ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
বেলা ফুরাবার আগে আধুনিক সভ্যতা না উৎকর্ষ? ইসলামহাউজ.কম
আধুনিক সভ্যতা না উৎকর্ষ?

জীবন ও বাসনার এক পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার এই আধুনিক সভ্যতা। আধুনিকতার সঙ্গে ‘সভ্যতা’ শব্দ যোগ করে এই পাগলা ঘোড়াকে করা হয়েছে আরও বেগবান। এই যোগসূত্রের ভিত্তি ও সত্যতা কতটুকু- দিন দিন এই প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছে। আধুনিকতার চক্রে সভ্যতা তো ক্রমশঃ পিষ্ট হচ্ছে। তবে আধুনিকতার সঙ্গে সভ্যতার এই সখ্যতা কেন? হ্যাঁ, মানুষ জীবন উপভোগের পর্যাপ্ত রসদ ও উপকরণ পেয়েছে- একথা সত্য। কিন্তু সেটা খুব জোর ‘উৎকর্ষ’ নামে অভিহিত হতে পারে। কিন্তু আধুনিকতার নামে আজ যা চলছে সেটাকে কোনোভাবেই ‘সভ্যতা’ হিসেবে মেনে নেয়া যায় না।

অবশ্য ভদ্রতা নামে একটা শব্দ আছে। অভিধানে এর একটা সৌজন্যমূলক অর্থ থাকলেও মানুষের ব্যবহারিক অভিধান কখনও কখনও বইয়ের অভিধান অতিক্রম করে যায়। তাই কখনও কখনও ‘ইংরেজ ভদ্রলোকটা কাজটা করেছে’ বললে, একজন নষ্ট লোকের চিত্রই সামনে ভেসে ওঠে। বৃটিশদের অত্যাচার ও দুরাচার যখন সীমা ছাড়িয়েছিল, তখন ভারত উপমহাদেশের মানুষ ‘ভদ্র’ শব্দটাকে অভিধানের খাঁচা থেকে খুলে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছে। চামড়া বাঁচানোর জন্য মুখে ভদ্রলোক বললেও, ভেতরে ভেতরে বলেছে ‘পিশাচ’। সম্ভবত আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত হতে গিয়ে ‘সভ্যতা’ শব্দটিও একই ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে। নইলে আজ আধুনিক সভ্যতার নামে যা হচ্ছে, তাতে তো খোদ শব্দটাই পারলে বিলাপ করে! ভাগ্যিস, শব্দের অর্থ আছে- প্রাণ নেই!

আধুনিক সভ্যতার একটা নজির দেখুন!

‘বাড়ির ভাড়াটিয়া কলেজপড়ুয়া ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করার অভিযোগে প্রিতম ও শুভ নামে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কাফরুল থানার ইব্রাহিমপুরে। ৪৯২/২ নম্বর ইব্রাহিমপুরের বাসা থেকে প্রিতমকে আটক করার পর তার দেয়া তথ্যানুযায়ী পাশের বাড়ি থেকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী শুভ (১৯)-কে পুলিশ আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইব্রাহিমপুরের নুরুল ইসলামের পাঁচতলা বাড়ির নিচের তলায় গত পাঁচ বছর যাবৎ ভাড়াটিয়া হিসেবে বাস করছে কলেজছাত্রীর পরিবার। বাড়ির মালিক নুরুল ইসলামের ছোট ছেলে প্রিতমের সঙ্গে অনেক দিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল কলেজছাত্র শুভর। মহল্লার বড় ভাই হওয়ার সুবাদে অবাধে তার যাতায়াত ছিল প্রিতমদের বাড়িতে। আসা-যাওয়ার মধ্যে কলেজছাত্রীকে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসতে শুরু করে সে। একতরফা ভালোবাসা ভালো না লাগায় সুচতুর শুভ আদাজল খেয়ে নামে ওই কলেজছাত্রীর পেছনে। প্রিতমের মাধ্যমে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলেও তাতে রাজি হয়নি কলেজছাত্রী।

এ নিয়ে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে শুভ। কলেজছাত্রীর অহঙ্কার ধুলায় মিশিয়ে দিতে তার নগ্নদৃশ্য ধারণ করার ফন্দি আঁটে। এ জন্য একদিন প্রিতমের বাড়িতে গিয়ে পুরো ঘটনাটি তাকে জানায় শুভ। কৌতূহলী স্কুলছাত্র পাশের বাড়ির বড় ভাই’র কথায় রাজি হয়ে যায়। পরে শুভর কথায় রাজি হয়ে কলেজছাত্রীর বাথরুমের একাংশ ফুটো করার পর ভিডিও ধারণ করা যায় এমন আধুনিক একটি মোবাইলফোন ছিদ্রের মাঝখানে বসিয়ে পাশের একটি কক্ষ থেকে দু’জনে তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। কিন্তু বিধি বাম। বাথরুমে তখন কলেজছাত্রী না গিয়ে প্রবেশ করেছিলেন তার মা। অকস্মাৎ ছিদ্রের মধ্যে ক্যামেরা মোবাইলটি তার চোখে পড়ে। এ সময় মেয়ের কথা মাথায় রেখে কলেজছাত্রীর মা বিষয়টি প্রিতমের মা’কে জানান। কিন্তু ততক্ষণে প্রিতমের বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায় শুভ। প্রিতমকে তার পরিবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনাটি শুভর কারসাজিতে হয়েছে বলে পরিবারের কাছে স্বীকার করে।

এই হলো নারীর বিপদ। নারীকে কেন্দ্র করেই শয়তান তার বাজার গরম করে রাখতে চায়। একজন নারী তার ঘরেও নিরাপদ নয়! তবেই বুঝুন, নারীর পেছনে আধুনিক সভ্যতার অকল্যাণ কত ভয়ঙ্কর! সব জায়গায় নারী দায়ী নয়, কিন্তু এটা স্বীকার না করে উপায় নেই যে পৃথিবীতে অধিকাংশ ভালো কাজে পেছন থেকে প্রেরণা দেন নারী, তেমনি অসংখ্য অপরাধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজেও অন্তরালে থাকে নারীর প্রতি নিষিদ্ধ টানের উপস্থিতি। শয়তান এ সুযোগই গ্রহণ করে নারীকে কাজে লাগায় মানুষকে বিপথগামী করতে। আল্লাহ তাই সতর্ক করেছেন,

﴿ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١ ﴾ [المائ‍دة: ٩١]

‘শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৯১)

বইয়ের সব ঘটনার শিক্ষার শেষ কথা হলো, এমন হাজারো শিক্ষার উপাদানসমৃদ্ধ ঘটনা প্রতিদিনই আমাদের সমাজের চারপাশে ঘটে চলেছে। যতদিন আমাদের মা-বোনেরা তাদের সম্মান-সতীত্ব ও নিরাপত্তার রক্ষা কবচ পর্দার গুরুত্ব না বুঝবেন, যতদিন তারা ইসলামের শালীন ও মার্জিত জীবন বেছে না নেবেন, তাদের দুর্দশা বাড়া বৈ কমবে না।