ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শির্ক কী ও কেন? প্রথম পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সর্বত্র (জ্ঞানে ও সাহায্য সহযোগিতায়)* হাজির ও নাজির (বা সবকিছু সরাসরি দেখছেন) মনে করা শির্ক

অনুরূপভাবে কেউ যদি এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বত্র (জ্ঞানে ও সাহায্য সহযোগিতায়) হাজির ও নাজির হওয়ার (বা সবকিছু সরাসরি দেখতে পাওয়ার) বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কোথাও মিলাদ অনুষ্ঠান হলে তিনি তা জানতে ও দেখতে পান এবং সেখানে তাঁর রূহ মুবারক সেখানে উপস্থিত হয়, তা হলে সে ব্যক্তিও মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ে যাবে, কেননা; (জ্ঞানে ও সাহায্য সহযোগিতায়)[1] সর্বত্র হাজির হওয়া আর ও নাজির হওয়া (বা সবকিছু সরাসরি দেখতে পাওয়া) আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত তাঁর কোন সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তিনি তাঁর অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমেই এ দু’টি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছেন। এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলেই তিনি আমাদের যাবতীয় কার্য্যকলাপ দূর থেকে অবলোকন করছেন। যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কেউ দরূদ পাঠ করলে ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাঁকে তা জানিয়ে দেওয়া হয় বলে বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে[2] সেখানে তাঁর ব্যাপারে এমন উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা করার কোনো বৈধতা থাকতে পারে না। কেননা, বাস্তবে তিনি যদি সর্বত্র হাজির ও নাজির হয়েই থাকবেন, তা হলে তাঁর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণকারীর সালাত ও সালাম তাঁর নিকট ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার কোনো অর্থ থাকতে পারে না। কাজেই এতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে এ জাতীয় ধারণা করার কোন বৈধতা শরী‘আতে স্বীকৃত নয়। যারা কারো ব্যাপারে এ জাতীয় শির্কী ধ্যান-ধারণা পোষণ করে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

>

﴿إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ هُمۡ إِلَّا يَخۡرُصُونَ ١١٦ ﴾ [الانعام: ١١٦]

‘‘তারা কেবল অলীক কল্পনারই অনুসরণ করে থাকে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।’’[3] বস্তুত এ সব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহব্বতের মিথ্যা দাবিদারদের তৈরী করা কল্পনা প্রসূত কথা বৈ আর কিছুই নয়।

* যদি কেউ মনে করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বত্র আগমন করেন, তবে তার এ বিশ্বাস করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, যদি বলে যে, তাঁর এ ধরণের বিচরণ করার ক্ষমতা রয়েছে, অথবা বলে যে, আল্লাহ তাকে সেখানে যেখানে সেখানে হাজির হওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন, তবে সেটা হবে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতায় শির্ক। এর মাধ্যমে সে দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে। আর যদি বলে যে, তাঁকে আল্লাহ কখনও কখনও কোনো কোনো মজলিসে হাজির হওয়ার তাওফীক দেন, তবে সেটা হবে বড় ধরণের মিথ্যাচার ও গর্হিত বিশ্বাস, তথা কবীরা গুনাহ। আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরণের বিশ্বাস থেকে হেফাযত রাখুন। [সম্পাদক]

[1] এ অংশটুকু আমি এ জন্যই যোগ করলাম, কারণ; সর্বত্র সত্তাগত হাজির থাকা, আল্লাহর গুণ নয়। আর তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদাও নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা হচ্ছে, আল্লাহ আরশের উপর আছেন, সেখান থেকে তার সকল সৃষ্টিকে দেখছেন ও প্রয়োজনে ঈমানদারদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি কখনও তার সৃষ্টির ভিতরে হাজির হন না। সুতরাং সৃষ্টির সর্বত্র আল্লাহর সত্তাগত উপস্থিতির বিশ্বাস পোষণ করা শির্ক ও কুফরী। এটি হুলুল তথা অবতারবাদী ও ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা সর্বেশ্বরবাদী হিন্দু আকীদা-বিশ্বাস। মুসলিমদের নয়। [সম্পাদক]

[2] যেমন আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبٌوْرًا وَلاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا، وَصَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُم»

“(গৃহে নফল নামায ও কুরআন তেলাওয়াত না করে) তোমাদের গৃহগুলোকে কবরে রূপান্তরিত করো না, (আমার উপর দরূদ পাঠ করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আমার জন্ম বা মৃত্যু অথবা অন্য কোনো দিবসে আমার কবর যিয়ারতে এসে) আমার কবরকে ঈদ বা উৎসবে পরিণত করো না, (তোমরা নিজ অবস্থানে থেকেই) আমার উপর দরূদ পাঠ কর; কেননা তোমরা যেখান থেকেই তা পাঠ করে থাক না কেন, তা আমার কাছে পৌঁছে।” দেখুন : আস-সিজিস্তানী, সুলায়মান ইবনে আস‘আস, সুনানে আবী দাউদ; (...দ্বারুলফিকর : সংস্করণ বিহীন, সন বিহীন), ২/২১৮; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত; ২/৩৬৭; আবুত ত্বাইয়্যিব মুহাম্মদ শামসুল হক ‘আযীমাবাদী, ‘আউনুল মা‘বূদ শরহে সুনানি আবী দাউদ; (বৈরুত : দ্বারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫হি:), ৬/২২।

অপর হাদীসে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

«إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الْأَرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ»

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার এমন কিছু ফেরেশতা রয়েছেন, যারা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ান, আমার উম্মতের মধ্যে কেউ আমার উপর সালাম পাঠ করলে তারা তা আমার নিকট পৌঁছে দেন।’’ দেখুন : আল-বুসতী, মুহাম্মদ ইবনে হিব্বান, সহীহ ইবনে হিব্বান; সম্পাদনা : শু‘আইব আরনাউত, (বৈরুত : মুআস সাসাতুর রিসালাহ, ২য় সংস্করণ, ১৯৯৩ খ্রি.), ৩/১৯৫; আন-নাসাঈ, আহমদ ইবনে শু‘আইব আবু ‘আব্দির রহমান, আস-সুনান; সম্পাদনা : ড. ‘আব্দুল গাফফার সুলাইমান, (বৈরুত: দ্বারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৯৯১খ্রি..), ১/৩৮০; আদ-দারিমী, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্দুর রহমান, সুনানিদ দারিমী; সম্পাদনা : ফাওয়ায আহমদ, (বৈরুত : দ্বারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১ম সংস্করণ, ১৪০৭হি:), ৩/৪০৯; আবী শায়বাহ, আবু বকর ‘আব্দুল্লাহ ইবনে, আল-মুসান্নাফ ; সম্পাদনা : কামাল ইউসুফ, (রিয়াদ : মাকতবাতুর রুশ্দ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৯হি:), ২/২৫৩।

[3]. আল-কুরআন, সূরা আন‘আম : ১১৬।