জান্নাতীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎ লাভের উপর ঐ ব্যক্তির ঈমান আনয়ন বিশুদ্ধ হবে না, যে কোনো ধারণার বশবর্তী হবে, অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সাক্ষাতের তাবীল করবে বা ভুল ব্যাখ্যা দিবে। কারণ আল্লাহকে দেখার বিষয়টি এবং রবের অন্যান্য গুণাবলীর বিষয়ের ব্যাপারে প্রকৃত কথা হচ্ছে ঐগুলোর কোনোরূপ তাবীল করার অপচেষ্টা না করে যেভাবে এসেছে সেভাবেই অবিকৃতভাবে মেনে নিতে। এটাই হচ্ছে মুসলিমদের দ্বীন। যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وَلَا يَصِحُّ الْإِيمَانُ بِالرُّؤْيَةِ لِأَهْلِ دَارِ السَّلَامِ لِمَنِ اعْتَبَرَهَا مِنْهُمْ بِوَهْمٍ أَوْ تَأَوَّلَهَا بِفَهْمٍ إِذْ كَانَ تَأْوِيلُ الرُّؤْيَةِ، وَتَأْوِيلُ كُلِّ مَعْنًى يُضَافُ إِلَى الرُّبُوبِيَّةِ بِتَرْكِ التَّأْوِيلِ وَلُزُومَ التَّسْلِيمِ وَعَلَيْهِ دِينُ الْمُسْلِمِينَ، وَمَنْ لَمْ يَتَوَقَّ النَّفْيَ وَالتَّشْبِيهَ، زَلَّ وَلَمْ يُصِبِ التَّنْزِيهَ

জান্নাতীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎ লাভের উপর ঐ ব্যক্তির ঈমান আনয়ন বিশুদ্ধ হবে না, যে কোনো ধারণার বশবর্তী হবে, অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সাক্ষাতের তাবীল করবে বা ভুল ব্যাখ্যা দিবে। কারণ আল্লাহকে দেখার বিষয়টি এবং রবের অন্যান্য গুণাবলীর বিষয়ের ব্যাপারে প্রকৃত কথা হচ্ছে ঐগুলোর কোনোরূপ তাবীল করার অপচেষ্টা না করে যেভাবে এসেছে সেভাবেই অবিকৃতভাবে মেনে নিতে। এটাই হচ্ছে মুসলিমদের দ্বীন। যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে।

..............................................................

ব্যাখ্যা: মুতাযেলা এবং তাদের মত অন্যান্য যেসব সম্প্রদায় কিয়ামতের দিন মুমিনদের জন্য আল্লাহর দিদারকে অস্বীকার করে, শাইখ এখানে তাদের প্রতিবাদ করেছেন। সে সঙ্গে যারা আল্লাহকে সৃষ্টির কোনো বিষয়ের সাথে তুলনা করে, তাদেরও প্রতিবাদ করেছেন। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ القمر ليلة البدر»

‘‘তোমরা অচিরেই স্বচক্ষে তোমাদের রবকে দেখতে পাবে। যেমন কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই পূর্ণিমার রাতে তোমরা চন্দ্রকে দেখতে পাও’’।[1]

এখানে তাশবীহ এর জন্য ব্যবহৃত كاف - বর্ণকে মাসদার অথবা মাওসুলের অর্থ প্রদানকারী ما-এর সাথে যুক্ত করে ترون ফেলকে মাসদারের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে ترون ফেলকে الرؤية মাসদারের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে হবে। এতে করে তাশবীহ তথা আল্লাহর দিদারকে পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করা উদ্দেশ্য হবে। এখানে আল্লাহর দিদারকে পূর্ণিমার রাতের মেঘহীন আকাশে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়নি। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সদৃশ আর কিছুই নেই। জোর দিয়ে আল্লাহর প্রকৃত দিদারকে সত্য হিসাবে সাব্যস্ত করা এবং তার দ্বারা রূপকার্থের সন্দেহ দূর করার বিষয়টি এখানে খুবই সুস্পষ্ট। এত সুস্পষ্ট ব্বিরণ আসার পরও যারা সত্য কবুল করা থেকে দূরে থাকে, তাদের নসীবে গোমরাহী ছাড়া আর কিছু জোটবে কি?

