হাফেয সুয়ুতী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, পঞ্চাশোর্ধ সাহাবী থেকে হাউযের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন খোলাফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবীদের মধ্য থেকে হাদীছের হাফেযগণও রয়েছেন। তাদের সকলের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি নাযিল হোক। হাফেয সুয়ুতীর কথা এখানেই শেষ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ الْمِسْكِ وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلا يَظْمَأُ أَبَدًا» (بخارى:6579)
‘‘আমার হাওযের প্রশস্ততা হচ্ছে এক মাসের দূরত্বের সমান। এর পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, তার সুঘ্রাণ হবে কসত্মুরীর চেয়েও পবিত্র, তার পেয়ালার সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমান। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।[1]
ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ তার সহীহ গ্রন্থে আনাস ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, একদা রসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে মসজিদে নববীতে বসে ছিলেন। হঠাৎ তার মধ্যে তন্দ্রার ভাব দেখা দিলো। তারপর তিনি হাঁসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা প্রশ্ন করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বললেন, এ মুহূর্তে আমার উপর একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর তিনি পাঠ করলেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম,
﴿إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ (1) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (2) إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ (3)﴾
‘‘নিশ্চয় আমি তোমাকে হাওযে কাওছার প্রদান করেছি। তাই তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কুরবানী করো। নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই লেজকাটা নির্বংশ’’।
অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান কাওছার কী? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তার রসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন,
«هُوَ نَهْرٌ أعطانِيهِ رَبِّي في الجنة عَلَيْهِ خَيْرٌ كَثِيرٌ تَرِدُ عَلَيْهِ أُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
এটি জান্নাতের একটি নহর। আমার রব আমাকে সেটা প্রদান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে প্রচুর কল্যাণ রয়েছে। এটি একটি হাওয, যেখানে কিয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পান পাত্রের সংখ্যা হবে আকাশের তারকাসম। তখন কতক লোককে ফেরেস্তাগণ হাওয থেকে তাড়িয়ে দিবেন। আমি বলবো, হে আমার রব! এরা তো আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলবেন, তুমি জানো না, তোমার পরে এরা কী পরিমাণ নতুন নতুন পথ ও মত অবলম্বন করেছিল’’।
ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আলেমগণ বলেছেন, যারা আল্লাহর দীন থেকে মুরতাদ হয়ে যাবে অথবা দীনের মধ্যে আল্লাহর অপছন্দনীয় কোনো কিছু তৈরি করবে অথবা তার আদেশ ছাড়াই কোনো কিছু তৈরি করবে, সে হাউযে কাউছার থেকে বিতাড়িতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যারা মুসলিমদের জামা‘আতের বিরোধিতা করবে, তাদেরকে আরো কঠোরভাবে তাড়িয়ে দেয়া হবে। খারেজী, রাফেযী এবং মু‘তাযিলাদের বিভিন্ন ফির্কার কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এরা সকলেই রসূলের সুন্নাতকে পরিবর্তন করেছে। এমনি যেসব যুলুম, অন্যায়, সত্যকে বিলুপ্ত করা এবং সত্য পন্থীদেরকে অপদস্ত করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে তাদেরকেও হাউয থেকে তাড়ানো হবে। প্রকাশ্যে কবীরা গুনাহকারী, পাপাচারে লিপ্ত হওয়াকে তুচ্ছ জ্ঞানকারী এবং বিপথগামী ও বিদআতীদেরকেও হাউয থেকে বিতাড়িত করা হবে।
অতঃপর কাউকে প্রথমে বিতাড়িত করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে ক্ষমা করার পর তারা হাউযে কাউছারের নিকটবর্তী হবে। বিশেষ করে তারা যদি আকীদার ক্ষেত্রে পরিবর্তন করে থাকে। ইমাম কুরতুবীর কথা এখানেই শেষ।
সহীহ ও সুস্পষ্ট সুন্নাত দ্বারা হাউয সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও মু‘তাযিলারা হাউয সাব্যস্ত করে না। যারাই হাউয সাব্যস্ত করার বিরোধীতা করবে, তারা বিদআতী বলে গণ্য হবে এবং তারাই হাউয থেকে বিতাড়িত হওয়ার বেশি হকদার।
[1]. বিদ্আতীরা কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর হাউযে কাউছার থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বলেন,
«إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَأَقُولُ إِنَّهُمْ مِنِّي فَيُقَالُ إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِي»
‘‘কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের জন্য হাউযে কাউছারের নিকট উপস্থিত থাকবো। যে ব্যক্তি আমার কাছে আসবে আমি তাকে তা থেকে পান করাবো। আমার হাউজ থেকে যে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না। এমন সময় আমার কাছে একদল লোক আগমন করবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব। তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। আমি বলবো, এরা আমার উম্মত। তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না তারা আপনার পরে কত বিদআত তৈরী করেছিল। আমি বলবো আমার রেখে আসা দীনের মধ্যে যারা পরিবর্তন করেছো তারা এখান থেকে সরে যাও। অতঃপর তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হবে’’। (বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুর রিকাক)