পানির পাত্রের পরিচয়:

ক. শাব্দিক পরিচিতি:

পানির পাত্রকে আরবীতে (الآنية) ‘আনিয়া’ বলা হয়। যে শব্দটি (إناء) ‘ইনা’ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ আহার কিংবা পান-পাত্র। শব্দটির বহুবচনের বহুবচন হলো (أوان)। আরবী ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ হচ্ছে, (ظرف) ‘যারফ’ ও (ماعون) মা‘উন।

ফকীহগণ শাব্দিক অর্থেই এটাকে ব্যবহার করেছেন।

খ- পাত্রের প্রকারভেদ:

সত্তাগত দিক থেকে পাত্র কয়েক প্রকার। যথাঃ

১- সোনা ও রূপার পাত্র।

২- রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র।

৩- কাঁচের পাত্র।

৪- মূল্যবান ধাতুর পাত্র।

৫- চামড়ার পাত্র।

৬- হাড়ের পাত্র।

৭- উপরে বর্ণিত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য পাত্র। যেমন, চীনামাটির পাত্র, কাঠের পাত্র, পিতলের পাত্র ও সাধারণ পাত্র।

গ- পাত্রের শর‘ঈ হুকুম:

সোনা, রূপা ও রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য সব পাত্র ব্যবহার করা বৈধ; চাই তা মূল্যবান হোক বা অল্প মূল্যের হোক। কেননা হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«َلاَ تَشْرَبُوا فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، وَلاَ تَأْكُلُوا فِي صِحَافِهَا، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَنَا فِي الآخِرَةِ».

“তোমরা সোনা ও রুপা পাত্রে পান করবে না। আর এসব পাত্রে খানা খাবে না। এগুলো দুনিয়াতে তাদের (অমুসলিমের) জন্য আর আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাতে।”[1]

যে সব পাত্র ব্যবহার করা হারাম তা অন্যান্য উদ্দেশ্যে গ্রহণ করাও হারাম। যেমন, বাদ্যযন্ত্র গানের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান। কেননা হাদীসটি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

তবে এটা জানা আবশ্যক যে, সন্দেহের কারণে কোনো পাত্র অপবিত্র হবে না; যতক্ষণ নিশ্চিতভাবে অপবিত্র হওয়া জানা না যাবে। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।

ঘ- অমুসলিমের পাত্র:

অমুসলিমদের পাত্র বলতে বুঝানো হচ্ছে:

১- আহলে কিতাবীদের পাত্র।

২- মুশরিকদের পাত্র।

এসব পাত্রের শর‘ঈ হুকুম হলো এগুলো অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হলে তা ব্যবহার করা জায়েয। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।

অমুসলিমের জামা কাপড় পবিত্র, যতক্ষণ তা অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হয়।
যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ সেসব মারা গেলে সেসবের মৃত চামড়া দাবাগাত (প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার উপযোগী) করলে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে।
আর যেসব প্রাণীর জীবিত অবস্থায় কোনো অংশ বিচ্ছেদ করা হয়েছে তা মৃত-প্রাণীর মতোই অপবিত্র। তবে জীবিত অবস্থায় পশম, পালক, চুল ও লোম নেওয়া হলে তা পবিত্র।
খাবার ও পানীয় পাত্র ঢেকে রাখা সুন্নত। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

»وَأَوْكِ سِقَاءَكَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ، وَخَمِّرْ إِنَاءَكَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ، وَلَوْ تَعْرُضُ عَلَيْهِ شَيْئًا«.

“তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ বন্ধ রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। সামান্য কিছু দিয়ে হলেও তার উপর দিয়ে রেখে দাও।”[2]

[1] সহীহ বুখারী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ৫১১০; সহীহ মুসলিম, লিবাস ওয়ায-যিনা, হাদীস নং ২০৬৭; তিরমিযী, আশরিবা, হাদীস নং ১৮৭৮; নাসাঈ, আয-যিনা, হাদীস নং ৫৩০১; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭২৩; ইবন মাজাহ, আশরিবা, হাদীস নং ৩৪১৪; আহমদ, ৫/৩৯৭; আদ-দারেমী, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২১৩০।

[2] সহীহ বুখারী, বাদউল খালক, হাদীস নং ৩১০৬; সহীহ মুসলিম, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২০১২; তিরমিযী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ১৮১২; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭৩১; আহমদ, ৩/৩০৬; মালেক, আল-জামে‘, হাদীস নং ১৭২৭।