ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
মুখতাসার যাদুল মা‘আদ অনুচ্ছেদ সমুহের সূচী ও বিবরন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ)
সলাতুল ঈদাইন তথা দুই ঈদের সলাতে নাবী (সাঃ) এর হিদায়াত

পূর্ব দিক দিয়ে মদ্বীনার প্রবেশ পথে অবস্থিত ঈদগাহে (মুসাল্লায়) তিনি দুই ঈদের সলাত আদায় করতেন। তৎকালে এই স্থানেই হাজীদের আসবাবপত্র রাখা হতো। সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় পাওয়া যায় তিনি মাত্র একবার বৃষ্টির কারণে মসজিদে নববীতে ঈদের সলাত পড়েছেন।

ঈদের দিন তিনি সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের সলাতের জন্য বের হওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেয়ে বের হতেন। আর ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহ থেকে ফেরত আসার আগে কিছুই খেতেন না। ফেরত এসে তিনি কুরবানীর মাংস খেতেন। তিনি দুই ঈদের দিন গোসল করতেন। এ বিষয়ে দু’টি যঈফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে তা ইবনে উমার (রাঃ) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর ইবনে উমার (রাঃ) দৃঢ়তার সাথে রসূল (ﷺ) এর সুন্নাতের অনুসরণ করে চলতেন। রসূল (ﷺ) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন। সাথে বর্শা বহন করে নেওয়া হতো। মুসাল্লায় পৌঁছে তা কিবলার দিকে পুঁতে রেখে সেটির দিকে ফিরে সলাত পড়তেন। মদ্বীনার সেই ঈদগাহে কোন কিছুই (বর্তমান সময়ের ন্যায় মিম্বার) নির্মাণ করা হয় নি।

তিনি ঈদুল ফিতরের সলাত বিলম্বে আদায় করতেন এবং ঈদুল আযহায় তা করতেন না। ইবনে উমার (রাঃ) সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসরণকারী হওয়া সত্ত্বেও সূর্য পুরোপুরি উদিত হওয়ার পূর্বে ঈদের মুসাল্লার উদ্দেশ্যে বের হতেন না। ঘর থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন।

ঈদগাহে পৌঁছে তিনি আযান, ইকামত ও সলাতের জন্য ডাকাডাকি ছাড়াই সলাত শুরু করে দিতেন। তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণ ঈদের মাঠে গিয়ে সলাতের পূর্বে বা পরে কোন সুন্নাত বা নফল সলাত পড়তেন না।

তিনি খুতবার পূর্বে সলাত পড়তেন। দুই রাকআত ঈদের সলাত পড়তেন। প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমাসহ মোট সাতটি তাকবীর পাঠ করতেন। প্রত্যেক দুই তাকবীরের মাঝখানে সামান্য বিরতি গ্রহণ করতেন। তাকবীরগুলোর মাঝখানে তাঁর থেকে নির্দিষ্ট কোন দু’আ বা যিকির বর্ণিত হয়নি। তবে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময়ে আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করবে এবং নাবী (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাঠ করবে। ইবনে উমার (রাঃ) প্রত্যেক তাকবীর পাঠ করার সময় রাফউল ইয়াদাইন করতেন।

তাকবীর পাঠ শেষ করে তিনি কিরাআত শুরু করতেন। তিনি প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা অতঃপর সূরা ক্ব-ফ পাঠ করতেন আর দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইকতারাবাত তথা কামার পাঠ করতেন। কখনও কখনও তিনি সূরা আ’লা ও গা-শীয়া দিয়েও ঈদাইনের সলাত পড়েছেন। উপরোক্ত চারটি সূরা ব্যতীত অন্য কোন সূরা দিয়ে দুই ঈদের সলাত পড়ার বিষয়ে কোন সহীহ হাদীস নেই।[1]

কিরাআত পাঠ শেষে তিনি আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় রাকআতে পরপর পাঁচটি অতিরিক্ত তাকবীর পাঠ করতেন। তাকবীর পাঠ শেষে কিরাআত শুরু করতেন।

সলাত শেষে মানুষের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতেন। মানুষেরা কাতারে নিজ নিজ স্থানেই বসে থাকত। অতঃপর তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন এবং আদেশ প্রদান করতেন। অতঃপর কোন দিকে সেনাবাহিনী পাঠানোর ইচ্ছা করলে বা কোন বিষয়ে আদেশ করার ইচ্ছা পোষণ করলে তা করতেন।

[1]. তবে অন্যান্য সূরা পড়লেও সলাতের কোন ক্ষতি হবেনা। কারণ বিষয়টি এমন নয় যে, দুই ঈদ অথবা অন্যান্য সলাতে উক্ত সূরাগুলো পাঠ করা ওয়াজিব বা ফরজ। তিনি যে সলাতে যেই সূরা পাঠ করেছেন বা যে পরিমাণ পাঠ করেছেন, অন্যদেরকে সেই সূরা ও সেই পরিমাণ পাঠ করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া উদ্দেশ্য নয়। কেননা মূলত কিরাআত পাঠ করা হচ্ছে সুন্নাত। সেই সাথে হাদিছে যে অংশ পড়ার কথা এসেছে, তা অনুসরণ করা ভাল।না করলে মূল সুন্নাত পালন করাই যথেষ্ট।