একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ চিরঞ্জীব নয়। চাই সে যে কেউই হোক না কেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ، وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُوْ الْـجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ»
‘‘ভূ পৃষ্ঠে যা কিছুই রয়েছে তা সবই নশ্বর। যা একদা ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধু থাকবে আপনার প্রতিপালক। যিনি মহিমাময় মহানুভব’’। (রহমান : ২৬-২৭)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْـمَوْتِ»
‘‘সকল জীবকে একদা মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। কেউই সর্বদা বেঁচে থাকবে না’’। (আ’লি ’ইম্রান : ১৮৫)
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও এ মৃত্যু থেকে রেহাই পাননি। তিনিও একদা মৃত্যু বরণ করেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«إِنَّكَ مَيِّتٌ، وَإِنَّهُمْ مَيِّتُوْنَ»
‘‘নিশ্চয়ই আপনি মরণশীল এবং নিশ্চয়ই তারাও মরণশীল। কেউই এ দুনিয়াতে চিরদিন থাকবে না’’। (যুমার : ৩০)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِكَ الْـخُلْدَ، أَفَإِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْـخَالِدُوْنَ»
‘‘আমি আপনার পূর্বের কাউকেই (কোন মানুষকেই) অনন্ত জীবন দেইনি। সুতরাং আপনি যদি মৃত্যু বরণ করেন তাহলে তারাকি চির জীবন এ দুনিয়াতে থাকতে পারবে বলে আশা করে? সবাইকেই একদা মরতে হবে। কেউই চিরঞ্জীব নয়’’। (আম্বিয়া : ৩৪)
তিনি আরো বলেন:
«وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُوْلٌ، قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ، أَفَإِنْ مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ، وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًا، وَسَيَجْزِيْ اللهُ الشَّاكِرِيْنَ»
‘‘মুহাম্মাদ (সা.) একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার রাসূল। এ ছাড়া তিনি অন্য কিছু নন। তাঁর পূর্বেও বহু রাসূল মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মৃত্যু বরণ করেন অথবা তাঁকে হত্যা করা হয় তাহলে তোমরা কি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে তথা কাফির হয়ে যাবে? জেনে রাখো, তোমাদের কেউ কাফির হয়ে গেলে সে আল্লাহ্ তা’আলার এতটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না। অচিরেই আল্লাহ্ তা’আলা কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন’’। (আ’লি ’ইমরান : ১৪৪)
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
مَاتَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَأَبُوْ بَكْرٍ بِالسُّنْحِ، فَقَامَ عُمَرُ يَقُوْلُ: وَاللهِ مَا مَاتَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَتْ: وَقَالَ عُمَرُ: وَاللهِ مَا كَانَ يَقَعُ فِيْ نَفْسِيْ إِلاَّ ذَاكَ، وَلَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ فَلَيَقْطَعَنَّ أَيْدِيَ رِجَالٍ وَأَرْجُلَهُمْ، فَجَاءَ أَبُوْ بَكْرٍ، فَكَشَفَ عَنْ رَسُـوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَبَّلَهُ، قَالَ: بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ طِبْتَ حَيًّا وَمَيِّتًا، وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لاَ يُذِيْقُكَ اللهُ الْـمَوْتَتَيْنِ أَبَدًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَمَّا الْـمَوْتَةُ الَّتِيْ كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا، ثُمَّ خَرَجَ فَقَالَ: أَيُّهَا الْـحَالِفُ عَلَى رِسْلِكَ، فَلَمَّا تَكَلَّمَ أَبُوْ بَكْرٍ جَلَسَ عُمَرُ، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ: أَلاَ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَإِنَّ اللهَ حَيٌّ لاَ يَمُوْتُ، وَقَرَأَ آيَةَ الزُّمَرِ وَآيَةَ آلِ عِمْرَانَ، وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : وَاللهِ لَكَأَنَّ النَّاسَ لَمْ يَعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ أَنْزَلَ هَـذِهِ الْآيَةَ ـ آيَةَ آلِ عِمْرَانَ ـ حَتَّى تَلاَهَا أَبُوْ بَكْرٍ، فَتَلَقَّاهَا مِنْهُ النَّاسُ كُلُّهُمْ، فَمَا أَسْمَعُ بَشَرًا مِنَ النَّاسِ إِلاَّ يَتْلُوْهَا
‘‘রাসূল (সা.) মৃত্যু বরণ করেছেন। অথচ আবু বকর (রা.) সেখানে উপস্থিত নেই। তিনি ছিলেন ‘‘সুনহ’’ নামক এলাকায়। ইতিমধ্যে ’উমর (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন: আল্লাহ্ তা’আলার কসম! রাসূল (সা.) মৃত্যু বরণ করেননি। ’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) বলেন: ’উমর (রা.) বলেছেন: আল্লাহ্ তা’আলার কসম! তখন আমার এতটুকুই বুঝে আসছিলো। আমি ধারণা করতাম, তিনি ঘুমিয়ে আছেন এবং অবশ্যই তিনি ঘুম থেকে উঠে সবার হাত-পা কেটে দিবেন। ইতিমধ্যে আবু বকর (রা.) এসে রাসূল (সা.) এর চেহারা উন্মোচন করে তাতে একটি চুমো দিলেন এবং বললেন: আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক! আপনি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়ই পূত-পবিত্র। সে সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! আপনাকে আল্লাহ্ তা’আলা দু’ বার মৃত্যু দিবেন না। শুধু সে মৃত্যুই আপনি বরণ করেছেন যা আপনার জন্য বরাদ্দ ছিলো। অতঃপর আবু বকর (রা.) রাসূল (সা.) এর নিকট থেকে বের হয়ে বললেন: হে কসমকারী! তুমি একটু শান্ত হও। আবু বকর (রা.) যখন কথা শুরু করলেন তখন ’উমর (রা.) বসে গেলেন। আবু বকর (রা.) আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা করে বললেন: তোমরা জেনে রাখো, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা.) এর ইবাদাত করতো তার জানা উচিৎ তিনি আর এখন জীবিত নেই। মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাত করতো তার কোন অসুবিধে নেই। তিনি নিশ্চয়ই জীবিত। তিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না। অতঃপর আবু বকর (রা.) যুমার ও আ’লু ’ইম্রানের উপরোক্ত আয়াতদ্বয় তিলাওয়াত করেন। আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) বলেন: আল্লাহ্ তা’আলার কসম! পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিলো যে, কেউ বুঝতে পারেনি আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত আয়াত ইতিপূর্বে নাযিল করেছেন। অতএব আবু বকর (রা.) তা তিলাওয়াত করার পরপরই সবাই তা গ্রহণ করে নেয় এবং তিলাওয়াত করতে শুরু করে’’। (বুখারী, হাদীস ১২৪১, ১২৪২, ৩৬৬৭, ৩৬৬৮, ৪৪৫২, ৪৪৫৩, ৪৪৫৪)
হে আল্লাহ্! আপনি আমাদেরকে সকল ধরনের শির্ক থেকে মুক্ত করুন।