ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল দশম অধ্যায় - রমাযানে যে যে কাজ করা রোযাদারের কর্তব্য আবদুল হামীদ ফাইযী
তাড়াহুড়া না করে সুন্দরভাবে তারাবীহ পড়া

ইমামের জন্য উচিৎ নয়, নামাযে জলদিবাজি করা এবং কাকের দানা খাওয়ার মত ঠকাঠক নামায শেষ করা। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম এ নামাযকে খুবই লম্বা করে পড়তেন; যেমন পূর্বে এ কথা আলোচিত হয়েছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর রুকূ ও সিজদাহ প্রায় তাঁর কিয়ামের মতই দীর্ঘ হত। আর এত লম্বা সময় ধরে তিনি সিজদায় থাকতেন যে, সেই সময়ে প্রায় ৫০টি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে।[1]

সুতরাং এ কথা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যে, আমরা আমাদের তারাবীহর নামাযকে তাঁদের নামাযের কাছাকাছি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমরাও ক্বিরাআত লম্বা করব, রুকূ, সিজদাহ ও তার মাঝে কওমা ও বৈঠকে তসবীহ ও দুআ অধিকাধিক পাঠ করব। যাতে আমাদের মনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও যেন বিনয়-নম্রতা অনুভূত হয়; যে বিনয়-নম্রতা হল নামাযের প্রাণ ও মস্তিষ্ক। আমাদের উচিৎ, এই নামাযের সুন্নতকে তার পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ (কোয়ালিটি ও কোয়ানটিটি) উভয় দিক থেকেই গ্রহণ করা। অতএব আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী নামাযের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য অবলম্বন করব; যেমন গ্রহণ করে থাকি রাকআত সংখ্যা। বলা বাহুল্য, বিনয়-নম্রতা, মনের উপস্থিতি ও ধীরতা-স্থিরতা ছাড়া কেবল রাকআত আদায়ের কর্তব্য পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।

পক্ষান্তরে নামাযে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া বৈধ নয়। তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যদি নামাযের কোন ওয়াজেব বা রুকন সঠিকরূপে আদায় না হয়, তাহলে তো নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। পরন্তু ইমাম কেবল নিজের জন্য নামায পড়েন না। তিনি তো নিজের তথা মুক্তাদীদের জন্য নামায পড়ে (ইমামতি করে) থাকেন। সুতরাং তিনি হলেন একজন অলী (অভিভাবকের) মত। তাঁকে তাই করা ওয়াজেব, যা নামাযে ধীরতা-স্থিরতা বজায় রাখার সাথে সাথে মুক্তাদীদের অবস্থা অনুপাতে অবলম্বন করা উত্তম।[2]

নামাযে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ফরয ও অপরিহার্য। যে তা বর্জন করবে, তার নামায বাতিল গণ্য হবে। যেহেতু একদা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে অধীর ও অস্থির হয়ে নামায পড়তে দেখে তাঁকে নামায ফিরিয়ে পড়তে আদেশ করলেন এবং শিক্ষা দিলেন যে, নামাযের রুকূ, সিজদাহ, কওমাহ ও দুই সিজদার মাঝখানে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজেব।[3]

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘সে নামাযীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।’’[4]

তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামায চুরি করে।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! নামায কিভাবে চুরি করবে?’ বললেন, ‘‘পূর্ণরূপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।’’[5]

তিনি আরো বলেন, ‘‘আল্লাহ সেই বান্দার নামাযের প্রতি তাকিয়েই দেখেন না, যে রুকূ ও সিজদায় তার মেরুদন্ড সোজা করে না।’’[6]

[1] (বুখারী ১১২৩নং দ্রঃ)

[2] (দ্রঃ সালাতুত তারাবীহ ৯৯-১০৩, ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ ১৮পৃঃ, ফাসিঃ ৮৮, ৯৩পৃঃ)

[3] (বুখারী ৭৫৭, মুসলিম ৩৯৭নং, প্রমুখ)

[4] (সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ, আবূ দাঊদ ৮৫৫নং, আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৭২২৪নং)

[5] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ২৯৬০ নং, ত্বাবা, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/২২৯, মালেক, মুওয়াত্তা, আহমাদ, মুসনাদ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৯৮৬নং)

[6] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ২৯৫৭, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৩৬ নং)