১. অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার। এতে মেয়েটির সম্মানহানি ও চরিত্র বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো ব্যাপারটি সন্তান হত্যা পর্যন্ত পৌঁছোয়।

২. বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু স্বামীর সম্মানও বিনষ্ট হয়। তার পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। তার বংশ পরিচয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, সন্তানটি তারই বলে বিবেচিত হয়, অথচ সন্তানটি মূলতঃ তার নয়।

যেন এমন ঘটনা ঘটতেই না পারে সে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামী অনুপস্থিত এমন মহিলার বিছানায় বসা ব্যক্তির এক ভয়ানক রূপ চিত্রায়ন করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَثَلُ الَّذِيْ يَجْلِسُ عَلَى فِرَاشِ الْـمُغِيْبَةِ مَثَلُ الَّذِيْ يَنْهَشُهُ أَسْوَدُ مِنْ أَسَاوِدِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ»

“যে ব্যক্তি স্বামী অনুপস্থিত এমন কোনো মহিলার বিছানায় বসে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে কিয়ামতের দিন কোনো বিষাক্ত সাপ দংশন করে”।[1]

৩. যে কোনো প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু প্রতিবেশীর অধিকারও বিনষ্ট হয় এবং তাকে চরম কষ্ট দেওয়া হয়।

মিক্বদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَأَنْ يَّزْنِيَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِيَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ»

“সাধারণ দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করা এতো ভয়ঙ্কর নয় যতো ভয়ঙ্কর নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা”।[2]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«لاَ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ»

“যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।[3]

৪. যে প্রতিবেশী সালাতের জন্য অথবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা জিহাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার।

বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«حُرْمَةُ نِسَاءِ الْـمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ كَحُرْمَةِ أُمَّهَاتِهِمْ ، وَمَا مِنْ رَجُلٍ مِنَ الْقَاعِدِيْنَ يَخْلُفُ رَجُلاً مِنَ الْـمُجَاهِدِيْنَ فِيْ أَهِلِهِ فَيَخُوْنُهُ فِيْهِمْ إِلاَّ وُقِفَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، فَيَأْخُذُ مِنْ عَمَلِهِ مَا شَاءَ ، فَمَا ظَنُّكُمْ؟»

“মুজাহিদদের স্ত্রীদের সম্মান যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা লোকদের নিকট তাদের মায়েদের সম্মানের মতো। কোনো ঘরে বসে থাকা ব্যক্তি যদি কোনো মুজাহিদ পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আমানতের খিয়ানত করে তখন তাকে মুজাহিদ ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ের জন্য কিয়ামতের দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। অতঃপর মুজাহিদ ব্যক্তি ঘরে বসা ব্যক্তির আমল থেকে যা মনে চায় নিয়ে নিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কি এমন ধারণা হয় যে, তাকে এতটুকু সুযোগ দেওয়ার পরও সে এ প্রয়োজনের দিনে ওর সব আমল না নিয়ে ওর জন্য একটুখানি রেখে দিবে?”[4]

৫. আত্মীয়া মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু আত্মীয়তার বন্ধনও বিনষ্ট করা হয়।

৬. মাহরাম বা এগানা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে চিরতরের জন্য হারাম) মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু মাহরামের অধিকারও বিনষ্ট করা হয়।

৭. বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্যই যে, তার উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তো তার স্ত্রীই রয়েছে। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।

৮. বুড়ো ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্যই যে, তার উত্তেজনা তো তেমন আর উগ্র নয়। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلـَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ»

“তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি এবং অহঙ্কারী গরীব”।[5]

৯. মর্যাদাপূর্ণ মাস, স্থান ও সময়ের ব্যভিচার। এতে উপরন্তু উক্ত মাস, স্থান ও সময়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয়।

