়দানের দিকে ছুটে চলল’। দলপতি আব্দুল্লাহ ইবনু জুবায়ের আনছারী (রাঃ) তাদেরকে বলেন, أَنَسِيتُمْ مَا قَالَ لَكُمْ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم- قَالُوا وَاللهِ لَنَأْتِيَنَّ النَّاسَ فَلَنُصِيبَنَّ مِنَ الْغَنِيمَةِ ‘তোমরা কি ভুলে গেলে রাসূল (ছাঃ) তোমাদেরকে কি বলেছিলেন? জবাবে তারা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই লোকদের সঙ্গে গণীমত কুড়াব’ (বুখারী হা/৩০৩৯)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি ও তাঁর সাথী একদল শহীদ হয়ে যান।[1] ওয়াক্বেদী বলেন, তাদের সংখ্যা অনধিক দশ জন ছিল (ওয়াক্বেদী ১/২৩০)।
শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনীর ধুরন্ধর সেনাপতি খালেদ বিন অলীদ সুযোগ বুঝে নক্ষত্র বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে ঐ ক্ষুদ্র বাহিনীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আব্দুল্লাহ ইবনু জুবায়ের ও তাঁর সাথীগণ সকলে প্রাণপণ লড়াই করে শহীদ হয়ে গেলেন। অতঃপর খালেদ ও তার পশ্চাদবর্তী কুরায়েশ সেনাদল অতর্কিতে এসে অপ্রস্ত্তত মুসলিম বাহিনীর উপরে হামলা করল। ঐ সময় ‘আমরাহ বিনতে ‘আলক্বামা(عَمْرة بنتُ عَلْقمةَ الحارثِيَّةُ) নাম্মী জনৈকা কুরায়েশ মহিলা তাদের ভূলুণ্ঠিত পতাকা তুলে ধরলে চারদিক থেকে মাক্কী বাহিনী পুনরায় ময়দানে ছুটে আসে এবং অগ্র-পশ্চাৎ সবদিক থেকে মুসলিম বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় মহা পরীক্ষা। নেমে আসে মহা বিপর্যয়। এই সময় রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন মাত্র ১২জন ছাহাবী (বুখারী হা/৩০৩৯)। পতাকাবাহী মুছ‘আব বিন ওমায়ের শহীদ হন। তার শাহাদাতের পর রাসূল (ছাঃ) যুদ্ধের পতাকা আলী (রাঃ)-এর হাতে তুলে দেন (ইবনু হিশাম ২/৭৩)। অতঃপর তিনি সুকৌশলে স্বীয় বাহিনীকে উচ্চভূমিতে তাঁর ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হন। তীরন্দাযদের ভুলের কারণে মুসলিম বাহিনীর নিশ্চিত বিজয় এভাবে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।