চাচা আবু ত্বালিব ও স্ত্রী খাদীজার মৃত্যুর পর দশম নববী বর্ষের শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে সাথে নিয়ে প্রধানতঃ নতুন সাহায্যকারীর সন্ধানে পদব্রজে(مَاشِيًا عَلَى قَدَمَيْهِ) ত্বায়েফ রওয়ানা হন।[1] এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ছিল ৫০ বছর। এই প্রৌঢ় বয়সে এই দীর্ঘ পথ প্রচন্ড গরমের মধ্যে তিনি পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেন। যা ছিল মক্কা হ’তে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে।
অতঃপর ত্বায়েফ পৌঁছে তিনি সেখানকার বনু ছাকবীফ গোত্রের তিন নেতা তিন সহোদর ভাই আব্দু ইয়ালীল, মাসঊদ ও হাবীব বিন আমর ছাক্বাফী-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। সাথে সাথে ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহবান জানান। উক্ত তিন ভাইয়ের একজনের কাছে কুরায়েশ-এর অন্যতম গোত্র বনু জুমাহ(بنو جُمَح) এর একজন মহিলা বিবাহিতা ছিলেন (ইবনু হিশাম ১/৪১৯)। সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই রাসূল (ছাঃ) সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনজনই তাঁকে নিরাশ করেন। একজন বলেন,هُوَ يَمْرُطُ ثِيَابَ الْكَعْبَةِ (أى يُمَزِّقُهَا) إِنْ كَانَ اللهُ أَرْسَلَكَ ‘সে কা‘বার গোলাফ ছিঁড়ে ফেলবে, যদি আল্লাহ তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন’। অন্যজন বলেন,أَمَا وَجَدَ اللهُ أَحَدًا يُرْسِلُهُ غَيْرَكَ؟ ‘আল্লাহ কি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে রাসূল হিসাবে পাঠানোর জন্য পাননি’?
তৃতীয় জন বলেন, والله لا أكلِّمُكَ أبدًا، إن كنتَ رسولاً لأنت أعظمُ خطرًا من أن أرُدَّ عليكَ الكلامَ، ولئن كنتَ تَكْذِبُ على الله ما ينبغى أن أُكلِّمَك ‘আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলব না। কেননা যদি তুমি সত্যিকারের নবী হও, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক। আর যদি তুমি আল্লাহর নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়ে থাক, তবে তোমার সাথে আমার কথা বলা সমীচীন নয়’।[2]
নেতাদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে এবার তিনি অন্যদের কাছে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু কেউ তার দাওয়াত কবুল করেনি। অবশেষে দশদিন পর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য পা বাড়ান। এমন সময় নেতাদের উস্কানীতে বোকা লোকেরা ও ছোকরার দল এসে তাঁকে ঘিরে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে তারা পাথর ছুঁড়তে আরম্ভ করে। যাতে তাঁর পায়ের গোড়ালী ফেটে রক্তে জুতা ভরে যায়’ (আর-রাওযুল উনুফ ৪/২৪)। এ সময় যায়েদ বিন হারেছাহ ঢালের মত থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে প্রস্তরবৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এভাবে রক্তাক্ত দেহে তিন মাইল হেঁটে (আর-রাহীক্ব ১২৫ পৃঃ) তায়েফ শহরের বাইরে তিনি এক আঙ্গুর বাগিচায় ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় আশ্রয় নেন। তখন ছোকরার দল ফিরে যায়। বাগানটির মালিক ছিলেন মক্কার দুই নেতা উৎবা ও শায়বা বিন রাবী‘আহ দুই ভাই।[3] এই উৎবার কন্যা ছিলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবা। যিনি ওহোদ যুদ্ধের দিন কাফের পক্ষে মহিলা দলের নেতৃত্ব দেন এবং পরে মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।
ত্বায়েফ সফর বিষয়ে আয়েশা (রাঃ) বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ فَقَالَ لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ وَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِى عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيلَ بْنِ عَبْدِ كُلاَلٍ فَلَمْ يُجِبْنِى إِلَى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ وَأَنَا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِى فَلَمْ أَسْتَفِقْ إِلاَّ بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِى فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِى فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جِبْرِيلُ فَنَادَانِى فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ قَالَ فَنَادَانِى مَلَكُ الْجِبَالِ وَسَلَّمَ عَلَىَّ. ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِى رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِى بِأَمْرِكَ فَمَا شِئْتَ إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الأَخْشَبَيْنِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، متفق عليه-