এ ধরণের সুস্পষ্ট কথার সুস্পষ্ট অর্থ বাদ দিয়ে যদি অন্য অর্থ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এমন কোনো দলীল খুuঁজ পাওয়া যাবে কি, যার ব্যাপারে আমরা বলতে পারবো যে এটি একটি অকাট্য দলীল, এতে কোনো অস্পষ্টতা নেই? সুতরাং যেখানে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা অচিরেই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রকে দেখতে পাও, সেখানে কিভাবে এ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, তোমরা তোমাদের রবকে সেভাবেই জানতে পারবে, যেভাবে তোমরা পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রকে জানতে পারো? মোট কথা মুতাযেলারা ‘আল্লাহকে দেখা যাবে’ এ কথার ব্যাখ্যায় বলেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে। এ অপব্যাখ্যার পক্ষে তারা কুরআন মজীদের সূরা ফীলের ১নং আয়াতকে দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ

হে নাবী! তুমি কি দেখোনি যে, তোমার প্রতিপালক হসত্মী-অধিপতিদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন? এরূপ অন্যান্য যেসব আয়াতে رأى শব্দ এসেছে, তা দ্বারা দলীল পেশ করে তারা বলে থাকে যে, এসব رأى আফআলে কুলুবের অন্তর্ভুক্ত। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, দেখা কখনো কখনো কপালের চোখ দিয়ে হয়ে থাকে, কখনো কখনো অন্তরের চোখ দিয়ে হয়ে থাকে আবার কখনো স্বপ্নের মাধ্যমেও হয় এবং অন্যান্য অর্থেও দেখা কথাটি ব্যবহৃত হয়। তবে মানুষের সব ধরণের কথার মধ্যেই এমন আলামত থাকে, যা বক্তব্যের একাধিক অর্থের মধ্য থেকে যে কোনো একটি অর্থকে নির্দিষ্ট করে দেয়। আর বক্তার কথার একাধিক অর্থ থেকে কোনো একটি অর্থকে নির্দিষ্টকারী আলামত না থাকলে তার সমস্ত কথাই অস্পষ্ট থেকে যাবে; তার কোনো কথার অর্থই সুষ্পষ্ট হবে না।

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

«إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عيانا كَمَا تَرَوْنَ الشمس في الظهيرة ليس دونها سحاب»

‘‘নিশ্চয়ই তোমরা অচিরেই স্বচক্ষে তোমাদের রবকে দেখতে পাবে। যেমন মেঘহীন আকাশে দুপুর বেলা কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই সূর্য দেখতে পাও’’।[2]

এ সুস্পষ্ট বাণীর চেয়ে অধিক সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে কি? এ সুস্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে কি চোখের দেখা সাব্যস্ত হয়? না কি এর মাধ্যমে অন্তরের দেখা সাব্যস্ত হয়? যার অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলা অন্ধ করে দিয়েছেন, সে ব্যতীত এ রকম দলীল আর কার নিকট অস্পষ্ট থাকতে পারে?

মুতাযেলারা যদি বলে, বিবেক-বুদ্ধির দলীল আমাদেরকে এ তাবীল করতে বাধ্য করেছে। তারা বলেছে, বিবেক ও বোধশক্তির দাবি হলো, আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। এটি বাস্তবায়ন হওয়া অসম্ভব।তাদের কথার জবাব হলো, এটি তোমাদের মুখের দাবি মাত্র। অধিকাংশ বিবেকবান লোক তোমাদের সাথে একমত নয়। বিবেক ও বোধশক্তি আল্লাহর দিদারকে অসম্ভবও মনে করে না। বরং বিবেক-বুদ্ধির কাছে যখন এমন অস্তিত্বশীল স্বয়ং সম্পূর্ণ জিনিস পেশ করা হয়, যা দেখা যায় না, তখন বিবেকের ফায়ছালাতেই তার অস্তিত্ব অসম্ভব বলে সাব্যস্ত হয়।

[1]. মুত্তাফাকুন আলাইহি, ছহীহ বুখারী হা/৫৫৪, ছহীহ মুসলিম হা/৬৩৩, অধ্যায়: কিতাবুল মাসাজিদ।

[2]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৪ ও ছহীহ মুসলিম হা/৬৩৩।