ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শিয়া আকিদার অসারতা তাদের ভ্রান্ত আকিদার পঞ্চম বিষয় ইসলামহাউজ.কম
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং হাসান, হোসাইন ও আলী (রাঃ)-কে অপমান করা:

মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার আরবি (বাংলা) অনুবাদ হল:

“নু‘মানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে এবং তার নিকট সর্বপ্রথম যিনি বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; অতঃপর আলী আ.। আবার শাইখ তুসী ও নু‘মানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশের অন্যতম নিদর্শন হল, তিনি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় সূর্যের গোলকের সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন।”[1]

সুতরাং লক্ষ্য কর হে আমার ভাই! আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন, কিভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমিরুল মুমেনীন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অপমান করছে; আবার মিথ্যা দাবি করছে যে, তারা উভয়ে অচিরেই মাহদী’র নিকট বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন। অতঃপর তারা মাহদী’র উপরও মিথ্যারোপ করে যে, সে নাকি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় দিগম্বর হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। এটা কোন ধর্ম? (আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন)।

অতঃপর শিয়াগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে এইভাবে যে, তিনি বলেছেন:

“যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।”[2]

তোমরা ঐসব আহাম্মকদের প্রতি লক্ষ্য কর, হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মর্যাদায় পৌঁছা কি এতই সহজ? আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‌‘আত বিশ্বাস করি যে, একজন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকারের মহান ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা হতে পারে; কিন্তু তার পক্ষে এমন অবস্থা অর্জন সম্ভব নয় যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্য থেকে কোন একজন নগণ্য সাহাবীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। সুতরাং কিভাবে সে জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। অতঃপর কিভাবেই বা সে তাঁর বড় ভাই হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পিতা আমিরুল মুমেনীন খোলাফায়ে রাশেদীনের চতুর্থ খলিফা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। আর তাদের নির্লজ্জ অপবাদ বা মিথ্যাচার হচ্ছে সর্বযুগের নেতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের শানে; (তারা বলে) তিনি নাকি বলেছেন: যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মর্যাদার সমান (না‘উযুবিল্লাহ)।

সুতরাং হে আল্লাহ! ঐসব খবিসগণ যা দাবি করে, আমরা তা থেকে তোমার নিকট মুক্তি চাই; আর তাদের সকল কর্মকাণ্ড আল্লাহর দায়-দায়িত্বে অর্পণ করছি, যিনি প্রবল শক্তিশালী। لا حول و لا قوة إلا بالله العلي العظيم (মহান আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই)।

কুলাইনী ‘ফুরু‘উল কাফী’ (فروع الكافي) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, যুরারা বলেন:

“যখন আমার কাছে সে সহীফা বা বিশেষ গ্রন্থ দেয়া হলো, তখন দেখলাম যে এটি একটি মোটা গ্রন্থ, যার সম্পর্কে প্রসিদ্ধি আছে যে, এটি প্রথম যুগের গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি গ্রন্থ; অতঃপর তাতে আমি লক্ষ্য করলাম এবং আচমকা দেখতে পেলাম তাতে এমন কিছু রয়েছে, যা মানুষের সামনে বিদ্যমান আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সর্বসম্মত ভাল কর্মকাণ্ডের বিপরীত। আর যখন তার (গ্রন্থটির) সার্বিক অবস্থা এই রকম, তখন আমি তা পাঠ করলাম; এমনকি খারাপ মন, অল্প সংযম ও দুর্বল সিদ্ধান্তসহ আমি তার পাঠ শেষ করলাম এবং পাঠ করতে করতে বললাম: বাতিল। অতঃপর আমি তা নথিভুক্ত করলাম এবং তার নিকট পেশ করলাম। অতঃপর যখন আমি সকাল বেলায় আবূ জাফর আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি ফারায়েযের গ্রন্থটি পাঠ করেছ? জওয়াবে আমি বললাম: হ্যাঁ। অতঃপর তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি যা পাঠ করেছ, তা কেমন মনে হল? জওয়াবে আমি বললাম: বাতিল, এটা কিছুই নয়, এটা জনগণের প্রতিষ্ঠিত মত ও পথের বিপরীত। তিনি আবার বললেন: আল্লাহর শপথ করে বলছি, হে যুরারা! তুমি যা দেখেছ, তা সত্য এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রুতলিপি, যা আলী নিজ হাতে লিখেছে।”[3]

এটা ‘কাফী’ গ্রন্থের বর্ণনাসমূহের মধ্য থেকে একটি অন্যতম বর্ণনা; আর এই ‘কাফী’ (الكافي) গ্রন্থটি শিয়াদের নিকট একটি বড় ধরনের তথ্যবহুল গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।

লক্ষ্য করুন হে আমার ভাই! আমিরুল মুমেনীন আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং সকল সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ‘যা মানুষের সামনে বিদ্যমান আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সর্বসম্মত ভাল কর্মকাণ্ডের বিপরীত’ এমন কিছু সেই গ্রন্থের মধ্যে লেখার যোগসূত্র তৈরি করার চেয়ে জঘন্য অপমান আর হতে পারে কি? অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ) সকল মানুষকে সব সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং ভাল কাজ করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন; কিন্তু নির্জনে গিয়ে সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তার বিপরীত লিখতে বলেন (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মন্দ কাজের নির্দেশ ইত্যাদি); সুতরাং এর চেয়ে অধিক ঘৃণ্য অপবাদ আর কী হতে পারে? অতঃপর লক্ষ্য করুন, ঐসব শিয়াদের ধর্মীয় মতবাদের ব্যাপারে আপনার কী অভিমত, যারা মনে করে যে, প্রকৃত ধর্ম হল ঐ ধর্ম, যা যুরারা মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে দাবি করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা লিখতে বলেছেন; আর সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন, তাতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মন্দ কাজের নির্দেশ সংক্রান্ত বিধানসমূহ রয়েছে। এই ধরনের বিধি-বিধান কি ধর্ম হওয়ার যোগ্যতা রাখে?

আর শিয়াগণ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে বলেন: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ভাষণ দিয়েছেন; অতঃপর তিনি মুখ ফিরালেন, এমতাবস্থায় যে, তার চতুর্দিকে তার পরিবার-পরিজন, বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ও দলীয় লোকজন ছিল; অতঃপর তিনি বলেন:

আমার পূর্ববর্তী প্রশাসকগণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এই ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তন করেছেন। আমি যদি জনগণকে তা পরিত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করি এবং তা রদবদল করি ... তবে আমার সৈনিকগণ আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ...। আর যদি আমি ‘ফাদাক’ অঞ্চলকে ফাতেমার ওয়ারিসদের নিকট ফেরত দেই ...। আর যুলুম-নির্যাতনের বিচারগুলোর সঠিক বিচার করি এবং অন্যায়ভাবে গ্রহণকৃত পুরুষদের অধীনস্থ নারীদেরকে ফেরত নিয়ে এসে তাদেরকে তাদের স্বামীদের নিকট সমর্পণ করি ... আর আমি জনগণকে আল-কুরআনের বিধানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করি; আরও উদ্বুদ্ধ করি সুন্নাহ অনুযায়ী তালাক প্রদান করতে ... আর যদি আমি গোটা জাতিকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তখন তারা আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।[4]

