(أ) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ حَفَرَ قَبْرًا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَمَنْ غَسَلَ مَيْتًا خَرَجَ مِنَ الْخَطَايَا كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ وَمَنْ كَفَّنَ مَيْتًا كَسَاهُ اللهُ أَثْوَابًا مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ عَزَى حَزِيْنًا أَلْبَسَهُ اللهُ التَّقْوَى وَصَلَّى عَلَى رُوْحِهِ فِى الْأَرْوَاحِ وَمَنْ عَزَى مُصَابًا كَسَاهُ اللهُ حُلَّتَيْنِ مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ لاَ يَقُوْمُ لَهُمَا الدُّنْيَا وَمَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ حَتَّى يَقْضِىَ دَفْنَهَا كُتِبَ لَهُ ثَلاَثَةَ قَرَارِيْطَ الْقِيْرَاطُ مِنْهَا أَعْظَمُ مِنْ جَبَلِ أُحُدٍ وَمَنْ كَفَّلَ يَتِيْمًا أَوْ أَرْمَلَةً أَظَلَّهُ اللهُ فِىْ ظِلِّهِ وَأَدْخَلَهُ جَنَّتَهُ.
(ক) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কবর খনন করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে গোসল করাবে সে পাপ থেকে অনুরূপ মুক্ত হবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে তাকে আল্লাহ জান্নাতের পোশাক পরাবেন। যে চিন্তিত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিবে আল্লাহ তাকে তাক্বওয়ার লেবাস পরিধান করাবেন এবং তার রূহের উপর রহমত বর্ষণ করবেন। যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক সেটের মধ্য হতে দু’টি সেট দান করবেন। পুরো পৃথিবী ঐ দু’টি কাপড়ের সমকক্ষ হবে না। যে দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জানাযার সাথে থাকবে তার তিন ক্বীরাত নেকী হবে। এক ক্বীরাত্ব ওহোদ পাহাড়ের চেয়ে বড় হবে। যে ব্যক্তি ইয়াতীম বা বিধবার তত্ত্বাবধায়ক হবে আল্লাহ তাকে তাঁর ছায়ায় ছায়া দান করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[1]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী নিজেই যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।[2] কারণ এর সনদে খলীল বিন মুররা ও ইসমাঈল বিন ইবরাহীম নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।[3]
উল্লেখ্য যে, নিম্নের হাদীছটি ছহীহ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাল, অতঃপর তার গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তাকে ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’।[4]
(ب) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ حَمَلَ جَوَانِبَ السَّرِيْرِ الْأَرْبَعِ كَفَّرَ اللهُ عَنْهُ أَرْبَعِيْنَ كَبِيْرَةً.
(খ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মৃতের চার পায়া খাটিয়ার পার্শ্ব বহন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ৪০ টি কাবীরা গোনাহ মাফ করে দিবেন।[5]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য। এর সনদে আলী বিন আবু সারাহ ও মুহাম্মাদ বিন উক্ববা সাদূসী নামে দুই জন যঈফ রাবী আছে।[6]
এক নযরে মৃতের গোসল, কাফন ও দাফন :
মাইয়েতকে দ্রুত গোসল করানো ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা সুন্নাত।[7] গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পূর্ণ আদবের সাথে বরইপাতা দেওয়া পানি এবং সাবান দিয়ে গোসল করাবে।[8] সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন।[9] স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাবেন।[10] জিহাদের ময়দানে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না।[11] উল্লেখ্য, পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে।[12]
প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাইয়েতের ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গগুলো ধৌত করবে।[13] ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে। তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় পানি ঢালা যাবে। গোসল শেষ করার পর সুগন্ধি লাগাবে। মাইয়েত মহিলা হলে চুলের তিনটি বেণী করে পিছনে ছড়িয়ে দেবে।[14]
কাফন :
সাদা পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মাইয়েতকে কাফন পরাবে।[15] তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে।[16] পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি লেফাফা বা বড় চাদর, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে যাবে। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা।[17] বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে।[18] শহীদকে তার পরিহিত পোশাকে কাফন দিবে। অনুরূপ মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে। কিন্তু সুগন্ধি লাগাবে না।[19] কাফনের কাপড়ের অভাব হলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে।[20]
দাফন :
কবর গভীর ও প্রশস্ত করে ভালভাবে খনন করতে হবে।[21] ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবরই জায়েয। মাইয়েতকে পুরুষ লোকেরা কবরে নামাবে। মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তী যারা ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি তারা এই দায়িত্ব পালন করবেন।[22] কবরের পায়ের দিক দিয়ে মোর্দাকে কবরে নামাবে।[23] মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে।[24] কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ দু‘আ পড়বে।[25] কবর বন্ধ করার পরে সকলে সাধারণ দু‘আ হিসাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে[26] তিন মুষ্ঠি মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দিবে।[27] কবরের মাটি সমান করে দিবে।[28] কবর সাধারণ মাটি থেকে বিঘত খানেক উঁচু করবে।[29] বেশী উঁচু করা বা সৌধ নির্মাণ করা নিষিদ্ধ।[30]
[2]. আল-আওসাত হা/৯২৯২- لم يرو هذا الحديث عن الخليل بن مرة إلا موسى بن أعين ولا يروى عن جابر إلا بهذا الإسناد ولم ينسب لإسماعيل بن إبراهيم الذي روى هذا الحديث।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০০২; যঈফ আত-তারগীব হা/২০৫০।
[4]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৮৮২৭; ত্বাবারাণী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ ছহীহ।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব; তানক্বীহ, পৃঃ ৫০৫।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১৮৯১।
[7]. বুখারী হা/১৩১৫, ১/১৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৩৬, ২/৩৯২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫১; মিশকাত হা/১৬৪৬, পৃঃ ১৪৪, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘জানাযার সাথে চলা ও তার ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[8]. বুখারী হা/১২৫৩, ১২৫৪, ১/১৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮০, ২/৩৬২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/১৬৩৪, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৬, ৪/৪৮ পৃঃ।
[9]. দারাকুৎনী হা/১৮৭৩, সনদ হাসান; মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৩৩৯; আহকামুল জানাইয, পৃঃ ৫০।
[10]. ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫; ইরওয়াউল গালীল হা/৭০০, ৩/১৬০ পৃঃ; হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১।
[11]. বুখারী হা/১৩৪৩, ১/১৭৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২, ২/৪০৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭২; বলূগুল মারাম হা/৫৩৭; তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩৩।
[12]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৭; নিসা ৪৩; মায়েদাহ ৬।
[13]. বুখারী হা/১২৫৪, ১/১৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮০, ২/৩৬২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মুসলিম হা/২২১৮; মিশকাত হা/১৬৩৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৬, ৪/৪৮ পৃঃ।
[14]. বুখারী হা/১২৫৩, ১২৫৪, ১/১৬৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮০, ২/৩৬২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/১৬৩৪, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৬, ৪/৪৮ পৃঃ; তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩০।
[15]. তিরমিযী হা/৯৯৪, ১/১৯৩ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৩৮৭৮; মিশকাত হা/১৬৩৮, পৃঃ ১৪৩; বলূগুল মারাম হা/৫৩৫; ছহীহ মুসলিম হা/২২২৮।
[16]. ছহীহ বুখারী হা/১৩৮৭, ১/১৮৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩০৪, ২/৪২৯ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৪।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/১২৭২, ১/১৬৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৯৭, ২/৩৭০ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/২২২৫; মিশকাত হা/১৬৩৫, পৃঃ ১৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৪৭, ৪/৪৯ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ; তিরমিযী হা/১১৩; মিশকাত হা/৪৪১।
[18]. বুখারী হা/১২৭৫, ১/১৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২০১, ২/৩৭২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/১৬৪৪, পৃঃ ১৪৪।
[19]. মুসলিম হা/২৯৫১, (ইফাবা হা/২৭৫৮), ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪; বুখারী হা/১২৬৭।
[20]. বুখারী হা/১৩৪৩, ১/১৭৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২, ২/৪০৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭২; মিশকাত হা/১৬৬৫।
[21]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০, পৃঃ ১১২, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪১; তিরমিযী হা/১৭১৩; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৭০৩, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬১১, ৪/৭৪ পৃঃ। উল্লেখ্য যে, কবর ৬ ফুট গভীর ও মাপমত প্রস্থ করতে হবে মর্মে একটি আছার বর্ণিত হয়েছে। -মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১১৭৮৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/৫৪৫ পৃঃ।
[22]. আলবানী, তালখীছু আহকামিল জানাইয, পৃঃ ৬১; ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫, সনদ হাসান; হাকেম হা/৪৭৬৯।
[23]. আবুদাঊদ হা/৩২১১, ২/৪৫৮ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৫৬১।
[24]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৬০৬১; ইবনু হাযম আন্দালুসী, আল-মুহাল্লা ৫/১৭৩ পৃঃ; আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১৫১; আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূউ ফাতাওয়া ১৩/১৯০ পৃঃ।
[25]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৫০, পৃঃ ১১১; আবুদাঊদ হা/৩২১২, ২/৪৫৮ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭০৭, পৃঃ ১৪৮।
[26]. মুসলিম হা/৮৫২; মিশকাত হা/৪৫৬; বুখারী হা/৫৬২৩; মুসলিম হা/৫৩৬৬; মিশকাত হা/৪২৯৪।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৬৫, পৃঃ ১১২; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৭৫১, ৩/২০০ পৃঃ।
[28]. আহমাদ হা/২৩৯৭৯ ও ২৩৯৮১; সনদ ছহীহ, আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ২০৮।
[29]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬৬০১; বলূগুল মারাম হা/৫৬৭; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল ৩/২০৬ পৃঃ।
[30]. মুসলিম হা/২২৮৯, (ইফাবা হা/২১১৪); মিশকাত হা/১৬৯৭, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬০৬, ৪/৭৩ পৃঃ।