কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত দশম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

মাসজিদে নাববী যিয়ারত শরিয়াতসম্মত ও মুসতাহাব আমলের অন্তর্ভুক্ত। এ মাসজিদ হচ্ছে তিনটি মাসজিদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে দ্বিতীয়, যে তিনটি মাসজিদে সলাত আদায় এবং ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে সফর করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী (সা.) বলেছেন:

لَا تَشُدُّوا الرِّحَالَ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِي هَذَا وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى

তোমরা তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন স্থানে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) সফর করবে না। আমার এ মাসজিদ (মাসজিদ নববী), মাসজিদ হারাম এবং মাসজিদ আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাসের মাসজিদ)।[1]

আবূ হুরায়রা (রা.) হতে আরও বর্ণিত, নাবী (সা.) বলেন:

صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ

আমার এ মাসজিদে একটি সলাত আদায় করা মাসজিদে হারাম ছাড়া অন্য সকল মাসজিদের তুলনায় এক হাযার গুণ সলাত অপেক্ষা উত্তম।[2]

আর ইমাম আহমাদ আব্দুল্লাহ বিন যুবায়রের হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন:

وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ صَلَاةٍ فِي هَذَا

মাসজিদে হারামে এক সলাত আদায় করা এ মাসজিদে (মদীনার মাসজিদে নাববীতে) একশত সলাত আদায় করা অপেক্ষা উত্তম।[3]

আর নাবী (সা.)-এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি: এ মসজিদে (মাসজিদে নাববীতে) এক সলাত আদায় করা কা‘বার মাসজিদ ছাড়া অন্য সকল মাসজিদের তুলনায় এক হাযার গুণ সলাত অপেক্ষা উত্তম।[4]

আর আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) বলেন:

مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي

আমার ঘর এবং মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বার আমার হাওযে কাওসারে অবস্থিত হবে।[5]

হাজী বা অন্যান্য লোকের জন্য হাজ্জ কার্য সম্পাদন করার আগে হোক কিংবা পরে হোক নাবী (সা.)-এর মাসজিদ যিয়ারত করা এবং সেখানে সলাত আদায় করা সুন্নাত। তবে এ মসজিদ যিয়ারত করা হাজ্জে কবুল হওয়ার জন্য শর্তও নয়, হাজ্জের কোন রুকুনও নয় এবং ওয়াজিবও নয়। এমন কি মসজিদ নাববীর যিয়ারত হাজ্জের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

মাসজিদে নাববীর যিয়ারতের সুন্নাতী পদ্ধতি হলো যে, মাসজিদে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা রাখবে এবং এ দু‘আগুলি পাঠ করবে:

بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم

[বিসমিল্লাহি, ওয়াস্‌সলাতু ওয়াস্‌সালামু আলা রসূলিল্লাহ্। আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনূবী, ওয়াফ্তাহলী আব্‌ওয়াবা রহমাতিকা। আউযু বিল্লাহিল আযীম, ওয়াবি ওয়াজ্‌হিহিল কারীম, ওয়াসুলত্ব-নিহিল ক্বদীম, মিনাশশাইত্ব-নির্ র-জীম]

আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি, আর সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আমার গুনাসমূহ ক্ষমা করে দাও এবং আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলি খুলে দাও। আমি মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করছি, তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর অনাদি রাজত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান হতে।[6]

অতঃপর দু’রাক‘আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সলাত আদায় করবে। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

إِذَا دَخَلَ أحَدُكُمُ المَسْجِدَ ، فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ

যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে তখন দু’রাক‘আত সলাত আদায় না করা পর্যন্ত যেন না বসে।[7]

আরো কা‘ব বিন মালিক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সা.) (তাবূক যুদ্ধের) সফর থেকে ফিরে মদীনায় পদার্পণ করলেন। আর তিনি যখনই সফর থেকে আসতেন প্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাক‘আত সলাত আদায় করতেন।[8]

আর জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা মদীনায় ফিরলে তিনি বলেন: মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক‘আত সলাত আদায় কর।[9]

আর সহজসাধ্য হলে রাওযায় (নাবী (সা.)-এর ঘর এবং মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানকে রাওযা বলা হয়,[10] কিন্তু বিদ‘আতীরা নাবী (সা.)-এর কবরকে রাওযা বলে থাকে, যা স্পষ্ট ভুল পরিভাষা) সলাত আদায় করা উচিত; কারণ, এ স্থানের ফযীলত রয়েছে। আর যদি তা সহজসাধ্য না হয় তাহলে মসজিদের যে কোন স্থানে সলাত আদায় করে নিবে। আর ইহা একা একা সলাত আদায়ের সময় করবে, কিন্তু জামা‘আতে সলাত আদায়ের সময় প্রথম কাতারে সলাত আদায়ের জন্য সচেষ্ট হবে; কারণ, জামা‘আতের সলাতই উত্তম।

এর দলীল নাবী (সা.) এর বাণী:

خيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أوَّلُهَا

পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথম কাতার।[11]

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إلاَّ أنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاسْتَهَمُوا

লোকেরা যদি জানত যে, আযানে এবং প্রথম কাতারে কী ফযীলত আছে, অতঃপর তাতে কুর‘আ (লটারী) করা ছাড়া যদি সুযোগ না পেত তাহলে তারা অবশ্যই কুর‘আ করে তা হাসিল করার প্রয়াস চালাত।[12]

>
[1]. সহীহ মুসলিম ১৩৯৭।

[2]. সহীহ বুখারী ১১৯০ ও সহীহ মুসলিম ১৩৯৪, তিরমিযী ৩২৫

[3]. সহীহ: মুসনাদে আহমাদ ১৬১১৭।

[4]. সহীহ মুসলিম ১৩৯৪।

[5]. সহীহ বুখারী ১১৯৬, তিরমিযী ৩৯১৫, সহীহ মুসলিম ১৩৯১।

[6]. সহীহ: ইবনে মাজাহ ৭৭১, আবূ দাউদ ৪৬৬।

[7]. সহীহ বুখারী ৪৪৪ ও সহীহ মুসলিম ৭১৪।

[8]. সহীহ বুখারী ৪৪১৮ ও সহীহ মুসলিম ২৭৬৯।

[9]. সহীহ বুখারী ২৬০৪।

[10]. সহীহ বুখারী ১১৯৫ ও সহীহ মুসলিম ১৩৯০, তিরমিযী ৩৯১৬।

[11]. সহীহ মুসলিম ৪৪০

[12]. সহীহ বুখারী ৬১৫ ও সহীহ মুসলিম ৪৩৭