ইবরাহীমের পরীক্ষা সমূহ তাঁর যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ছিল না বা তাঁর কোন অপরাধের সাজা হিসাবে ছিল না। বরং এর উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে লালন করে পূর্ণত্বের মহান স্তরে পৌছে দেওয়া এবং তাঁকে আগামী দিনে বিশ্বনেতার মর্যাদায় সমাসীন করা। সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে এটা দেখিয়ে দেওয়া যে, আল্লাহর নিকটে প্রিয় ও সম্মানিত বান্দাগণকে দুনিয়াতে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ’তে হয়। আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীর মধ্যে رَبُّهُ (‘তার পালনকর্তা’) গুণটিকে খাছ করে বলার মধ্যে স্বীয় বন্ধুর প্রতি স্নেহ ও তাকে বিশেষ অনুগ্রহে লালন করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। এক্ষণে তাঁর পরীক্ষার সংখ্যা কত ছিল সে বিষয়ে কুরআন নির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করেনি। কেবল বলেছে, بِكَلِمَاتٍ ‘অনেকগুলি বাণী দ্বারা’ (বাক্বারাহ ২/১২৪)। অর্থাৎ শরী‘আতের বহুবিধ আদেশ ও নিষেধ সমূহ দ্বারা। ‘কালেমাত’ শব্দটি বিবি মারিয়ামের জন্যেও ব্যবহৃত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا ‘মারিয়াম তার পালনকর্তার বাণী সমূহকে সত্যে পরিণত করেছিল’ (তাহরীম ৬৬/১২)।
ইবরাহীমের জীবনে পরীক্ষার সংখ্যা কত ছিল এরূপ এক প্রশ্নের জবাবে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ইসলামের ৩০টি অংশ রয়েছে। যার ১০টি সূরা তওবায় (১১২ আয়াতে), ১০টি সূরা মুমিনূনে (১-৯ আয়াতে) ও সূরা মা‘আরিজে (২২-৩৪ আয়াতে) এবং বাকী ১০টি সূরা আহযাবে (৩৫ আয়াতে) বর্ণিত হয়েছে। যার সব ক’টি ইবরাহীম (আঃ) পূর্ণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে সনদ দিয়ে বলেন, وَإِبْرَاهِيْمَ الَّذِىْ وَفَّى ‘এবং ইবরাহীমের ছহীফায়, যিনি (আনুগত্যের অঙ্গীকার) পূর্ণ করেছিলেন’ (নাজম ৫৩/৩৭)।[24] তবে ইবনু জারীর ও ইবনু কাছীর উভয়ে বলেন, ইবরাহীমের জীবনে যত সংখ্যক পরীক্ষাই আসুক না কেন আল্লাহ বর্ণিত ‘কালেমাত’ বহু বচনের শব্দটি সবকিছুকে শামিল করে’ (ইবনু কাছীর)।
বস্ত্ততঃ পরীক্ষা সমূহের সংখ্যা বর্ণনা করা কিংবা ইবরাহীমের সুক্ষ্মদর্শিতা ও জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করা এখানে মুখ্য বিষয় নয়, বরং আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্যশীলতা ও নিখাদ আত্মসমর্পণ এবং কার্যক্ষেত্রে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা যাচাই করাই ছিল মুখ্য বিষয়।