ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ প্রশ্ন এবং তাঁর উত্তরসমুহ হাফেয বিন আহমাদ আল-হাকামী (রহঃ)
প্রশ্নঃ (১৪০) তাকদীরের প্রথম স্তর অর্থাৎ আল্লাহর ইল্মের (জ্ঞানের) প্রতি ঈমান আনয়নের দলীল কি?

উত্তরঃ তাকদীরের প্রথম স্তর হচ্ছে আল্লাহর ইল্ম তথা সৃষ্টির সকল বিষয় আদি থেকেই তিনি অবগত আছেন-এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ

‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুই জানেন’’। (সূরা হাশরঃ ২২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا

‘‘আর আল্লাহ্ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন’’। (সূরা তালাকঃ ১২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

عَالِمِ الْغَيْبِ لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الْأَرْضِ وَلاَ أَصْغَرُ مِنْ ذَلِكَ وَلاَ أَكْبَرُ

‘‘তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনু পরিমাণ বস্ত্তও তাঁর অগোচরে নয়; না তার চেয়ে ছোট, না বড়’’। (সূরা সাবাঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ

‘‘গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকটে। তিনি ব্যতীত কেউ তা জানে না’’। (সূরা আনআমঃ ৫৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ

‘‘আল্লাহই ভাল জানেন যে, কোথায় স্বীয় রেসালাত প্রেরণ করবেন’’। (সূরা আনআমঃ ১২৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

‘‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথের উপর রয়েছে’’। (সূরা নাহ্লঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ

‘‘আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে অবগত নন?’’ (সূরা আনআমঃ ৫৩)। আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

أَوَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ

‘‘বিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ্ কি সম্যক অবগত নন?’’ (সূরা আনকাবুতঃ ১০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ

‘‘আর যখন তোমার রব ফেরেশতাগণকে বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তারা বললঃ আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে, তারা সেখানে বিবাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি যা পরিজ্ঞ্যাত আছি, তোমরা তা জান না’’। (সূরা বাকারাঃ ৩০)

وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ

‘‘বস্ত্ততঃ তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করবে, যা বাস্তবিকই তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। আর হতে পারে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করবে, যা তোমাদের জন্যে অমঙ্গলজনক। আল্লাহ্ অবগত আছেন আর তোমরা অবগত নও’’। (সূরা বাকারাঃ ২১৬)

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে কি পার্থক্য করা হয়ে গেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। সে বললঃ তাহলে লোকেরা আমল করে কী জন্য? তিনি বললেনঃ

(قَالَ كُلٌّ يَعْمَلُ لِمَا خُلِقَ لَهُ أَوْ لِمَا يُسِّرَ لَهُ)

‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি সে আমলই করবে, যার জন্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে অথবা যা তার জন্যে সহজ করা হয়েছে।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ

(اللَّهُ إِذْ خَلَقَهُمْ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ)

‘‘আল্লাহই যেহেতু তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাই তিনিই ভাল জানেন বড় হলে তারা কি আমল করত’’।[2] সহীহ মুসলিম শরীফে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অথচ তখন তারা তাদের পিতার পৃষ্ঠে ছিল। এমনিভাবে কতিপয় লোককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অথচ তখন তারা তাদের পিতার পৃষ্ঠদেশে ছিল।[3] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ

(إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ)

‘‘কোন ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতবাসীদের আমল করতে থাকে, অথচ সে জাহান্নামী। এমনি কোন ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জাহান্নামীদের আমল করে থাকে, অথচ সে জান্নাতী’’।[4] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

(مَا مِنْكُمْ مِنْ نَفْسٍ إلاَّ وَقَدْ عُلِمَ اللَّهُ مَنْزِلُهَا مِنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلِمَ نَعْمَلُ أَفَلاَ نَتَّكِلُ، قَالَ: لاَ اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ ثُمَّ قَرَأَ ( فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى إِلَى قَوْلِهِ فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى)

‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক নেই, যার ঠিকানা জান্নাতে বা জাহান্নামে তা আল্লাহ্ অবগত নন। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমরা আমল করব কেন? ভাগ্যের লেখার উপর ভরসা করে বসে থাকবো না কেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘না; বরং তোমরা আমল কর। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى

‘‘অতএব, যে দান করে, আল্লাহ ভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্যায়ন করে আমি তাকে সুখের বিষয়ের (জানণাতের) জন্যে সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের (জাহান্নামের) জন্যে সহজ পথ দান করব’’। (সূরা আল-লাইলঃ ৫-১০)[5] এছাড়া আরো হাদীছ রয়েছে।

>

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।

[3] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।

[4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।

[5] . বুখারী, অধ্যায়ঃ তাফসীরুল কুরআন। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।