ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
হাদীসের নামে জালিয়াতি ৯. জাল হাদীস চিহ্নিতকরণে বাঙালী আলিমগণ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯. ২. ২. যে সকল মত, বিশ্বাস বা কর্মকে ভিত্তিহীন বলেছেন
সমাজে অনেক বিশ্বাস, কর্ম বা ধারণা বিদ্যমান যার কোনো ভিত্তি কুরআন, হাদীস বা ফিকহে পাওয়া যায় না। আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী তাঁর গ্রন্থের শেষে ‘‘কিছু ভিত্তিহীন কথা’’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে এ জাতীয় অনেক কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পাখা টানতে টানতে যদি শরীরে লাগে তবে সে জমীনে টোকা দেওয়া।
- হাসিঠাট্টা বা মশকরাচ্ছলে যদি কেউ ছুরি বা কাটারি দিয়ে কাউকে খোঁচা দেয় তাহলে সেটিকে মাটিতে ঠেকানো বা ঠোকা জরুরী। এটিও ভিত্তিহীন কথা। এরূপ করা না-জায়েয।
- যদি কোন লোক কাজে আসার সময় হাঁচি দেয় তাহলে সাধারণ মানুষ একে অযাত্রা বা অশুভ বলে ধারণা করে। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।
- যদি কারো কথা বলার সময়, অথবা কোনো কাজ করার সময় টিকটিকি শব্দ করে তাহলে সাধারণ মানুষেরা বলে, টিকটিকি এ কাজ বা কথাটি ঠিক বলে জানাচ্ছে। তারা বুঝাতে চান যে, এ কাজটি বা কথাটি সম্পূর্ণ সত্য ও সঠিক, তাই টিকটিকি এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এ বিশ্বাস পোষণকারী কঠিন গোনাহগার হবেন।
- মহিলারা ধারণা করে যে, সৃষ্টিগতভাবে জোড়া ফল ভক্ষণ করলে জোড়া বা যমজ সন্তান হয়। এটা বিলকুল ভ্রান্ত কথা ।
- খাদ্য বা পানীয়্রশ্বাসনালীতে, তালুতে বা নাকের মধ্যে চলে গেলে সাধারণ মানুষেরা বলে যে, কেউ তাকে স্মরণ করছে। এটা একেবারে ভুল কথা ।
- কারো নাম নেওয়ার সময় সে যদি উপস্থিত হয়ে যায় তবে সাধারণ লোক বলে তোমার হায়াত বৃদ্ধি পাবে। এটা বিলকুল মিথ্যা ও বাতিল কথা।
- প্রচলিত: রবিবার বাঁশ কাটা যাবে না। এদিন বাঁশ কাটলে ঠাকুরের অভিশাপ বা বদ-দোয়ায় আক্রান্ত হতে হবে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা । এরূপ কথায় বা বিশ্বাসে ঈমান চলে যাওয়ার ভয় আছে।
- প্রচলিত: যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তবে চল্লিশ দিন পর কোন আলিম ডেকে তার রুহ বাহির করতে হয়, অন্যথায় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে । এটা সম্পূর্ণ না-জায়েয ও বিদআত কথা।
- ক্ষেতক্ষামার ও ফসলের হেফাযতের জন্য সাধারণ লোক ক্ষেতের মাঝখানে হাড়িতে চুন ইত্যাদি দিয়ে মানুষের আকৃতি তৈরি করে। এটি ভিত্তিহীন মিথ্যা কথা। এতে ছবি বানানোর জন্য গুনাহগার হবে।
- প্রচলিত: রাস্তায় চলার সময় খালি কলস দেখা অথবা সাপ বা শৃগাল ডান দিক থেকে বাম দিকে যেতে দেখাকে অযাত্রা বা অশুভ বলে মনে করা। এটা ভিত্তিহীন কথা। এরূপ বিশ্বাস পোষণকারী গুনাহগার হবে।
- প্রসিদ্ধ হয়েছে যে, যদি মুক্তাদী পাগড়ি মাথায় সালাত আদায় করে এবং ইমাম শুধু টুপি পরিধান করে সালাত আদায় করে তবে মুক্তাদীর সালাত মাকরুহ হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। ....
