কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত সপ্তম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

প্রথম দিনের কার্যাবলী, তা হচ্ছে ৮ যিলহাজ্জ

১। হাজীগণ নিজ নিজ স্থান থেকে হাজ্জের ইহরাম বাঁধবে: তা এভাবে যে, সর্বপ্রথম গোসল করবে, শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং পুরুষরা সেলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরবে।

তারপর বলবে: “লাব্বাইক হাজ্জান” অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনার নিকট হাজির হয়েছি। অতঃপর অধিক পরিমানে তালবিয়া পাঠ করবে।

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ

[লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারীকা লাকা]

তোমার নিকট আমি হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ ! আমি হাজির হয়েছি, আমি হাজির হয়েছি, তোমার কোন অংশীদার নেই। আমি হাজির হয়েছি, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামাত এবং রাজত্ব তোমারই। তোমার কোন অংশী নেই।[1]

২। তারপর মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এবং সেখানে ৯ যিলহাজ্জ সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবে। সেখানে যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর সলাত নিজ নিজ সময়ে কসর করে আদায় করবে। [তবে দু’ওয়াক্তের সলাত একত্রে জমা করে আদায় করবে না]

দ্বিতীয় দিনের কার্যাবলী তা হচ্ছে ৯ যিলহাজ্জ

১। নয় যিলহাজ্জ সূর্য উদয় হওয়ার পর আরাফার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সেখানে গিয়ে যুহর ও আসর সলাত কসর (দুই-দুই রাক‘আত) এবং অগ্রীম একত্রিত করে আদায় করবে। আর সম্ভব হলে সূর্য মাথার উপর থেকে গড়ার পূর্ব পর্যন্ত নামেরাহ্ নামক স্থানে (যেখানে বর্তমান আরাফার মাসজিদ অবস্থিত) অবস্থান করবেন।

২। সলাত আদায়ের পর থেকে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন করে কিবলামুখী হয়ে যিকির ও দু‘আয় মনোনিবেশ করবেন।

৩। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এবং সেখানে গিয়ে মাগরিব তিন রাক‘আত এবং ইশার সলাত দুই রাক‘আত আদায় করবে। তারপর সেখানে ফজর পর্যন্ত রাত্রি যাপন করবে।

৪। ফজরের সময় হওয়ার পর ফজর সলাত আদায় করবে। অতঃপর পুরোপুরি পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত যিকির ও দু‘আয় ব্যস্ত থাকবে।

৫। সূর্য উদীত হওয়ার পূর্বেই মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবে।

তৃতীয় দিনের কার্যাবলী তা হচ্ছে ১০ যিলহাজ্জ ঈদের দিন

১। মিনা পৌঁছে জামরা আক্বাবায় যাবে। অতঃপর সেখানে পরপর সাতটি কংকর মারবে এবং প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে।

২। কুরবানী থাকলে নিজ কুরবানী করবেন।

৩। মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করবে। এর মাধ্যমে প্রাথমিক হালাল হয়ে যাবে। তারপর নিজ সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করতে পারবে, সুগন্ধি লাগাবে এবং তার জন্য স্ত্রী সম্ভোগ ব্যতীত ইহরামের যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ হালাল হয়ে যাবে।

৪। তারপর মক্কায় এসে বায়তুল্লাহর ‘তাওয়াফে ইফাযাহ’ করবে। ইহাই হচ্ছে হাজ্জের ফরয তাওয়াফ।

অতঃপর হাজ্জে তামাত্তুকারী হলে হাজ্জের জন্য সাফা ও মারওয়ার সাঈ করবে।

অনুরূপ কোন ব্যক্তি যদি হাজ্জে কিরান বা ইফরাদ করে কিন্তু তাওয়াফে কুদূমের পরে সাঈ না করে থাকে তাহলে তার সাঈ সম্পূর্ণ করবে। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের হালাল (সম্পূর্ণরূপে হালাল) হয়ে যাবে। এরপরে ইহরামের সমস্ত নিষিদ্ধ কাজ এমনকি স্ত্রীও হালাল হয়ে যাবে।

৫। তারপর হাজীগণ মিনায় ফিরে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে ১১ই যিলহাজ্জের রাত্রীযাপন করবেন।

চতুর্থ দিনের কার্যাবলী তা হচ্ছে ১১ই যিলহাজ্জ

১। মাথার উপর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিনটি জামরাকে পাথর মারবেন।[2] কারণ এর পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। সর্বপ্রথম ছোট জামরাকে (যা মিনা থেকে মক্কার দিকে যেতে প্রথমে অবস্থিত এজন্য ইহাকে প্রথম জামরাও বলা হয়) তারপর মধ্য জামরাকে পাথর মারবেন। সর্বশেষে জামরা আকাবাকে (বড় জামরা) পাথর মারবেন।

প্রত্যেকটি জামরায় সাতটি করে পরস্পর পাথর নিক্ষেপ করবে এবং প্রত্যেকটি পাথর মারার সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। আর প্রথম জামরা এবং মধ্য জামরায় পাথর নিক্ষেপ করার পর দাঁড়িয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু‘আ করবে।

২। মিনায় ১২ যিলহাজ্জেও রাত্রীযাপন করবে।

৫ম দিনের কার্যাবলী তা হচ্ছে ১২ যিলহাজ্জ

১। তিনটি জামরায় ১১ই যিলহাজ্জের মতই পাথর মারবেন।

২। আজকের দিনে মিনা থেকে রওনা হতে চাইলে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বেই মিনার এলাকা থেকে বের হয়ে পড়বেন। আর যদি ১৩ যিলহাজ্জ পর্যন্ত বিলম্ব করতে চায় তাহলে মিনায় রাত্রীযাপন করবেন।

ষষ্ঠ দিনের কার্যাবলী তা হচ্ছে ১৩ যিলহাজ্জ

এদিনের কাজগুলি ঐসব হাজীর জন্য, যারা মিনায় বিলম্ব করবে, তারা নিম্নের কাজগুলি সম্পাদন করবে:

১। তিনটি জামরায় ১১ ও ১২ই যিলহাজ্জের মতই পাথর মারবে।

২। এরপরে মিনা থেকে রওনা হয়ে মক্কায় যাবেন। ৩। তারপর সর্বশেষ কাজ মক্কা হতে বিদায় হওয়ার পূর্বে ‘বিদায়ী তাওয়াফ’ করবেন। মহান আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।

>
[1]. সহীহ বুখারী ১৫৪৯, সহীহ মুসলিম ১১৮৪, ইবনে মাজাহ ২৯১৮, তিরমিযী ৮২৫, নাসাঈ ২৭৪৭, সুনানে দারিমী ১৮৪৯।

[2]. সহীহ বুখারী ১৭৪৬।