‘তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন ওহোদের দিন অপেক্ষা কষ্টের দিন আপনার জীবনে এসেছিল কি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমার কওমের কাছ থেকে যে কষ্ট পেয়েছি তার চাইতে সেটি অধিক কষ্টদায়ক ছিল। আর তা ছিল আক্বাবার (ত্বায়েফের) দিনের আঘাত। যেদিন আমি (ত্বায়েফের নেতা) ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল বিন ‘আব্দে কুলাল-এর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে তাতে সাড়া দেয়নি। তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফিরে আসার পথে ক্বারনুছ ছা‘আলিব (ক্বারনুল মানাযিল) নামক স্থানে পৌঁছার পর কিছুটা স্বস্তি পেলাম। উপরের দিকে মাথা তুলে দেখলাম এক খন্ড মেঘ আমাকে ছায়া করে আছে। অতঃপর ভালভাবে লক্ষ্য করলে সেখানে জিবরীলকে দেখলাম। তিনি আমাকে সম্বোধন করে বললেন, আপনি আপনার কওমের নিকটে যে দাওয়াত দিয়েছেন এবং জবাবে তারা যা বলেছে, মহান আল্লাহ সবই শুনেছেন। এক্ষণে তিনি আপনার নিকটে ‘মালাকুল জিবাল’ (পাহাড় সমূহের নিয়ন্ত্রক) ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। ঐ লোকদের ব্যাপারে তাকে আপনি যা খুশী নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর মালাকুল জিবাল আমাকে সালাম দিল এবং বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ আপনার কওমের কথা শুনেছেন। আমি ‘মালাকুল জিবাল’। আপনার পালনকর্তা আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যাতে আপনি আমাকে যা খুশী নির্দেশ দিতে পারেন। আপনি চাইলে আমি ‘আখশাবাইন’ (মক্কার আবু কুবায়েস ও কু‘আইক্বা‘আন) পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপিয়ে দিব। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, বরং আমি আশা করি আল্লাহ তাদের ঔরসে এমন সন্তান জন্ম দিবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না’।[4]
উপরোক্ত হাদীছটি ব্যতীত ত্বায়েফ সফর সম্পর্কে কোন কিছুই ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। তবে সেখানে যে তিনি মর্মান্তিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, সে বিষয়ে উপরোক্ত হাদীছটিই যথেষ্ট। এজন্য কোন দুর্বল বর্ণনার প্রয়োজন নেই।[5]
[2]. ইবনু হিশাম ১/৪১৯; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/১৩৫; আর-রাহীক্ব ১২৫ পৃঃ।
[3]. ইবনু হিশাম ১/৪২০; আল-বিদায়াহ ৩/১৩৪।
[4]. মুসলিম হা/১৭৯৫; বুখারী হা/৩২৩১; মিশকাত হা/৫৮৪৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায় ৪ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫৫৯৮। উপরোক্ত হাদীছে ابْنُ عَبْدِ يَالِيلَএসেছে। কিন্তু জীবনীকারগণ عَبْدُ يَالِيلَ বলেছেন। তারা ‘আব্দু কুলাল-কে ‘আব্দু ইয়ালীল-এর ভাই বলেছেন, পিতা নন’। যার সঙ্গে রাসূল (ছাঃ) কথা বলেছিলেন, তার নাম ছিল ‘আব্দু ইয়ালীল এবং তার পুত্রের নাম ছিল কিনানাহ। কেউ বলেছেন, মাসঊদ। কিনানাহ ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল ছিলেন ত্বায়েফের ছাক্বীফদের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম’ (ফাৎহুল বারী হা/৩২৩১-এর আলোচনা দ্রঃ)।
[5]. প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাগানে প্রবেশ করে আঙ্গুর গাছের ছায়া তলে বসে পড়লেন। এই সময় ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে ব্যাকুল মনে আল্লাহর নিকটে তিনি যে দো‘আ করেছিলেন, তা ‘মযলূমের দো‘আ’ নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। যদিও এটির সনদ যঈফ। দো‘আটি ছিল নিম্নরূপ :
اللَّهُمَّ إلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِي، وَقِلَّةَ حِيلَتِي، وَهَوَانِي عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِينَ، وَأَنْتَ رَبِّي، إلَى مَنْ تَكِلُنِي؟ إلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِي؟ أَمْ إلَى عَدُوٍّ مَلَّكْتَهُ أَمْرِي؟ إنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلاَ أُبَالِيْ، وَلَكِنَّ عَافِيَتَكَ هِيَ أَوْسَعُ لِيْ، أَعُوذُ بِنُورِ وَجْهِكَ الَّذِي أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلُحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ مِنْ أَنْ تُنْزِلَ بِيْ غَضَبَكَ، أَوْ يَحِلَّ عَلَيَّ سُخْطُكَ، لَكَ الْعُتْبَى حَتَّى تَرْضَى، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إلاَّ بِكَ-