এই বর্ণনাটিও ‘কাফী’ (الكافي) গ্রন্থের বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। মহাবীর সিংহ শার্দূল আসাদুল্লাহ আল-গালিব সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এরূপ ছিলেন, তা কি সত্য হতে পারে; যেমনিভাবে তাদের এই বর্ণনাসমূহ থেকে তার ভীরুতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে যে, তিনি তাঁর থেকে সৈন্যদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতেন এবং যার কারণে তিনি জনগণকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর প্রতি উদ্বুদ্ধ করণকে উপেক্ষা করতেন; বরং তিনি তখন মুসলিমদের ইমাম ও বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য পছন্দ করতেন যে, তারা ঐ পথ ও মতের উপর অবশিষ্ট থাকবে, যার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণকারী প্রশাসকগণ, যারা তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তনকারী[5]। সুতরাং আলী রা. এর ওপর এর চেয়ে অধিক ঘৃণ্য অপবাদ আর কী হতে পারে? আর আমিরুল মুমেনীন আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে ওখানে (তাদের পক্ষ থেকে) এর চেয়ে আর বড় অপমান, নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা হতে পারে কী? অথচ শিয়াগণ তার ব্যাপারে মিথ্যা আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট ছিল মূসার লাঠি এবং সুলাইমানের আংটি; আর তিনি ছিলেন (না‘উযুবিল্লাহ) সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান; সুতরাং আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই (لا حول و لا قوة إلا بالله)।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে আমাদের উত্তম কর্মসমূহের অনুপ্রেরণা দাও এবং আমাদেরকে আমাদের মন্দ কর্মসমূহ থেকে রক্ষা কর।

আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:

“জিবরাইল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অবতরণ করেন এবং তাঁকে বলেন: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনাকে এমন এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে, তাকে আপনার পরে আপনার উম্মত হত্যা করবে; তখন তিনি বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে এবং আমার পরে আমার উম্মত তাকে হত্যা করবে; অতঃপর সে (জিবরাইল) উর্ধ্বে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর পূর্বের মত করে কথা বলল; আর তিনিও পূর্বের মতই বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; অতঃপর জিবরাইল আকাশে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর বলল: হে মুহাম্মদ! আপনার রব আপনাকে সালাম বলেছেন এবং সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার বংশধরের মধ্যে ইমামত, বেলায়াত ও অসী তথা নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমি তাতে রাজি। অতঃপর ফাতেমার নিকট সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ আমাকে তোমার এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; তিনি (ফাতেমা) তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে তোমার পরে তোমার উম্মত হত্যা করবে। তার নিকট আবার সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ তার বংশধরের মধ্যে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমি তাতে রাজি। অতঃপর সে তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে ...; কিন্তু হোসাইন ফাতেমা আ. এবং অন্য কোন মহিলা থেকে দুধ পান করেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার নিকট নিয়ে আসা হত, অতঃপর তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি তার মুখের মধ্যে রাখতেন; অতঃপর সে তার থেকে যা চুষে নিত, তা তার জন্য দুই-তিন দিন পর্যন্ত যথেষ্ট হয়ে যেত।”[6]

এই বর্ণনাটি কি সাইয়্যিদুনা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য অপমানজনক নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক জিবরাইল আ.-এর ভাষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সুসংবাদ দেয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পক্ষ থেকে বলেন: “আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেই”। অনুরূপভাবে তার মাতা সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাও বলেন: “আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেই”। অতঃপর “তিনি তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে, অতঃপর তাকে দুধ পান করান নি।” কোন মা তার সন্তানের প্রতি এমন কথা বলেছেন বা এমন কাজ করেছেন বলে আমরা আদৌ শুনিনি। আর যদি সে সন্তানটি হয় হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মত মহান ব্যক্তিত্ব ও জান্নাতের অধিবাসী যুবকদের নেতা, তবে তাঁর জন্য এটা কি অপমানজনক নয়?

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, যখন আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সুলুল মারা গেল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযায় উপস্থিত হলেন; কিন্তু ওমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে তার কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেন নি, তখন তিনি নীরব থাকলেন; অতঃপর তিনি (ওমর) আবার বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে তার কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেন নি, তখন তিনি তাকে বললেন: তোমার জন্য আফসোস! আমি কী বলেছি তুমি কি তা জান? আমি বলেছি: হে আল্লাহ! তুমি তার পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করে দাও, আর তার কবরকে আগুন দ্বারা ভর্তি করে দাও এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাও।”[7]

