ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الشرك الأصغر - বা ছোট শিরক শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
(২) শব্দের মাধ্যমে ছোট শিরক হয়ে থাকে

যেমন কেউ বললো, ماشاء الله وشئت ‘‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’’। ইমাম আহমাদ ও নাসাঈ কুতাইলা হতে বর্ণনা করেন যে, এক ইয়াহূদী নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল­াম এর কাছে এসে বললোঃ     ‘‘আপনারাও আল্লাহর সাথে শিরক করে থাকেন। কারণ আপনারা বলে থাকেন, ماشاء الله وشئت ‘‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’’। আপনারা আরো বলে থাকেন, والكعبة অর্থাৎ কাবার কসম। রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল­াম তখন সাহাবীদেরকে আদেশ করলেন, তারা যখন কসম করতে চায়, তখন তারা যেন বলে, ورب الكعبة ‘কাবার রবের কসম। আর যেন এ কথা বলে, ماشاء الله ثم شئت আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর আপনি যা চেয়েছেন।

ইমাম নাসাঈ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­াম এর উদ্দেশ্যে বললো ماشاء الله وشئت ‘‘আপনি এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন’’। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, أجعلتنى لله ندا؟ ‘‘তুমি কি আল্লাহর সাথে আমাকে শরীক বানিয়ে ফেললে? বরং তুমি বলো, আল্লাহ একাই যা ইচ্ছা করেছেন, তাই হয়েছে’’।[1]

উপরোক্ত হাদীছ দু’টি এবং এ মর্মে বর্ণিত অন্যান্য হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে, ماشاء الله وشئت ‘‘আপনি এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন বলা এবং অনুরূপ অন্যান্য বাক্য উচ্চারণ করা নিষেধ। যেমন লোকেরা বলে থাকে, لولا الله وأنت আপনি এবং আল্লাহ না থাকলে এমন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, مالي إلا الله وأنت আমার জন্য আল্লাহ এবং আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। কেননা واو দ্বারা একটি বিষয়কে অন্য বিষয়ের উপর আতফ করলে তথা দু’টি শব্দের মধ্যে واو আনয়ন করলে এর দ্বারা দু’টি বস্তুকে সমান করে দেয়া উদ্দেশ্য হয়। আর واو এর মাধ্যমে কোনো বিষয়ে স্রষ্টাকে সৃষ্টির সমান করে দেয়া শিরক। তবে এটি এবং অনুরূপ বিষয় ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং এ ক্ষেত্রে واو এর বদলে ثم দিয়ে আতফ করা আবশ্যক। সুতরাং এভাবে বলা উচিত যে ما شاء الله ثم شئت আল্লাহ যা চান অতঃপর আপনি যা চান, আল্লাহ যা চান অতঃপর অমুক যা চায়, আল্লাহ না থাকলে অতঃপর আপনি না থাকলে, আল্লাহ না থাকলে অতঃপর অমুক না থাকলে, আমার জন্য আল্লাহ অতঃপর আপনি ছাড়া আর কেই নেই। কেননা ثم দ্বারা এক শব্দকে অন্য শব্দের উপর আত্ফ করা হলে সেটা ধারাবাহিকতা ও বিলম্ব অর্থ প্রদান করে। আর বান্দার ইচ্ছা কেবল আল্লাহর ইচ্ছার অনুগামী ও পরেই হয়ে থাকে এবং কেবল আল্লাহর ইচ্ছার পরেই কার্যকরী হয়। এতে করে আল্লাহর ইচ্ছা এবং বান্দার ইচ্ছা বরাবর হয়ে যায় না।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাকবীরের ২৯ আয়াতে বলেন, وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ  اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ‘‘তোমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না’’।

সুতরাং বান্দার ইচ্ছা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার অধীনস্থ। বান্দার যদিও ইচ্ছা রয়েছে, কিন্তু তার ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগামী। বান্দা কোনো কিছুর ইচ্ছাই করতে পারে না, তবে আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তখনই কেবল বান্দার ইচ্ছা কার্যকর হয়। জাবরীয়ারা এ মতের বিরোধিতা করেছে। তারা বলে বান্দার কোনো ইচ্ছা ও স্বাধীনতা নেই।

ঐদিকে কাদারীয়া সম্প্রদায় এবং অন্যান্য লোকেরাও এ মাসআলায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করেছে। কাদারীয়ারা বান্দার জন্য এমন ইচ্ছা সাব্যস্ত করে, যারা আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীত। আল্লাহ তাদের কথার বহু উর্ধ্বে।


[1]. হাদীছটির একাধিক শাওয়াহেদ থাকার কারণে সহীহ। দেখুন: কুররাতুল উয়ুন, পৃষ্ঠা নং- ৩৪৭।