কোনো ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে এবং তা কেউ না জানলে অথবা বিচারকের নিকট তা না পৌঁছলে তার উচিৎ হবে যে, সে তা লুকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট কায়মনোবাক্যে খাঁটি তাওবা করে নিবে। অতঃপর বেশি বেশি নেক আমল করবে এবং খারাপ জায়গা ও সাথী থেকে দূরে থাকবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥﴾ [الشورا: ٢٥]

“তিনিই (আল্লাহ তা‘আলা) তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সমূহ পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা করো তাও তিনি জানেন”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২৫]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى»

“তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো যা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তা‘আলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের তথা প্রশাসনের নিকট প্রকাশ করে দিবে তার ওপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার বিধান প্রয়োগ করবোই”।[6]

উক্ত কারণেই মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ করেন নি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বললেন, হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। কারণ, এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَتَى رَسُوْلَ اللهِ e رَجُلٌ مِنَ الـْمُسْلِمِيْنَ، وَهُوَ فِيْ الـْمَسْجِدِ، فَنَادَاهُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَتَنَحَّى تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، حَتَّى ثَنَّى ذَلِكَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا شَهِدَ عَلَى نَفْسِهِ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ رَسُوْلُ اللهِ e فَقَالَ: أَبِكَ جُنُوْنٌ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: فَهَلْ أُحْصِنْتَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ e: اِذْهَبُوْا بِهِ فَارْجُمُوْهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক মুসলিম আসলো। তখনো তিনি মসজিদে। অতঃপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডেকে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি কোনো রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা বরাবর এসে আবারো বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো তার প্রতি কোনো রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। এমন কি সে উক্ত স্বীকারোক্তি চার চার বার করলো। যখন সে নিজের ওপর ব্যভিচারের সাক্ষ্য চার চার বার দিয়েছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি পাগল? সে বললো, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি বিবাহিত? সে বললো: জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা একে নিয়ে যাও এবং রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করো”।[7]

বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন,

«وَيْحَكَ! اِرْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللهَ وَتُبْ إلَيْهِ»

“আহা! তুমি ফিরে যাও। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা চাও এবং তাঁর নিকট তাওবা করে নাও”।[8]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَمَّا أَتَى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَبِيِّ e قَالَ لَهُ: لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ ، قَالَ: لاَ يَا رَسُوْلَ اللهِ!»

“যখন মায়িয ইবন মা’লিক রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলো তখন তিনি তাকে বললেন, হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। সে বললো, না, হে আল্লাহর রাসূল!”[9]

তবে বিচারকের নিকট ব্যাপারটি (সাক্ষ্য সবুতের মাধ্যমে) পৌঁছলে অবশ্যই তাকে বিচার করতে হবে। তখন আর কারোর ক্ষমার ও সুপারিশের কোনো সুযোগ থাকে না।

এ কারণেই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবন উমাইয়াহকে চোরের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে তাকে বললেন,

«هَلاَّ كَانَ ذَلِكَ قَبْلَ أَنْ تَأْتِيَنِيْ بِهِ؟!»

“আমার নিকট আসার পূর্বেই কেন তা করলে না”।[10]

তেমনিভাবে উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈকা কুরাশী চুন্নি মহিলার জন্য সুপারিশ করতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অত্যন্ত রাগতস্বরে বললেন,

«يَا أُسَامَةُ! أَتَشْفَعُ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ ؟!»

“হে উসামা! তুমি কি আল্লাহ তা‘আলার দণ্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করতে আসলে?!”[11]

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«تَعَافَوْا الْـحُدُوْدَ فِيْمَا بَيْنَكُمْ ، فَمَا بَلَغَنِيْ مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَب»

“তোমরা দণ্ডবিধি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো একে অপরকে ক্ষমা করো। কারণ, আমার নিকট এর কোনো একটি পৌঁছলে তা প্রয়োগ করা আমার ওপর আবশ্যক হয়ে যাবে”।[12]

এ কথা মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র তিনটি পদ্ধতিতেই কারোর ওপর ব্যভিচারের দোষ প্রমাণিত হয়। যা নিম্নরূপ:

১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারাক্তি করলে। কারণ, জুহাইনী মহিলা ও উনাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর রজমকৃতা মহিলা ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি একবারই করেছিলো। অন্য দিকে মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চার চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিলেন। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদীসটির বর্ণনাসমূহ মুযতারিব তথা এক কথার নয়। কোনো কোন বর্ণনায় চার চার বারের কথা। কোনো কোন বর্ণনায় তিন তিন বারের কথা। আবার কোনো কোন বর্ণনায় দু’ দু’ বারের কথারও উল্লেখ রয়েছে।

তবুও চার চারবার স্বীকারোক্তি নেওয়াই সর্বোত্তম। কারণ, হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। যা বার বার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইসলামী দণ্ডবিধি যে কোনো যুক্তিসঙ্গত সনেদহ কিংবা অজুহাতের কারণে রহিত হয় এবং যা উমার, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস এবং অন্যন্য সাহাবীগণ থেকেও বর্ণিত। আল্লামা ইবনুল মুনযির রহ. এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যেরও দাবি করেছেন। তেমনিভাবে চার চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারীকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করারও সুযোগ দেওয়া হয়। যা একান্তভাবেই কাম্য।

তবে স্বীকারাক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট উল্লেখ এবং দণ্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির ওপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে নেয় তা হলে তার কথাই তখন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তেমনিভাবে স্বীকারকারী জ্ঞানসম্পন্নও হতে হবে।

২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার চার জন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে, তারা সত্যিকারার্থেই ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গমকর্ম স্বচক্ষে দেখেছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّٰتِي يَأۡتِينَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مِن نِّسَآئِكُمۡ فَٱسۡتَشۡهِدُواْ عَلَيۡهِنَّ أَرۡبَعَةٗ مِّنكُمۡۖ﴾ [النساء: ١٥]

“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার চার জন সাক্ষী সংগ্রহ করো”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫]

৩. কোনো মহিলা গর্ভবতী হলে; অথচ তার কোনো স্বামী নেই।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তার যুগে এমন একটি বিচারে রজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যে কোনো মহিলার ওপর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে, গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষণের কারণেও। এমনকি মেয়েটি গভীর নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তার সঙ্গে উক্ত ব্যভিচার কর্মটি সংঘটিত হতে পারে। তাই উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর যুগেই শেষোক্ত দু’টি অজুহাতে দু’ জন মহিলাকে শাস্তি দেন নি। তবে কোনো মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়; অথচ তার কোনো স্বামী নেই এবং সে এমন কোনো যুক্তিসঙ্গত অজুহাতও দেখাচেছ না যার দরুন দণ্ডবিধি রহিত হয় তখন তার ওপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা তাঁর এক সুদীর্ঘ খুৎবায় বলেন,

«وَإِنَّ الرَّجْمَ حَقٌّ فِيْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى عَلَى مَنْ زَنَى ، إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبْلُ أَوِ الْاِعْتِرَافُ»

“নিশ্চয় রজম আল্লাহ তা‘আলার বিধানে এমন পুরুষ ও মহিলার জন্যই নির্ধারিত যারা ব্যভিচার করেছে; অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সাথে সম্মুখ পথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয় জনই তখন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ মিলে যায় অথবা মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়”।[13]

>
[1] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ২৪০৫

[2] আহমদ: ৬/৮; সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস ২৪০৪

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯৭

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭

[6] হাকিম: ৪/২৭২

[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১

[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯৫

[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮২৪

[10] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৯৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৪৪; নাসাঈ: ৮/৬৯; আহমদ ৬/৪৬৬; হাকিম ৪/৩৮০; ইবনুল জারূদ, হাদীস নং ৮২৮

[11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৮৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৭৩; তিরমিযী, হাদীস ১৪৩০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৯৫

[12] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৭৬

[13] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১; তিরমিযী, হাদীস ১৪৩২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪১৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬০১