যিনি কুরায়েশ নেতা উমাইয়া বিন খালাফের হাবশী ক্রীতদাস ছিলেন। ইসলাম কবুল করার অপরাধে তাকে তার মনিব অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। তার গলায় দড়ি বেঁধে গরু-ছাগলের মত ছেলে-ছোকরাদের দিয়ে পাহাড়ে ও প্রান্তরে টেনে-হিঁচড়ে ঘুরানো হ’ত। তাতে তার গলার চামড়া রক্তাক্ত হয়ে যেত। খানাপিনা বন্ধ রেখে তাকে ক্ষুৎ-পিপাসায় কষ্ট দেওয়া হ’ত। কখনো উত্তপ্ত কংকর-বালুর উপরে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে বুকে পাথর চাপা দেওয়া হ’ত আর বলা হ’তلاَ تَزَالُ هَكَذَا حَتَّى تَمُوتَ أَوْ تَكْفُرَ بِمُحَمَّدِ وَتَعْبُدَ اللاَّتَ وَالْعُزَّى ‘মুহাম্মাদের দ্বীন পরিত্যাগ এবং লাত-‘উযযার পূজা না করা পর্যন্ত তোকে আমৃত্যু এভাবেই পড়ে থাকতে হবে’। কিন্তু বেলাল শুধুই বলতেন ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ (ইবনু হিশাম ১/৩১৭-১৮)। একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাশ দিয়ে যাবার সময় এই দৃশ্য দেখে বললেনأَحَدٌ يُنْجِيكَ ‘আহাদ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ তোমাকে মুক্তি দেবেন’। অতঃপর তিনি এসে আবুবকরকে বললেন, يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ بِلاَلاً يُعَذَّبُ فِي اللهِ ‘হে আবুবকর। বেলাল আল্লাহর পথে শাস্তি ভোগ করছে’। আবুবকর ইঙ্গিত বুঝলেন। অতঃপর উমাইয়ার দাবী অনুযায়ী নিজের কাফের গোলাম নিসতাস (نِسْطَاسٌ)-এর বিনিময়ে এবং একটি মূল্যবান চাদর ও দশটি উক্বিয়ার (স্বর্ণমুদ্রা) বিনিময়ে তাকে খরীদ করে মুক্ত করে দেন।[1] ওমর (রাঃ) বলেন,أَبُو بَكْرٍ سَيِّدُنَا، وَأَعْتَقَ سَيِّدَنَا، يَعْنِى بِلاَلاً ‘আবুবকর আমাদের নেতা এবং মুক্ত করেছেন আমাদের নেতাকে’। এর দ্বারা তিনি বেলালকে বুঝাতেন।[2] ওমর (রাঃ)-এর এই কথার মধ্যে ইসলামী সাম্যের প্রকৃষ্ট প্রমাণ মেলে। যেখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই তাক্বওয়া ব্যতীত। বেলাল (রাঃ) ইসলামের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মুওয়াযযিন ছিলেন। তিনি ২০ হিজরী সনে ৬৩ বছর বয়সে দামেষ্কে মৃত্যুবরণ করেন’ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক সংখ্যা ৭৭৬)।
[2]. বুখারী হা/৩৭৫৪; মিশকাত হা/৬২৫০ ‘মর্যাদা সমষ্টি’ অনুচ্ছেদ।