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে আমার শক্তির দুর্বলতা, কৌশলের স্বল্পতা ও মানুষের নিকটে অপদস্থ হওয়ার অভিযোগ পেশ করছি- হে দয়ালুগণের সেরা! তুমি দুর্বলদের প্রতিপালক! আর তুমিই আমার একমাত্র পালনকর্তা। কাদের কাছে তুমি আমাকে সোপর্দ করেছ? তুমি কি আমাকে এমন দূর অনাত্মীয়ের কাছে পাঠিয়েছ যে আমাকে কষ্ট দেয়? অথবা এমন শত্রুর কাছে যাকে তুমি আমার কাজের মালিক বানিয়ে দিয়েছ? যদি আমার উপরে তোমার কোন ক্রোধ না থাকে, তাহ’লে আমি কোন কিছুরই পরোয়া করি না। কিন্তু তোমার মার্জনা আমার জন্য অনেক প্রশস্ত। আমি তোমার চেহারার জ্যোতির আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যার কারণে অন্ধকার সমূহ আলোকিত হয়ে যায় এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কর্মসমূহ সুন্দর হয়- এই বিষয় হ’তে যেন আমার উপরে তুমি তোমার গযব নাযিল না কর অথবা আমার উপর তোমার ক্রোধ আপতিত না হয়। কেবল তোমারই সন্তুষ্টি কামনা করব, যতক্ষণ না তুমি খুশী হও। নেই কোন শক্তি, নেই কোন ক্ষমতা তুমি ব্যতীত’ (ইবনু হিশাম ১/৪২০; ত্বাবারাণী, যঈফুল জামে‘ হা/১১৮২; যঈফাহ হা/২৯৩৩)।
(২) আঙ্গুর বাগিচার মালিক ওৎবা ও শায়বা যখন দূর থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর এ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখলেন, তখন তারা দয়াপরবশ হয়ে তাদের খ্রিষ্টান গোলাম ‘আদ্দাস’ (عَدَّاس)-এর মাধ্যমে এক গোছা আঙ্গুর পাঠিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তা হাতে নিয়ে খেতে আরম্ভ করলেন। বিস্মিত হয়ে আদ্দাস বলে উঠল, এ ধরনের কথা তো এ অঞ্চলের লোকদের মুখে কখনো শুনিনি’? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কোন দেশের লোক? তোমার ধর্ম কি? সে বলল, আমি একজন খ্রিষ্টান। আমি ‘নীনাওয়া’ (نينوى)-এর বাসিন্দা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘সৎকর্মশীল ব্যক্তি ইউনুস বিন মাত্তা (مِنْ قَرْيَةِ الرَّجُلِ الصَّالِحِ يُونُسَ بْنِ مَتَّى؟)-এর এলাকার লোক’? লোকটি আশ্চর্য হয়ে বলল, আপনি ইউনুস বিন মাত্তা-কে কিভাবে চিনলেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ذَاكَ أَخِي، كَانَ نَبِيًّا وَأَنَا نَبِيٌّ ‘তিনি আমার ভাই। তিনি নবী ছিলেন এবং আমিও নবী’। একথা শুনে আদ্দাস রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে ঝুঁকে পড়ে তাঁর মাথা, হাত ও পায়ে চুমু খেল।
দূর থেকে এ দৃশ্য দেখে উৎবা ও শায়বা দু’ভাই একে অপরকে বলতে লাগল, দেখছি শেষ পর্যন্ত লোকটা আমাদের ক্রীতদাসকেও বিগড়ে দিল। ক্রীতদাসটি ফিরে এসে তার মনিবকে বলল,يَا سَيِّدِي مَا فِي الأَرْضِ شَيْءٌ خَيْرٌ مِنْ هَذَا، لَقَدْ أَخْبَرَنِي بِأَمْرِ مَا يَعْلَمُهُ إلاَّ نَبِيٌّ- ‘হে মনিব! পৃথিবীতে এই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কেউ নেই’। তিনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে খবর দিয়েছেন, যা নবী ব্যতীত কেউ জানে না’। তারা বলল, وَيْحَكَ يَا عَدَّاسُ، لاَ يَصْرِفَنَّكَ عَنْ دِينِكَ، فَإِنَّ دِينَكَ خَيْرٌ مِنْ دِينِهِ- ‘সাবধান আদ্দাস! লোকটি যেন তোমাকে তোমার ধর্ম থেকে ফিরিয়ে নিতে না পারে। কেননা তোমার দ্বীন তার দ্বীন অপেক্ষা উত্তম’ (ইবনু হিশাম ১/৪২১) বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৪১৯)। শায়খ আলবানী বলেন, ত্বায়েফের ঘটনা হিসাবে প্রসিদ্ধ অত্র বর্ণনাগুলির মধ্যে নেতাদের উদ্দেশ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য ‘তোমরা যে ব্যবহার করেছ, তা গোপন রেখ’ (ইবনু হিশাম ১/৪১৯), অতঃপর আঙ্গুর বাগিচায় গিয়ে আল্লাহর নিকট অভিযোগ পেশ করে দো‘আ করা’ (৪২০ পৃঃ) ইত্যাদি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়’ (যঈফাহ হা/২৯৩৩; মা শা-‘আ ৬৫ পৃঃ)। আকরাম যিয়া উমারী বলেন, সীরাতে ইবনু হিশামে (১/৪১৯-২২) মুহাম্মাদ বিন কা‘ব আল-কুরাযী বর্ণিত ত্বায়েফের ঘটনা সমূহ ছহীহ সনদে বর্ণিত। কিন্তু তা ‘মুরসাল’। আর মুহাম্মাদ আল-কুরাযী হ’লেন ত্বায়েফের ঘটনা সমূহ বর্ণনার প্রধান উৎস’ (সীরাহ ছহীহাহ ১/১৮৫ টীকা-৪)।