ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জামা‘আতে সালাত আদায় [বিধান, ফযীলত, ফায়েদা ও নিয়ম-কানূন] জামা‘আত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ইসলামহাউজ.কম
একবার কোনো ফরয সালাত একাকী আদায় করলে তা দ্বিতীয় বার জামা‘আতের সাথে নফলের নিয়্যাতে আদায় করা যায়:

আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيتُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا؟ قَالَ: قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِيْ؟ قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَلاَ تَقُلْ: إِنِّيْ قَدْ صَلَّيْتُ فَلاَ اُصَلِّيْ».

“তুমি তখন কি করবে? যখন তোমার ওপর এমন সকল আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা সময় মতো সালাত না পড়ে সালাতকে সত্যিকারার্থে নির্জীব করে দিবে। তিনি বলেন: তখন আমি বললাম: আপনি তখন আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বলেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নিবে। অতঃপর তুমি আবার তাদেরকে উক্ত সালাত জামা‘আতে পড়তে দেখলে তা দ্বিতীয়বার পড়ে নিবে যা তোমার জন্য নফল হিসেবেই বিবেচিত হবে। তুমি কখনো এমন বলবে না যে, আমি তো উক্ত সালাত একবার পড়ে ফেলেছি। তাই আর পড়বো না”।[1]

ইয়াযীদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ করতে গিয়েছিলাম। তখন আমি তাঁর সাথে মাস্জিদুল-খাইফে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে যখন তিনি মানুষের দিকে ফিরলেন তখন তিনি দু’ জন ব্যক্তিকে সবার পেছনে মসজিদের এক কোনায় সালাত না পড়ে বসে থাকতে দেখলেন। তখন তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন: এদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসো। অতঃপর তাদেরকে ভয়ার্তাবস্থায় তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদেরকে বললেন: তোমরা আমাদের সাথে সালাত পড়লে না কেন? তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো ইতোপূর্বে নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন তিনি বললেন:

«فَلَا تَفْعَلَا؛ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا، ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ، فَصَلِّيَا مَعَهُمْ ؛ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ».

“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর মসজিদে আসলে সবার সাথে আবার মসজিদে সালাত পড়বে। যা তোমাদের জন্য নফল হবে”।[2]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«لَا تَفْعَلُوا، إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ أَدْرَكَ الْإِمَامَ وَلَمْ يُصَلِّ، فَلْيُصَلِّ مَعَهُ؛ فَإِنَّهَا لَهُ نَافِلَةٌ».

“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমাদের কেউ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর (মসজিদে এসে) আবারো ইমাম সাহেবকে উক্ত সালাত না পড়াবস্থায় পেলে সে যেন তার সাথে আবার সালাতটুকু পড়ে নেয়। যা তার জন্য নফল হবে”।[3]

মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। আর ইতিমধ্যে সালাতের আযান হয়ে গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে গিয়ে সালাত পড়ে আবার ফিরে আসলেন অথচ আমি সেখানেই বসে ছিলাম। তাঁর সাথে আমি সালাত আদায় করতে যাই নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ قَالَ: بَلَى، وَلَكِنِّي كُنْتُ قَدْ صَلَّيْتُ فِي أَهْلِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا جِئْتَ فَصَلِّ مَعَ النَّاسِ، وَاِنْ كُنْتَ قَدْ صَلَّيْتَ».

“তুমি কেন আমাদের সাথে সালাত পড়লে না? তুমি কি মুসলমান নও? মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি নিশ্চয় মুসলিম। তবে আমি ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি যখন (মসজিদে) আসবে তখন মানুষের সাথে সালাত পড়বে। যদিও ইতোপূর্বে সালাত পড়ে থাকো”।[4]

উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِيْ أُمَرَاءُ، تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا، حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا، فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! أُصَلِّي مَعَهُمْ؟ قَالَ: نَعَمْ، اِنْ شِئْتَ».

“অচিরেই আমার মৃত্যুর পর তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে যাদেরকে দুনিয়ার প্রচুর ঝামেলাময় কর্মকান্ড সময় মতো সালাত পড়া থেকে বিরত রাখবে। এমনকি কখনো কখনো সালাতের সঠিক সময়টুকুও পার হয়ে যাবে। তখন তোমরা সময় মতো সালাত পড়ে নিবে। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি পরবর্তীতে উক্ত সালাত তাদের সাথে আবার পড়বো? হ্যাঁ। তোমার যদি মনে চায়”।[5]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«كَيْفَ بِكُمْ إِذَا أَتَتْ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ لِغَيْرِ مِيقَاتِهَا؟!، قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي؟ إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلْ صَلَاتَكَ مَعَهُمْ سُبْحَةً».

“তোমরা তখন কি করবে? যখন তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা অসময়ে সালাত পড়বে। আমি বললাম: তখন আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নাও এবং তাদের সাথে যে সালাত পড়বে তা হবে তোমার জন্য নফল”।[6]

>
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৮।

[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৫৮।

[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৫।

[4] নাসাঈ, হাদীস নং ৮৫৭।

[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩।

[6] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩।