অনেক মুফাস্সিরের মতে التأويل শব্দটি তাফসীর অর্থেই ব্যবহৃত হয়। ইমাম ইবনে জারীর এবং অনুরূপ অন্যান্য মুফাসসির তাবীল শব্দটি ব্যবহার করেন কালামের ব্যাখ্যা এবং তার অর্থ বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে। চাই সে ব্যাখ্যা কালামের বাহ্যিক অর্থের সাথে সংগতিপূর্ণ হোক কিংবা বাহ্যিক অর্থের বিপরীত হোক। এটি একটি বহু প্রচলিত পরিভাষা। এ তাবীল তাফসীরের মতই। তাবীলের যে অংশ সত্যের অনুরূপ হবে, তা গ্রহণ করা হবে এবং যে অংশ বাতিল হবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ

সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ এবং পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারীরা ছাড়া অন্য কেউ জানে না’’। (সূরা আলে-ইমরান: ৭)

এ আয়াতাংশের মধ্যে দু’টি কিরা‘আত রয়েছে। কোনো কোনো কারী إلا الله এর পরে ওয়াক্ফ করে থাকেন। আবার কোনো কোনো কারী إلا الله এর পরে ওয়াক্ফ করেন না। উভয় কিরাতই সঠিক। প্রথম কিরাআত অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হলো, যে আয়াতগুলো প্রকৃতপক্ষেই মুতাশাবেহা, তার অর্থ কেবল আল্লাহ তা‘আলাই অবগত রয়েছেন। আর দ্বিতীয় কিরাআত অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হলো, মুতাশাবেহা আয়াতগুলোর অর্থ অস্পষ্ট হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। অর্থাৎ এগুলোর অর্থ কেবল জ্ঞানে পরিপক্করাই জানেন; অন্যরা এগুলোর ব্যাখ্যা জানেন না। যারা إلا الله এর পরে ওয়াক্ফ করে থাকেন, তারা তাবীল এবং তাফসীরকে সমার্থবোধক শব্দ হিসাবে গণ্য করেন না। এ কথার অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলের উপর এমন কিছু আয়াতও নাযিল করেছেন, যার অর্থ উম্মতের কোনো লোকই জানে না এবং স্বয়ং রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জানতেন না। সেই সঙ্গে জ্ঞানে যারা পরিপক্ক, মুতাশাবেহার অর্থ সম্পর্কে তাদেরও কোনো ধারণা নেই। তারাও শুধু এটি বলবে, (آَمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا) ‘‘আমরা এসব বিশ্বাস করি। সবই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত’’। (সূরা আলে ইমরান:৭) এটি তো মুমিনদের মধ্যে যারা জ্ঞানে অপরিপক্ক তারাও বলে থাকে।

তবে জ্ঞানে যারা পরিপক্ক, সাধারণ মুমিনদের মধ্য থেকে মুতাশাবেহা আয়াতগুলোর ব্যাপারে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, আমি ঐসব সুবিজ্ঞ আলেমদের অন্তর্ভুক্ত, যারা মুতাশাবেহা আয়াতগুলোর তাবীল সম্পর্কেও অবগত রয়েছেন। তিনি সত্যই বলেছেন। কেননা নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জন্য দুআ করতে গিয়ে বলেছেন,

أللهم فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وعلمه التأويل

‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করো এবং তাকে কুরআনের ব্যাখ্যার জ্ঞান দান করো’’।[1] ইমাম বুখারী এবং অন্যান্য ইমামগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। আর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। অর্থাৎ তার কোনো দু‘আই আল্লাহ তা‘আলা ফিরিয়ে দিতেন না।

প্রখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহুর নিকট কুরআন মজীদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পেশ করেছি। প্রত্যেকটি আয়াত পাঠ করেই আমি থেমেছি এবং তাকে তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। মুতাওয়াতের সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি কুরআনের সমস্ত আয়াতের অর্থের ব্যাপারেই কথা বলেছেন। তিনি কোনো আয়াতের ব্যাপারেই বলেননি যে, এটি মুতাশাবেহার অন্তর্ভুক্ত, যার অর্থ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ জানে না।

আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমামগণ উসূলের কিতাবসমূহে বলেছেন, কুরআন মজীদের সূরাসমূহের শুরুতে উল্লেখিত বিচ্ছিন্ন বর্ণগুলোকে মুতাশাবেহা বলা হয়।

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এটি বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ কুরআনের অধিকাংশ ব্যাখ্যাকার এ অক্ষরগুলোর অর্থ সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ অক্ষরগুলোর অর্থ যদি আলেমদের নিকট পরিচিত থাকে, তাহলে মুতাশাবেহা আয়াতসমূহের অর্থও জানা যাবে। আর যদি এগুলোর অর্থ জানা না যায়, তাহলে এগুলোও মুতাশাবেহার অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া অন্যান্য আয়াতগুলোর অর্থ বোধগম্য। যে আয়াতসমূহের অর্থ আমরা জানতে পারবো, সেগুলোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ

‘‘তিনিই তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে মুহকাম (সুস্পষ্ট), সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো মুতাশাবেহ (অস্পষ্ট)’’। (সূরা আলে-ইমরান:৭) আর সূরার শুরুর দিকে উল্লেখিত অক্ষরগুলো অধিকাংশ আলেমের মতে আলাদা আয়াত নয়।

পরবর্তীকালের ফকীহ এবং মুতাকাল্লিমীনদের পরিভাষায় বিশেষ কোনো নিদর্শন পাওয়া গেলে শব্দকে প্রাধান্যযোগ্য সম্ভাব্য অর্থ থেকে সরিয়ে অপ্রাধান্যযোগ্য সম্ভাব্য অর্থের দিকে নিয়ে যাওয়াকে তাবীল বলা হয়। সংবাদ কিংবা আদেশ-নিষেধ সম্পর্কিত অনেক ব্যাপারেই এ তাবীল নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। সঠিক তাবীল তাই, যা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীলের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়। আর যে তাবীল কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীলের বিরোধী হবে, তা ভ্রান্ত তাবীল বলে গণ্য হবে। যথাস্থানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আবু ইসহাক ইবরাহীম বিন আলী সিরাজী রহিমাহুল্লাহ তার ‘তাবসিরা’ নামক কিতাবে নুসাইর বিন ইয়াহইয়া বালখী আমর বিন ইসমাঈল রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তাকে আল্লাহ তা‘আলার সিফাত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীছগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ আল্লাহ তা‘আলার জন্য সাব্যস্ত করা হলে কি সৃষ্টির সাথে আল্লাহর তাশবীহ হয়ে যায় না? জবাবে তিনি বললেন, এগুলো যেভাবে এসেছে, সেভাবেই রেখে দিবো এবং তাতে বিশ্বাস করবো। আমরা বলবো না যে এগুলোর ধরণ কী?

জেনে রাখা আবশ্যক যে, কুরআন-সুন্নাহর যেসব দলীলের বাহ্যিক দাবি মোতাবেক আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিফাত সাব্যস্ত হয়েছে, তা সাব্যস্ত করা বাতিল বা কুফুরী নয়; বরং যে ব্যক্তি তা সাব্যস্ত করাকে কুফুরী মনে করবে, তার বুঝ এবং ইলমের মধ্যে ত্রুটি রয়েছে। কবি বলেছেন,

وَكَمْ مِنْ عَائِبٍ قَوْلًا صَحِيحًا... وَآفَتُهُ مِنَ الْفَهْمِ السَّقِيمِ

অনেক লোক রয়েছে, যারা সঠিক কথাকে দোষারোপ করে। আসলে দোষিত বুঝশক্তিই এ মসীবতের একমাত্র কারণ। অন্য এক কবি বলেন,

عَلَيَّ نَحْتُ الْقَوَافِي مِنْ مَعادنها... وَمَا عَلَيَّ إذا لَمْ تَفْهَمِ الْبَقَرُ

‘‘আমার উপর আবশ্যক হলো, শব্দমালার ভান্ডার থেকে উচ্চাঙ্গের শব্দ প্রয়োগ করবো। গরুর দল (নির্বোধ লোকেরা) তা যদি না বুঝে, তাতে আমার কিছু করণীয় নেই।[2]

যেক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব হলো সর্বাধিক সত্য, তার বাণী হলো সর্বোত্তম বাণী এবং তা এমন কিতাব, যার আয়াতগুলো মজবুত (সুবিন্যাস্ত) করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে:

أُحْكِمَتْ آَيَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ

এ কিতাব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট হতে, এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাকে বিবৃত (সূরা হুদ:১)।

সেখানে কিভাবে এ কথা বলা যেতে পারে যে, কুরআন মজীদের আয়াতগুলোর মধ্যে এমন কোনো সুস্পষ্ট বর্ণনা নেই, যা থেকে আক্বীদাহ গ্রহণ করা যেতে পারে? তারা আরো বলেছে যে, কুরআনে তাওহীদের কোনো বর্ণনা নেই এবং তাতে আল্লাহ তা‘আলার যথাযথ পবিত্রতাও বর্ণনা করা হয়নি। নাউযুবিল্লাহ। এ হলো কুরআনের অপব্যাখ্যাকারীদের কথার প্রকৃত অবস্থা। তাদের কথার প্রকৃত অর্থ হলো কুরআন ও হাদীছের বাহ্যিক দলীলগুলোর মধ্যে বাতিল অর্থ রয়েছে, নাউযুবিল্লাহ। অথচ সত্য কথা হলো, কুরআন ও হাদীছের দলীলগুলো দ্বারা যা সাব্যস্ত হয়েছে, তাই প্রকৃত সত্য। কুরআনের কোনো দলীলই বাতিল কিছু সাব্যস্ত করেনি। কিন্তু বাতিলপন্থীরা দাবি করে যে, কুরআনের আয়াত ও হাদীছের দলীল এমন বাতিল কথা সাব্যস্ত করে, যা প্রত্যাখ্যান করা জরুরী।

তাদের জবাবে বলা হবে যে, তোমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের দলীলগুলোর বাহ্যিক অর্থের তাবীল করার যে দ্বার উন্মুক্ত করেছো, এর মাধ্যমে তোমাদের ধারণায় কিছু কিছু অস্পষ্ট ক্ষেত্রে তোমাদের মুমিন ভাইদের উপর জয়লাভ করতে পারলেও তোমরা কেবল মুশরিক ও বিদ‘আতীদের জন্য তোমাদের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছো।[3] এ দরজা তোমরা কখনো বন্ধ করতে সক্ষম হবে না। তোমরা যদি কুরআনের দলীল থেকে বোধগম্য অর্থকে শরীয়তের অন্য কোনো দলীল ছাড়াই পরিবর্তন করে ফেলতে চাও, তাহলে তোমাদের কাছে এমন কোনো মূলনীতি আছে কি, যার মাধ্যমে তোমরা নির্ধারণ করে থাকো যে, অমুক আয়াতের তাবীল করা বৈধ এবং অমুক আয়াতের তাবীল করা বৈধ নয়?

এখন তোমরা যদি বলো, বিবেক-বুদ্ধির অকাট্য দলীল যে আয়াতের মর্মার্থ কবুল করে নেয়াকে অসম্ভব মনে করে, আমরা তার তাবীল করবো। আর যদি অসম্ভব মনে না করে, তাহলে আমরা সেই বক্তব্যকে কবুল করে নিবো, তাহলে তোমাদেরকে বলা হবে, কোন্ আকলী দলীলের মাধ্যমে আমরা বিবেক-বুদ্ধির অকাট্য দলীলকে ওজন করবো? কেননা বাতেনী সম্প্রদায়ের ইমাম কিরমিতের মতে বিবেক-বুদ্ধির অকাট্য দলীল শরীয়াতের বাহ্যিক হুকুম-আহকাম ও বিধি-বিধান বাতিল করে দেয়, দার্শনিকরা মনে করে বিবেক-বুদ্ধির অকাট্য দলীল মানুষের দেহের পুনরুত্থানকে বাতিল করে, মুতাযেলারা মনে করে বিবেক-বুদ্ধির অকাট্য দলীল মোতাবেক আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। এমনি তাদের বিবেক-বুদ্ধি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ইলম, কালাম এবং রহমতকে অস্বীকার করে। বিবেক-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে আল্লাহ তা‘আলার সিফাত সংক্রান্ত আয়াতগুলোর তাবীল করাকে ওয়াজিব মনে করে, তাদের সমস্ত কথা এ সংক্ষিপ্ত কিতাবে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কালামের তাবীল করতে গেলে দু’টি বড় ধরণের সমস্যায় পড়তে হবে।

(১) অনেক দীর্ঘ আলোচনা করা ব্যতীত আমরা কুরআন ও সুন্নাহর কোনো কিছুই সাব্যস্ত করতে পারবো না। এভাবে দীর্ঘ আলোচনা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে যে, বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে তা সাব্যস্ত করা সম্ভব কি না? আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে মতভেদকারী প্রত্যেক দলই দাবি করে যে, তাদের মাযহাবই বিবেক-বুদ্ধির দলীল দ্বারা সমর্থিত। এতে করে দ্বীনের মূলনীতির বিষয়ে লোকেরা দিশেহারা হবে, যা আকীদার মাসআলাসমূহে সম্পূর্ণ নিষেধ।

(২) আল্লাহর বাণীর তাবীল করা হলে গায়েবী বিষয়সমূহে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব সংবাদ দিয়েছেন অন্তর থেকে সেসব বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস উঠে যাবে। ফলে অনেকেই দৃঢ়তার সাথে এ বিশ্বাস করবে না যে, এখানে বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য। ঐদিকে তাবীলগুলো তো বিভিন্ন রকম। এতে করে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে যে সংবাদ দিয়েছেন, তার নির্দেশনা থেকে কুরআন ও সুন্নাহকে দূরে সরিয়ে ফেলা আবশ্যক হবে। النبي শব্দটি الإنباء থেকে গৃহীত। অর্থাৎ সংবাদ প্রদান করা থেকে নেয়া হয়েছে। সুতরাং নাবীর কাজ হলো সংবাদ প্রদান করা। ঐদিকে কুরআনে রয়েছে মহা সংবাদ। তাবীলকারীরা কুরআন ও সুন্নাহর দলীলগুলো কেবল সমর্থন স্বরূপ উল্লেখ করে থাকে; স্বতন্ত্র দলীল হিসাবে উল্লেখ করে না। কুরআন ও সুন্নাহর দলীলগুলো তাদের দাবি মোতাবেক হলে তারা বলে বিবেক-বুদ্ধি এটি সমর্থন করে এবং তারা উহা গ্রহণ করে নেয়। আর কুরআন-সুন্নাহর দলীল তাদের বিবেক-বুদ্ধির খেলাফ হলে তারা শরীয়তের দলীলগুলোর তাবীল করে। এতে করে নাস্তিকদের দ্বার উন্মুক্ত হয়। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে এর কুফল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

[1]. ছহীহ: আহমাদ, ত্ববারানী, বাইহাক্বী, ছহীহ ইবনে হিববান।

[2]. ইমাম ইবনে আবীল ইয্ রহিমাহুল্লাহ এখানে সৃষ্টির সিফাতের সাথে তাশবীহ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় যারা উহাকে অস্বীকার করেছে, তাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

[3]. আশায়েরা, মুতাযেলা এবং মাতুরীদিরা আল্লাহ তা‘আলার নাম ও সিফাতগুলোকে তাবীলের মাধ্যমে বিদ‘আতীদের জন্য কুফুরী ও নাস্তিক্যবাদের দরজা খুলে দিয়েছে। যদিও তারা মনে করেছে যে, তারা তাদের আকলী যুক্তির মাধ্যমে কিছু কিছু সাধারণ মুমিনদের উপর জয়লাভ করেছে। মাতুরীদি ও আশায়েরাগণ যখন আরশের উপর আল্লাহর সমুন্নত হওয়ার তাবীল করেছে, তখন দার্শনিকগণ ও বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেছে যে, তোমরা কেন বলছো যে, তোমাদের তাবীল সঠিক এবং আমাদের তাবীল সঠিক নয়? শত শত দলীল থাকা সত্ত্বেও তোমরা সৃষ্টির উপর আল্লাহ তা‘আলার সমুন্নত হওয়ার তাবীল করছো। আর আমরা রূহের পুনরুত্থানের তাবীল করছি। সুতরাং আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়? তোমরা কুরআনের আয়াতের তাবীল-ব্যাখ্যা করছো, আমরাও তাবীল-ব্যাখ্যা করছি। তোমাদের কাছে অকাট্য আকলী দলীল রয়েছে, আমাদের কাছেও অকাট্য আকলী দলীল রয়েছে।

সুতরাং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কথা হলো, আমাদের কাছে এমন মূলনীতি থাকা আবশ্যক, যা সকলেই মানতে বাধ্য থাকবে। সেটি হলো কুরআনের ব্যাখ্যা কুরআনের মাধ্যমেই করা কিংবা রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের মাধ্যমে উহার ব্যাখ্যা করা। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন। ছাহাবীগণ উহা বুঝে নিয়েছেন। এটিই সালাফে সালেহীনদের নীতি। এ ছাড়া যারাই অন্য পদ্ধতিতে কুরআনের ব্যাখ্যা করতে যাবে, তারা বিদআতী বলে গণ্য হবে। এই বিদআত কখনো কুফুরী, কখনো গোমরাহী এবং কখনো ভুল হিসাবে গণ্য হবে।