রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে ও তাঁর সাহাবীগণ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হুযাইফা (রা) বলেন, ‘‘আমি নবীজী (ﷺ)-র কাছে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে ইশা’র সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।’’ হাদীসটি সহীহ।[1]
অন্য হাদীসে আনাস (রা) বলেন, ‘‘সাহাবায়ে কেরাম মাগরিব ও ইশা’র মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন এবং নফল সালাত আদায় করতেন।’’ হাদীসটি সহীহ। তাবিয়ী হাসান বসরী বলতেন, মাগরিব ও ইশা’র মধ্যবর্তী সময়ের নামাযও রাতের নামায বা তাহাজ্জুদ বলে গণ্য হবে।[2]
বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো কোনো সাহাবী তাবিয়ীগণকে এ সময়ে সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ প্রদান করতেন।[3]
এ সকল হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে মুমিন কিছু নফল সালাত আদায় করবেন। যিনি যত বেশি সালাত আদায় করবেন তিনি তত বেশি সাওয়াব লাভ করবেন। এ সময়ের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা বা বিশেষ ফযীলতে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি।
কিছু জাল বা অত্যন্ত যয়ীফ সনদের হাদীসে এ সময়ে ৪ রাক’আত, ৬ রাক’আত, ১০ বা ২০ রাক’আত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা বলা হয়েছে। যেমন, যে ব্যক্তি এ সময়ে ৪ রাক’আত সালাত আদায় করবে, সে এক যুদ্ধের পর আরেক যুদ্ধে জিহাদ করার সাওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কোনো কথা বলার আগে ৬ রাক’আত সালাত আদায় করবে তাঁর ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করা হবে। অথবা তাঁর সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। যে ব্যক্তি এ সময়ে ১০ রাক’আত সালাত আদায় করবে, তাঁর জন্য জান্নাতে বাড়ি তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি এ সময়ে ২০ রাক’আত সালাত আদায় করবে, তাঁর জন্য আল্লাহ জান্নাতে বাড়ি তৈরি করবেন। এসকল হাদীস সবই বানোয়াট বা অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এ সময়ে ৬ রাক‘আত নামায আদায় করলে ১২ বছরের সাওয়াব পাওয়ার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। কোনো কোনো মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।[4]
আমাদের দেশে এ ৬ রাক‘আতে সূরা ফাতিহার পরে কোন্ সূরা পাঠ করতে হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, কোনো কোনো সাহাবী-তাবিয়ী বলেছেন, সালাতুল মাগরিবের পর থেকে সালাতুল ইশা পর্যন্ত যে নফল সালাত আদায় করা হয় তা ‘সালাতুল আওয়াবীন’ অর্থাৎ ‘বেশি বেশি তাওবাকারীগণের সালাত’।[5] বিভিন্ন সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চাশতের নামাযকে ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।[6]
[2] বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/১৯; আবূ দাউদ, সুনান ২/৩৫, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৩০, ইবনু আবী শাইবা, মুসান্নাফ ২/১৫, আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৩১৩।
[3] ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ ২/১৪-১৬।
[4] তিরমিযী, সুনান ২/২৯৮, নং ৪৩৫, ইবনু মাজাহ, সুনান ১/৩৬৯, নং ১১৬৭, বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/১৯, ইবনু আবী শাইবা, মুসান্নাফ ২/১৪-১৫, বাইহাকী, শু’আবুল ঈমান ৩/১৩৩, ইবনুল মুবারাক, আয-যুহদ, পৃ. ৪৪৫-৪৪৬, শাওকানী, নাইলুল আউতার ৩/৬৫-৬৭, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৩০।
[5] ইবনু আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ ২/১৪; বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/১৯।
[6] মুসলিম, সহীহ ১/৫১৫-৫১৬; ইবনু খুযাইমা, সহীহ ২/২২৭-২২৮; হাকিম, মুসতাদরাক ১/৪৫৯।