- সাধারণের মাঝে প্রচলিত আছে যে, স্বামী তার স্ত্রীর জানাযার খাঁটিয়া ধরতে পারবে না। এটি একেবারে ভিত্তিহীন কথা। খাটিয়া ধরার ক্ষেত্রে অন্য সকলের চেয়ে স্বামীর দায়িত্ব ও অধিকার সবচেয়ে বেশি।
- সাধারণের মাঝে প্রচলিত আছে যে, সতর খোলা অবস্থায় দেখলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। এটিও ভুল কথা।
- প্রচলিত আছে যে, মৃতদেহ যতক্ষণ বাড়িতে থাকবে ততক্ষণ আত্মীয়-স্বজন বা অন্যদের জন্য খানাপিনা নিষিদ্ধ। এটি ভিত্তিহীন কথা।
- মহিলাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, সালাত আদায়ের পর জায়নামাযের প্রান্ত অবশ্যই উল্টিয়ে দিতে হবে। অন্যথ্যায় শয়তান সেখানে সালাত আদায় করবে (!) শরীয়তে এ কথার কোনো ভিত্তি নেই ।
- প্রচলিত আছে, স্বামী-স্ত্রী এক পাত্রে দুধ পান করা নিষিদ্ধ; এতে তারা পরষ্পরে দুধভাই-বোন হয়ে যায়। এটি ভিত্তিহীন ভ্রান্ত কথা।
- ওযু করে শুকর দেখলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এটি ভুল কথা।
- অন্ধকারে সালাত আদায় জায়েয নয়। এটা ভুল। তবে এতটুকু খেয়াল করা আবশ্যক যে, কিবলাহ থেকে অন্য দিকে মুখ না হয়ে যায়।
- পেঁচা বা অমুক প্রাণী ডাক দিলে বালা-মুসিবত নাযিল হয়। ভ্রান্ত কথা।
- প্রসিদ্ধ আছে যে, মহিলাদের জন্য নিজের পীর থেকে পর্দা করা জরুরী নয়। এটিও ভ্রান্ত কথা।
- দেখা যায় যে, অনেক মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে এসে প্রথমে বসে পড়ে, এরপর সালাত আদায় শুরু করে। এমনকি নিকটবর্তী কোনো স্থান থেকে আসলেও বা ক্লান্ত না হলেও এভাবে মসজিদে ঢুকে প্রথমে বসে পড়ে এরপর সালাতে দাঁড়ায়। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। (মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সালাত আদায় না করে বসে পড়া সুন্নাতের খেলাফ। হাদীস শরীফে মসজিদে ঢুকে কোনো সালাত আদায় না করে বসে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।)
- প্রচলিত: যদি মাংসের সাথে হাড় না থাকে তাহলে তা খাওয়া জায়েয নয়। এটা ভুল কথা।
- প্রচলিত: নুন পড়ে গেল পাঁপড়ি দিয়ে উঠাতে হয়। এটিও ভুল কথা।
- প্রচলিত: কুকুর কাঁদলে বালা-মুসিবত ছড়ায়। এটা ভুল কথা।
- নির্দিষ্ট কোনো কোনো দিন বা তারিখে সফর করাকে সাধারণ মানুষ ভাল বা মন্দ বলে ধারণা করে। এটিও বাতিল ধারণা।
- যে ব্যক্তি জবাই করে তার গোনাহ ক্ষমা হয় না। ভিত্তিহীন ভ্রান্ত কথা।
- কিছু মানুষ সালাম দেওয়ার সময় কপালে হাত রাখে অথবা সামান্য ঝুকে যায় এবং মুসাফাহা করার সময় বুকে হাত রাখে (মুসাফাহা করার পরে হাতটি বুকে রাখে)। এগুলি সব শরীয়ত বিরোধী কাজ।
- প্রচলিত আছে যে, রাতে ঝাড়ু দেওয়া, ফুঁক না দিয়ে বাতি নিভানো এবং চুল আঁচড়ানো নিষিদ্ধ। এ সব ভ্রান্ত কথা।
- বলা হয় যে, কুরআন শরীফ কিছু কিছু স্থান (মাঝে না থেমে) মিলিয়ে পড়লে কাফির হয়ে যায় এবং সুরা ফাতিহার কিছু অক্ষর (আগের শব্দে সাথে) মিলালে শয়তানের নাম হয়ে যায়। এও ভিত্তিহীন কথা। অবশ্য তাজবীদের খেলাফ হলে গুনাহগার হবে, কিন্তু কাফির হয়ে যাওয়া এবং শয়তানের নাম বানানো বাড়াবাড়ি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, আল-মাউযূআত: উর্দু, পৃ ১০০-১২২; বাংলা, পৃ ৩০৭-৩৩৫।