ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থের বিস্তারিত আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান (ইসলামহাউস.কম)
ভূমিকা

যার নিখুঁত সৃষ্টি কুশলতায় অস্তিত্ব লাভ করেছে এ বিশ্বজাহান। যার অসীম কুদরতের অনুপম নিদর্শন চাঁদ-সুরুজ ও সিতারা-আসমান। যার করুণা স্নিগ্ধ লালন-প্রতিপালনে ধন্য সকল জড় উদ্ভিদ প্রাণ। সেই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্যই আমার সকাল-সন্ধ্যার হামদ-সানা, আমার দিবস-রজনীর স্তুতি-বন্দনা।

যার শুভাগমনে আঁধার ঘুচে মানবতার পূর্ব দিগন্তে এক নতুন সূর্যের উদয় হল। মানবতার মুক্তির জন্য মানুষেরই হাতে তায়েফের মাটি যার রক্তে রঞ্জিত হলো, সেই নবী রাহমাতুল্লিল আলামীনের প্রতি আমার বিরহী আত্মার সালাত ও সালাম। মদীনা স্বপ্নে বিভোর আমার হৃদয়ের প্রেম-পয়গাম।

মানুষ স্বপ্ন দেখে। ভালো স্বপ্ন দেখে বলে সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি। দেখে খারাপ স্বপ্ন, বলে ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখেছি। আবার কখনো বলে একটি বাজে স্বপ্ন দেখেছি।

আসলে স্বপ্ন কী? এ নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। কেউ বলেছেন, এটা একটি মানসিক চাপ থেকে আসে। কেউ বলেছেন, শারীরিক বিভিন্ন ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটলে এটা দেখা যায়, সে অনুযায়ী। কেউ বলেছেন, সারাদিন মনে যা কল্পনা করে তার প্রভাবে রাতে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন আধুনিক মনোবিজ্ঞানেরও একটি বিষয়।

আবার অনেকে স্বপ্ন না দেখেও বলে এটা আমার স্বপ্ন ছিল অথবা আমার জীবনের স্বপ্ন এ রকম ছিল না। মানে, মনের আশা, পরিকল্পনা। তাই স্বপ্নের অর্থ এখানে রূপক।

আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে এসেছে ইসলাম। এই ইসলাম মানুষের স্বপ্নের ব্যাপারেও উদাসীন থাকেনি। স্বপ্ন সম্পর্কে তার একটি নিজস্ব বক্তব্য আছে। তার এ বক্তব্য কোনো দার্শনিক বা বিজ্ঞানীর বক্তব্যের সাথে মিলে যাবে, এমনটি জরুরি নয়। মিলে গেলেও কোনো দোষ নেই।

স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা বিশেষজ্ঞ ইমাম মুহাম্মাদ ইবন সীরীন রহ. বলেছেন,

«الرُّؤْيَا ثَلاَثٌ: حَدِيثُ النَّفْسِ، وَتَخْوِيفُ الشَّيْطَان وَبُشْرَى مِنَ اللَّهِ»

“স্বপ্ন তিন ধরনের হয়ে থাকে। মনের কল্পনা ও অভিজ্ঞতা। শয়তানের ভয় প্রদর্শন ও কুমন্ত্রণা ও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সুসংবাদ”।[1]

ইসলামে স্বপ্নের একটি গুরুত্ব আছে। নিঃসন্দেহে এটা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একচোখা বস্তুবাদীরা বলে থাকে, ‘‍‍‍‍‍‍মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তার মস্তিষ্কে তার স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করে। যাচাই-বাছাই করে, কিছু পুনর্বিন্যাস করে। তারপর স্মৃতির ফাইলে যত্ন করে রেখে দেয়। এই কাজটা সে করে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে। মস্তিস্কের এই কাজ-কর্মই আমাদের কাছে ধরা দেয় স্বপ্ন হিসেবে।‌‌’

কথাটা শুনতে মন্দ নয়, তবে এটি স্বপ্নের একটি প্রকার মাত্র। বাকী দু’প্রকার কি আপনাদের মস্তিস্কে ধরা পড়ে? ইসলাম তো বলে স্বপ্ন তিন প্রকার। হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন। প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, গত রাতে তোমাদের কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছ?

আল-কুরআনে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্বপ্ন, ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নের কথা উল্লেখ আছে। ইউসূফ আলাইহিস সালামের সময়ে মিশরের বাদশার স্বপ্ন, তাঁর জেলখানার সঙ্গীদের স্বপ্ন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বপ্ন নিয়ে তো আল-কুরআনে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।

মিশরের বাদশাহ তার সভাসদের স্বপ্ন বিশেষজ্ঞদেরকে নিজ স্বপ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। জানতে চেয়েছিল, সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা। তারা বলেছিল, এটা এলোমেলো অলীক স্বপ্ন। তারা এর ব্যাখ্যা দিতে পারল না। নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের সুন্দর ব্যাখ্যা দিলেন। নিজের পক্ষ থেকে নয়। আল্লাহ তা‘আলার শিখানো ইলম থেকে।[2]

আমি বক্ষ্যমাণ বইতে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার কিছু মৌলিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে কী স্বপ্ন দেখলে কী হয়, তা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে না। এটা নির্দিষ্ট করে আলোচনা করা সম্ভবও নয়। মানে এটা বাজারে প্রচলিত কোনো খাবনামা নয়। স্বপ্ন সম্পর্কে মৌলিক কিছু আলোচনা ও একটি ধারণা দেওয়ার প্রয়াস মাত্র।

স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থাভেদে একই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে। স্বপ্ন তিন প্রকার:

এক. মনে মনে যা সারাদিন কল্পনা করে তার প্রভাবে ঘুমের মধ্যে ভালো-মন্দ কিছু দেখা। এগুলো আরবীতে আদগাছু আহলাম বা অলীক স্বপ্ন বলে।

দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে স্বপ্ন দেখা। সাধারণত এ সকল স্বপ্ন ভীতিকর হয়ে থাকে।

তিন. আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ইশারা-ইঙ্গিত হিসেবে স্বপ্ন দেখা। বিষয়টি উপরে বর্ণিত হাদীসেও উল্লেখ হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটুকু কবুল করুন। বইটিকে পাঠকদের কল্যাণে গ্রহণ করুন। আর আমরা আমাদের সকল পাওনা ও প্রাপ্তি তার কাছেই আশা করি। তিনি মুহসিনদের সৎকর্ম ব্যর্থ হতে দেন না।


আব্দুল্লাহ শহীদ আ: রহমান
১৭ রজব ১৪৩১ হিজরী
৩০ জুন ২০১০ ইং

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০১৭
[2] সূরা ইউসূফের ৩৬ থেকে ৪৯ আয়াত দ্রষ্টব্য