শিয়াগণ কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়; যেমন তারা মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিকের জানাযা পড়েছেন[8], কিন্তু তার জানাযায় তার জন্য দো‘আ করেননি, বরং তার জন্য শুধু বদ-দো‘আ করেছেন। আর এই ধরনের কাজ স্পষ্ট নিফাকী চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নিফাকের সম্পর্ক যুক্ত করাটা তাঁর শানে বড় ধরনের অমর্যাদাকর ও অপমানকর কাজ।

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, মুনাফিকদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি মারা গেল; অতঃপর হোসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পায়ে হেঁটে বের হলেন; অতঃপর তার মাওলার (বন্ধু বা প্রভু বা দাস) সাথে তার সাক্ষাৎ হল, তখন হোসাইন আ. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: হে অমুক! তুমি কোথায় যাচ্ছ? তখন সে বলল: আমি এই মুনাফিকের জানাযার নামায পড়া থেকে পলায়ন করছি; অতঃপর হোসাইন আ. তাকে বললেন: আমি চাচ্ছি যে, তুমি আমার ডান পাশে দাঁড়াবে, অতঃপর আমাকে যা বলতে শুনবে, তুমিও তাই বলবে। অতঃপর যখন তার অভিভাবক তাকবির বলল, তখন হোসাইন আ. বললেন: আল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ! তুমি তোমার অমুক বান্দার প্রতি একসাথে (বিচ্ছিন্নভাবে নয়) এক হাজার অভিশাপ দাও; হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাকে তোমার বান্দাগণের মধ্যে ও তোমার রাজ্যে অপমান কর; আর তাকে তোমার জাহান্নামে প্রবেশ করাও এবং তোমার কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাও। কারণ, সে তোমার শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিল, আর তোমার বন্ধুদেরকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং তোমার নবীর পরিবার-পরিজনকে ঘৃণা করেছিল।”[9]

লক্ষ্য করুন, আল্লাহ আপনাকে কল্যাণের তাওফিক দিন; শিয়াগণ কেমন দুঃসাহস করল যে, তারা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের প্রিয় ব্যক্তি বলে দাবি করা সত্ত্বেও তাঁর উপর মিথ্যারোপ করছে এইভাবে যে, তিনি জনৈক ব্যক্তির জানাযার নামায পড়েছেন; অতঃপর তার জন্য বদদো‘আ করেছেন এবং তাকে অভিশাপ দিয়েছেন; অথচ দো‘আ করা এবং মাগফেরাত ও রহমত কামনা করা ব্যতীত সালাত হতে পারে না ...। সুতরাং তারা মিথ্যা ও বানোয়াট পদ্ধতিতে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে নিফাকের সম্পর্ক যুক্ত করে দিল। আর ‘হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মধ্যে নিফাক ও প্রতারণার বাস্তবতা রয়েছে’-এমন ধারণা থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। দীনকে নিফাকের (প্রতারণার) উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফির, মুশরিক, ইহুদী প্রমুখদের পক্ষ থেকে এত বিপদ-মুসিবত ও কষ্টকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিষয়টি যদি এমনই হত, তবে কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হত না এবং হোসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা শাহাদাত বরণ করতেন না।

>
[1] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين) (ফারসি ভাষায়), পৃ. ৩৪৭

[2] মুহাম্মদ মোল্লা আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬

[3] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২

[4] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), রওযা অধ্যায়, পৃ. ২৯

[5] নাউযুবিল্লাহ, কিভাবে তারা আবু বকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে রাসূলের সুন্নাতের বিরোধী সাব্যস্ত করেছে !!! আলী রা. কখনও এ ধরনের কথা বলেন নি, এটা মূলত: শিয়াদের মিথ্যাচার। তারা তাদের মিথ্যা কথা আলী রা. এর নামে চালানোর অপচেষ্টা করেছে। [সম্পাদক]

[6] আল-কুলাইনী, উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ২৯৪

[7] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), জানায়েয অধ্যায়, পৃ. ১৮৮

[8] বস্তুত : রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন উবাই এর ওপর জানাযার সালাত আদায় করেন নি। [সম্পাদক]

[9] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), জানায়েয অধ্যায়, পৃ. ১৮৯