ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, (وَلَا إِلَهَ غَيْرُهُ) তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই।[1]

.................

ব্যাখ্যা: এটি হলো সেই কালিমাতুত তাওহীদ, যার দিকে সমস্ত নাবী-রসূলই আহবান করেছেন। যেমন ইতিপূর্বে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। নাকচ করা ও সাব্যস্ত করার মাধ্যমে এ কালেমার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ সাব্যস্ত করা হয়েছে।

নাকচ করা ও সাব্যস্ত করার মাধ্যমে ইবাদতকে কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করার অর্থ হলো কালেমায়ে তাওহীদের প্রথম অংশ দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বাতিল মাবুদের ইবাদতকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং এর দ্বিতীয় অংশ দ্বারা কেবল আল্লাহর জন্যই ইবাদতকে সীমাবদ্ধ ও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

এক কথায় ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্দিষ্ট ও সীমিত করে দেয়া হয়েছে। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের হকদার হওয়ার অযোগ্য। নাকচ করা ও সাব্যস্ত করার মাধ্যমে ইবাদতকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য হওয়ার সন্দেহ বিদূরিত না করে শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত সাব্যস্ত করা হলে সম্ভবত এ ধারণা থেকে যেত যে, অন্যান্য মাবুদের জন্যও ইবাদত করা যেতে পারে। তাই আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৬৩ নং আয়াতে বলেছেন,

﴿وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ﴾

‘‘তোমাদের ইলাহ হলেন এক’’, এ কথা বলার পরপরই বলেছেন,

(لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ)

‘‘সে দয়াবান ও করুণাময় আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই’’ (সূরা আল বাকারা:১৬৩)।

‘‘তোমাদের ইলাহ হলেন এক’’ এ কথা বলাকেই যথেষ্ট মনে করা হলে, কারো অন্তরে এ শয়তানী ধারণা উদয় হওয়ার আশঙ্কা ছিল যে, আমাদের ইলাহ মাত্র এক ঠিকই। কিন্তু আমাদের ইলাহ ব্যতীত অন্যদেরও রয়েছে আরেক ইলাহ। এ সম্ভাব্য শয়তানী ধারণা দূর করার জন্যই আল্লাহর জন্য ইবাদত সাব্যস্ত করে চুপ থাকা হয়নি, বরং সাথে সাথেই বলা হয়েছে,

﴿لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ ﴾

‘‘সেই দয়াবান ও করুণাবান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই’’।

>
[1]. কুরআনের যেসব স্থানে এবং অনুরূপ অর্থে অন্যান্য যেসব আয়াত রয়েছে, ইমাম তাহাবী রহিমাহুল্লাহ সেখান থেকেই তাওহীদে উলুহীয়াত সাব্যস্ত করতে এ কথাটি গ্রহণ করেছেন। সূরা আরাফের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

‘‘নিশ্চয়ই আমি ‘নুহ’কে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই। (তা না করলে) আমি তোমাদের উপর একটি মহা দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি। একই সূরার ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ

‘‘আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদেরই ভাই ‘হুদ’কে। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্য উপাস্য নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,

وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

‘‘আর সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদেরই ভাই ‘সালেহকে। তিনি বললেন: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই’’। (সূরা আরাফ: ৭৩) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,

وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

‘‘আমি মাদায়েনের প্রতি তাদের ভাই ‘শুআইব’কে প্রেরণ করেছি। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্য উপাস্য নেই’’। (সূরা আরাফ: ৮৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاء مِّمَّا تَعْبُدُونَ إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُ سَيَهْدِينِ

‘‘আর যখন ইবরাহীম তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বললেন: তোমরা যাদের পূজা কর, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমার সম্পর্ক তাঁর সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তিনিই আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন’’। (সূরা যুখরুফ: ২৬)