কোনো বস্তুতে স্থায়ীভাবে কল্যাণ থাকা এবং তা বৃদ্ধি হওয়ার নাম তাবাররুক। কাজেই যে বস্তুতে বরকত নেই এবং যে ব্যক্তি বরকতের ক্ষমতা রাখে না, তা থেকে বরকত লাভের আশা করা বৈধ নয়। বরকতের সঠিক অর্থ অনুযায়ী একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনই সমস্ত বরকতের মালিক। তিনিই বরকত নাযিল করেন এবং স্থায়ী করেন। কোনো সৃষ্টির পক্ষে বরকত দান করা অথবা বরকত তৈরী করা সম্ভব নয়। তেমনি কোন মাখলুকের পক্ষে বরকত স্থায়ীভাবে ধরে রাখা বা আটকিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। সুতরাং কোনো স্থান, স্মারকচিহ্ন অথবা জীবিত কিংবা মৃত আওলিয়া থেকে বরকত গ্রহণ করা বৈধ নয়। কেউ যদি এ বিশ্বাস করে যে, কোনো মাখলুক বরকত দিতে সক্ষম, তাহলে এ ধরণের বিশ্বাস শিরক হবে। আর যদি বিশ্বাস করে যে, অমুক স্থান যিয়ারত করলে অথবা স্পর্শ করার কারণে আল্লাহর পক্ষ হতে বরকত লাভ হবে, তাহলে তা সরাসরি শিরক না হলেও শিরকের পথকে উন্মুক্ত করবে এবং পরবর্তীতে শিরকের দিকে নিয়ে যাবে।[1]
কোনো কোনো লোক শাইখ বা পীরদের শরীর, অযুর পানি এবং পাগড়ীসহ অন্যান্য বস্তু থেকে বরকত নেয়ার পক্ষে সাহাবীগণ কর্তৃক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উচ্ছিষ্ট বস্তু থেকে বরকত গ্রহণ করাকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তাদের এ দলীল গ্রহণ সঠিক নয়। কারণ সাহাবীগণ কর্তৃক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীরের লোম, মুখের থুথু এবং শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে বরকত গ্রহণ শুধু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে নির্দিষ্ট ছিল। তাও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাবস্থায়। মৃত্যুর পর নয়।
যদি প্রশ্ন করা হয়, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে খাছ বা নির্দিষ্ট ছিল, এর দলীল কী? উত্তর হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃতুর পর সাহাবীগণ তার ঘর-বাড়ী, আসবাব পত্র এবং তার কবর থেকে বরকত হাসিল করার চেষ্টা করেননি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত স্থানে সালাত আদায় করতেন এবং যেখানে তিনি বসতেন, সেসব স্থানেও তারা বরকতের জন্য গমণ করতেন না। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর সাহাবীদের বরকতের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশী প্রয়োজন ছিল। তা সত্ত্বেও কোনো সাহাবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া কোন জিনিস থেকে বরকত লাভ করার চেষ্টা করেননি। কারণ তারা জানতেন যে, বরকত লাভের ধারাবাহিকতা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর শেষ হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত আবস্থায় তার শরীর থেকে বরকত লাভ করাকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে আওলীয়াদের ব্যবহৃত বস্তু থেকে বরকত লাভ করা বৈধ মনে করা আরও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। কারণ সাহাবীগণ তাদের মধ্যকার সৎ লোক যেমন আবু বকর, উমার এবং অন্যান্য সম্মানিত সাহাবাদের কারও নিকট থেকে বরকত লাভ করেননি। জীবিত সাহাবীদের কাছ থেকেও নয় এবং মৃত সাহাবীদের কাছ থেকেও নয়। তাদের কেউ সালাত আদায় কিংবা দু’আ করার জন্য হেরা পাহাড়েও যেতেন না, যেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অহী নাযিল হতো। তেমনি তারা সালাত পড়া অথবা দু’আ করার জন্য তুর পাহাড়েও যেতেন না, যেখানে মূসা (আ.) এর সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেছেন। যে সমস্ত পাহাড়ের কিছু কিছু স্থানে নবী ও অলীদের অবস্থানের কথা প্রমাণিত আছে, সে সমস্ত স্থানে তারা যেতেন বলেও কোন প্রমাণ নেই।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনাতে সবসময় যে স্থানে সালাত আদায় করতেন, সাহাবীদের কেউ সেখানে গিয়ে তা স্পর্শ করেছেন বা চুম্বন করেছেন বলে প্রমাণিত নয়। এমনি মক্কা বা অন্যান্য কোন স্থানের ক্ষেত্রেও অনুরূপ। সুতরাং যে সমস্ত স্থানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত পা দু’টি দিয়ে হেঁটেছেন, যেখানে তিনি সালাত আদায় করেছেন, উম্মতের জন্য সে সমস্ত স্থান স্পর্শ বা চুম্বন করা যদি বৈধ না হয়, তাহলে অন্য কোন অলীর সালাত বা ঘুমানোর স্থানে বরকতের জন্য স্পর্শ করা বা চুম্বন করা কিভাবে বৈধ হতে পারে? মোট কথা মুসলিম উম্মার আলেম সম্প্রদায় এ ব্যাপারে একমত যে, বরকতের জন্য কোন স্থান স্পর্শ বা চুম্বন করা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরী‘আতের কোনো অংশ নয়।
[1]. তবে হাজরে আসওয়াদের কথা ভিন্ন। কারণ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা মুস্তাহাব। কারণ এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দলীল রয়েছে। শুধু তাই নয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যে কোন সুন্নাত পালনের মাধ্যমে বরকত লাভের আশা করা বৈধ।