নতুন অভিজ্ঞতায় শিহরিত মুহাম্মাদ (ছাঃ) দ্রুত বাড়ী ফিরলেন। স্ত্রী খাদীজাকে বললেন, زَمِّلُوْنِى زَمِّلُوْنِى ‘শিগগীর আমাকে চাদর মুড়ি দাও। চাদর মুড়ি দাও’। কিছুক্ষণ পর ভয়ার্তভাব কেটে গেলে সব কথা স্ত্রীকে খুলে বললেন। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে খাদীজা কেবল স্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাঁর নির্ভরতার প্রতীক ও সান্ত্বনার স্থল। ছিলেন বিপদের বন্ধু। তিনি অভয় দিয়ে বলে উঠলেন, এটা খারাব কিছুই হ’তে পারে না।كَلاَّ وَاللهِ لاَيُخْزِيْكَ اللهُ اَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُوْمَ وَتَقْرِى الضَّيْفَ وَتُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ- ‘কখনোই না। আল্লাহর কসম! তিনি কখনোই আপনাকে অপদস্থ করবেন না। আপনি আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করেন, দুস্থদের বোঝা বহন করেন, নিঃস্বদের কর্মসংস্থান করেন, অতিথিদের আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করেন’। বস্ত্ততঃ সে যুগে কেউ কোন মর্যাদাবান ব্যক্তিকে আশ্রয় দিলে তার উদ্দেশ্যে এরূপ প্রশংসাসূচক বাক্য বলা হ’ত। যেমন বলেছিলেন সে সময় মক্কার নিম্নভূমি অঞ্চলের নেতা ইবনুদ দুগুন্না (ابْنُ الدُّغُنَّة) গোপনে হাবশায় গমনরত আবুবকর (রাঃ)-কে আশ্রয় দিয়ে ফেরাবার সময় (ইবনু হিশাম ১/৩৭৩)।
অতঃপর খাদীজা স্বামীকে সাথে নিয়ে চাচাতো ভাই অরাক্বা বিন নওফালের কাছে গেলেন। যিনি ইনজীল কিতাবের পন্ডিত ছিলেন এবং ঐ সময় বার্ধক্যে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সব কথা শুনে বললেন, هَذَا النَّامُوْسُ الَّذِيْ نَزَّلَهُ اللهُ عَلَى مُوْسَى، يَا لَيْتَنِىْ فِيْهَا جَذْعًا، يَا لَيْتَنِىْ أَكُوْنُ حَيًّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ ‘এ তো সেই ফেরেশতা যাকে আল্লাহ মূসার প্রতি নাযিল করেছিলেন। হায়! যদি আমি সেদিন তরুণ থাকতাম। হায়! যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কওম তোমাকে বহিষ্কার করবে’। একথা শুনে চমকে উঠে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, اَوَ مُخْرِجِىَّ هُمْ؟ ‘ওরা কি আমাকে বের করে দিবে’? অরাক্বা বললেন, نَعَمْ لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلاَّ عُوْدِىَ ‘হ্যাঁ! তুমি যা নিয়ে আগমন করেছ, তা নিয়ে ইতিপূর্বে এমন কেউ আগমন করেননি, যার সাথে শত্রুতা করা হয়নি’। অতঃপর অরাক্বা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, إِنْ يُدْرِكْنِيْ يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا ‘যদি তোমার সেই দিন আমি পাই, তবে আমি তোমাকে সাধ্যমত সাহায্য করব’।[1]
এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ফেরেশতা আসে না শয়তান আসে, তা যাচাই করার জন্য একদিন খাদীজা তাঁকে নিজের বাম উরু অতঃপর ডান উরু অতঃপর কোলের উপর বসান এবং বলেন, আপনি কি ফেরেশতাকে দেখতে পাচ্ছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন হ্যাঁ। অতঃপর খাদীজা মাথার কাপড় ফেলে দিয়ে বললেন, এবার কি দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, না। তখন খাদীজা বলে উঠলেন,اُثْبُتْ وَأَبْشِرْ فَوَاللهِ إنّهُ لَمَلَكٌ وَمَا هَذَا بِشَيْطَانٍ ‘আপনি নিশ্চিত থাকুন ও সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আল্লাহর কসম! এটি মহান ফেরেশতা। এটি কোন শয়তান নয়’ (ইবনু হিশাম ১/২৩৮-৩৯; বায়হাক্বী দালায়েল, ২/১৫১)। বর্ণনাটি যঈফ’ (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৯৭; মা শা-‘আ ২৭-২৮ পৃঃ)।