ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
যুদ্ধের প্রতীক চিহ্ন (شعار المسلمين ببدر)

বিভিন্ন যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিভিন্ন প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করতেন। যেমন (১) বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর প্রতীক চিহ্ন ছিল,أَحَدٌ أَحَدٌ (আহাদ, আহাদ)।[1] (২) ওহোদ যুদ্ধে ও সারিইয়া গালিব বিন লায়ছীর প্রতীক চিহ্ন ছিল, أَمِتْ، أَمِتْ (মেরে ফেল, মেরে ফেল)।[2] (৩) খন্দক ও বনু কুরায়যা যুদ্ধে ছিল,حم، لاَ يُنْصَرُونَ (হা-মীম। তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’)।[3] (৪) বনু মুছত্বালিক্ব যুদ্ধে প্রতীক চিহ্ন ছিল,يَا مَنْصُورُ، أَمِتْ أَمِتْ (হে বিজয়ী! মেরে ফেল, মেরে ফেল’)।[4] (৫) মক্কা বিজয়, হোনায়েন এবং ত্বায়েফ যুদ্ধে মুহাজিরদের প্রতীক ছিলيَا بَنِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ ‘হে বনু আব্দুর রহমান’! খাযরাজদের প্রতীক ছিলيَا بَنِي عَبْدِ اللهِ ‘হে বনু আব্দুল্লাহ’! এবং আউসদের প্রতীক ছিলيَا بَنِي عُبَيْدِ اللهِ ‘হে বনু ওবায়দুল্লাহ’![5]

এতে প্রমাণিত হয় যে, যুদ্ধের প্রধান পতাকা ছাড়াও অন্যান্য দলের বিশেষ পতাকা ছিল। এতে আরও প্রমাণিত হয় যে, পরিচিতির জন্য বিশেষ প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যাকে ‘ব্যাজ’ (Badge) কিংবা মনোগ্রাম (Monogram) ইত্যাদি বলা হয়।

জান্নাত পাগল মুমিন মৃত্যুকে পায়ে দলে শতগুণ শক্তি নিয়ে সম্মুখে আগুয়ান হ’ল ও তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এমন সময় জনৈক আনছার ছাহাবী উমায়ের বিন হোমাম(عُمَيْرُ بْنُ حُمَامٍ) ‘বাখ বাখ’(بَخْ بَخْ) বলে উঠলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জান্নাতবাসী হ’তে চাই’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে সুসংবাদ দিয়ে বললেন,فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই তুমি তার অধিবাসী’। একথা শুনে ছাহাবী থলি হ’তে কিছু খেজুর বের করে খেতে লাগলেন। কিন্তু দ্রুত তিনি বলে উঠলেন, لَئِنْ أَنَا حَيِّيْتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِيْ هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيْلَةٌ ‘যদি আমি এই খেজুরগুলি খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে সেটাতো দীর্ঘ জীবন হয়ে যাবে’ বলেই সমস্ত খেজুর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ও বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন’।[6]

এ সময় রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর নিকটে আকুলভাবে নিম্নোক্ত প্রার্থনা করেন,

اللَّهُمَّ أَنْجِزْ لِىْ مَا وَعَدْتَنِىْ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ ... اللَّهُمَّ إِنْ تَهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ لاَ تُعْبَدْ فِى الأَرْضِ بَعْدَ الْيَوْمِ أبَدًا-

‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা করেছ তা পূর্ণ কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণের প্রার্থনা জানাচ্ছি। ... হে আল্লাহ! যদি এই ক্ষুদ্র দলটি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহ’লে আজকের দিনের পর তোমার ইবাদত করার মত কেউ যমীনে আর থাকবে না’। তিনি প্রার্থনায় এমন আত্মভোলা ও বিনয়ী হয়ে ভেঙ্গে পড়লেন যে, তার স্কন্ধ হ’তে চাদর পড়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে আবুবকর ছুটে এসে চাদর উঠিয়ে দিলেন। অতঃপর তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন,حَسْبُكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ ‘যথেষ্ট হয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পালনকর্তার নিকটে আপনি চূড়ান্ত প্রার্থনা করেছেন’।[7]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৬৩৪। বর্ণনাটির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৭৬৪)।

[2]. ইবনু হিশাম ২/৬৮, ৬১১; খবর ছহীহ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১০৯৭); আবুবকর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত যুদ্ধেও একই প্রতীক চিহ্ন ছিল (হাকেম হা/২৫১৬, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত হা/৩৯৫০)। এছাড়া অন্যান্য যুদ্ধেও বিশেষ প্রতীক চিহ্নসমূহ ছিল।

[3]. ইবনু হিশাম ২/২২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩০৮; মিশকাত হা/৩৯৪৮।

[4]. ইবনু হিশাম ২/২৯৪; সনদ হাসান (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৪৭৯)।

[5]. ইবনু হিশাম ২/৪০৯ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬৭৫)।

[6]. মুসলিম হা/১৯০১; মিশকাত হা/৩৮১০ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[7]. বুখারী হা/৪৮৭৫, মিশকাত হা/৫৮৭২।