৯০: আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا﴾ “আর তারা যখন নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল, তখন যদি তারা আপনার কাছে আসত, অতঃপর আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তওবাহ কবূলকারী এবং মেহেরবানরূপে পেত” (নিসা ৬৪)। উক্ত আয়াত কি প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর কাছ থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করা যাবে?

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদনের বিষয়টি তাঁর জীবিত অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট; তাঁর মৃত্যুর পরে এটি প্রযোজ্য নয়। একটি সহীহ হাদীসেও প্রমাণিত হয় নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁর কাছ থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দো‘আ এবং ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যদি বেঁচে থাকি, তাহলে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দো‘আ করব (বুখারী, নং ৫৬৬৬)। এই হাদীসটি উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের বিষয়টি তাঁর জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট; মৃত্যুর পরে নয়।

পরিশেষে বলব, চার ইমাম এবং তাঁদের অনুসারীদের বক্তব্যের আলোকে তাঁদের আক্বীদা সংক্ষিপ্তাকারে সংকলন করা হলো। তাঁদের এই আক্বীদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিক-নির্দেশনার সাথে হুবহু মিলে যায়। সুতরাং হে মুসলিম ভাই ও বোন! আপনি সত্যকে আঁকড়ে ধরুন, এ পথে মানুষকে আহ্বান করুন এবং যাবতীয় শির্ক ও তার উপকরণ থেকে তাদেরকে সতর্ক করুন। সাবধান থাকবেন, যেন নিম্নোক্ত হাদীসটির আওতায় আপনি না পড়ে যান, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ»

“ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন আমার উম্মতের কিছু লোক মুশরিকদের সাথে যোগ না দিবে এবং যতদিন আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তি পূজা না করবে” (হাদীসটির সনদ সহীহ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছেন, যেন তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর কবরকে দো‘আ করা, সাহায্য প্রার্থনা করা এবং সুপারিশ চাওয়ার স্থান হিসাবে গ্রহণ না করা হয়; যেমনিভাবে কিছু কিছু মূর্খ লোক তাদের নবী-রাসূলের কবরের নিকট করে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

«اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»

“হে আল্লাহ! আপনি আমার কবরকে এমন পূজনীয় বস্তুতে পরিণত করবেন না, যার ইবাদত করা হয়। ঐ সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ্‌র ক্রোধ প্রচণ্ড হয়েছে, যারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করেছে” (মুওয়াত্বা)। চার ইমাম যে হক্বের অনুসরণ করেছেন, তার পরিপন্থী যঈফ এবং মিথ্যা হাদীসসমূহ থেকে হুশিয়ার থাকবেন।

মহান আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল সাহাবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন!