ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ দ্বিতীয় অধ্যায়: সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম ইসলামহাউজ.কম
সাওম পালনকারী জুনূবী (অপবিত্র) অবস্থায় সকাল করলে

মারওয়ান রহ. থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়শা এবং উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা তাকে সংবাদ দিয়েছেন,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُدْرِكُهُ الفَجْرُ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ، وَيَصُومُ»

“নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন।”[1]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাঁর আলোচনায় বলতে শুনেছি যে,

«مَنْ أَدْرَكَهُ الْفَجْرُ جُنُبًا فَلَا يَصُمْ»، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ لِأَبِيهِ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ، فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ وَانْطَلَقْتُ مَعَهُ، حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ وَأُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، فَسَأَلَهُمَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ عَنْ ذَلِكَ، قَالَ: فَكِلْتَاهُمَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ غَيْرِ حُلُمٍ، ثُمَّ يَصُومُ قَالَ: فَانْطَلَقْنَا حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى مَرْوَانَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ مَرْوَانُ: عَزَمْتُ عَلَيْكَ إِلَّا مَا ذَهَبْتَ إِلَى أَبِي هُرَيْرَةَ، فَرَدَدْتَ عَلَيْهِ مَا يَقُولُ: قَالَ: فَجِئْنَا أَبَا هُرَيْرَةَ، وَأَبُو بَكْرٍ حَاضِرُ ذَلِكَ كُلِّهِ، قَالَ: فَذَكَرَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَهُمَا قَالَتَاهُ لَكَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: هُمَا أَعْلَمُ، ثُمَّ رَدَّ أَبُو هُرَيْرَةَ مَا كَانَ يَقُولُ فِي ذَلِكَ إِلَى الْفَضْلِ بْنِ الْعَبَّاسِ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: سَمِعْتُ ذَلِكَ مِنَ الْفَضْلِ، وَلَمْ أَسْمَعْهُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَرَجَعَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَمَّا كَانَ يَقُولُ فِي ذَلِكَ، قُلْتُ لِعَبْدِ الْمَلِكِ: أَقَالَتَا: فِي رَمَضَانَ؟ قَالَ: كَذَلِكَ كَانَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ غَيْرِ حُلُمٍ ثُمَّ يَصُومُ»

“জানাবাত (অপবিত্র) অবস্থায় কারো ভোর হলে তার সাওম হবে না। এরপর এ কথাটি আমি আবদুর রহমান ইবন হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করলাম। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করলেন। তারপর আব্দুর রহমান চললেন। আমিও তাঁর সাথে সাথে চললাম। আমরা ‘আয়েশা এবং উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার নিকট গেলাম। এরপর আব্দুর রহমান তাঁদের উভয়কে এ সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহতিলাম ব্যাতিরেকে ও জানাবাতের অবস্থায় ভোর করতেন এবং সাওম পালন করতেন। এরপর আমরা মারওয়ানের নিকট আসলাম এবং আব্দুর রহমান তার সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলেন। এরপর মারওয়ান বললেন আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি আবু হুরায়রার নিকট যাও এবং তার কথাটি রদ করে দাও। এরপর আমি আবু হুরায়রার নিকট গেলাম। এ সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবদুর রহমানের সাথে ছিলেন। আব্দুর রহমান এ নিয়ে আবু হুরায়রার সঙ্গে আলোচনা করলেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমার নিকট তাঁরা উভয়েই কি এ কথা বলেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তাঁরা উভয়েই এ কথা বলেছেন। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, বস্তুত তাঁরাই সর্বাধিক অবগত। তারপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর এ কথাটিকে ফযল ইবন আব্বাসের প্রতি সম্পর্কিত করে বললেন আমি এ কথাটি ফযলের (ইবন আব্বাস) থেকে শুনেছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ বিষয়ে তাঁর মত পরিবর্তন করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আব্দুল মালিককে জিজ্জাসা করলাম। তারা রমযানের কথা বলেছে কি? তিনিবললেন হ্যাঁ অনুরূপই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহতিলাম ব্যতিরেকেও জানাবাত অবস্থায় ভোর করতেন। এরপর সাওম পালন করতেন।”[2]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ مَرْوَانَ أَرْسَلَهُ إِلَى أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا يَسْأَلُ عَنِ الرَّجُلِ يُصْبِحُ جُنُبًا، أَيَصُومُ؟ فَقَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ، لَا مِنْ حُلُمٍ، ثُمَّ لَا يُفْطِرُ وَلَا يَقْضِي»

“একদা মারওয়ান তাকে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট পাঠালেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য যার জানাবাত অবস্থায় ভোর হলো, সে সাওম পালন করতে পারবে কি? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহতিলাম ব্যতিরেকে স্ত্রী সহবাসের কারণে গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় ভোর হতো। এরপর সাওম ভেঙ্গে ইফতারও করতেন করতেন না এবং সাওমের কাযাও করতেন না”।[3]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَفْتِيهِ، وَهِيَ تَسْمَعُ مِنْ وَرَاءِ الْبَابِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، تُدْرِكُنِي الصَّلَاةُ وَأَنَا جُنُبٌ، أَفَأَصُومُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأَنَا تُدْرِكُنِي الصَّلَاةُ وَأَنَا جُنُبٌ فَأَصُومُ» فَقَالَ: لَسْتَ مِثْلَنَا، يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، فَقَالَ: «وَاللهِ، إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَخْشَاكُمْ لِلَّهِ، وَأَعْلَمَكُمْ بِمَا أَتَّقِي»

“ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলো। এ সময় তিনি দরজার পেছন থেকে কথাগুলো শুনছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জানাবাত অবস্থায় আমার ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায়, এমতাবস্থায় আমি সাওম পালন করতে পারি কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জানাবাত অবস্থায় আমারও ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায় আমি তো সাওম পালন করি। এরপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো আমাদের মতো নন। আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার আশা, আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে সর্বাধিক ভয় করি এবং আমি সর্বাধিক অবগত ঐ বিষয় সম্পর্কে যা থেকে আমার বিরত থাকা আবশ্যক”।[4]

সুলাইমান ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ سَأَلَ أُمَّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، عَنِ الرَّجُلِ يُصْبِحُ جُنُبًا أَيَصُومُ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ غَيْرِ احْتِلَامٍ، ثُمَّ يَصُومُ»

“তিনি উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে জানাবাত অবস্থায় ভোর করলো। সে কি সাওম পালন করবে? তিনি (উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রমযান মাসে ইহতিলাম ছাড়াই স্ত্রী সহবাসের কারণে জানাবাত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভোর হতো, এরপর তিনি সাওম পালন করতেন”।[5]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২৬।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১০।

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১০৯।