শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ১. তাওহীদের সংজ্ঞা ও তার প্রকারভেদ ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) ১ টি

(১) ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

نَقُولُ فِي تَوْحِيدِ اللَّهِ مُعْتَقِدِينَ بِتَوْفِيقِ اللَّهِ: إِنَّ اللَّهَ وَاحِدٌ لَا شَرِيكَ لَهُ

মহান আল্লাহর তাওফীকের[1] প্রতি অন্তর দিয়ে একান্ত বিশ্বাস রেখে তার তাওহীদ সম্পর্কে আমরা বলছি যে, নিশ্চয় আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তার কোনো শরীক নেই।

ব্যাখ্যা: প্রিয় পাঠক! আপনি জেনে রাখবেন যে, তাওহীদই ছিল নাবী-রসূলদের সর্বপ্রথম দাওয়াত, দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের পথে অগ্রসর হওয়ার সর্বপ্রথম সোপান এবং আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে পৌঁছার জন্য বান্দার সর্বপ্রথম ধাপ। সূরা আল আরাফের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾

‘নিশ্চয় আমি ‘নুহ’কে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই। তা না করলে আমি তোমাদের উপর একটি মহা দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি’। একই সূরার ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾

‘আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদেরই ভাই ‘হুদ’কে। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ﴾

‘আর সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদেরই ভাই ‘সালেহকে। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই’ (সূরা আল আরাফ ৭:৭৩)। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ﴾

‘আমি মাদায়েনের প্রতি তাদের ভাই ‘শুআইব’কে প্রেরণ করেছি। সে বললো হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই’ (সূরা আল আরাফ: ৮৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾

‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি। তার মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো’ (সূরা আন নাহল ১৬:৩৬)।

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»

‘আমাকে মানুষের সাথে ততোক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যতোক্ষণ না তারা এ কথার স্বীকৃতি দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল’।[2]

সুতরাং সঠিক কথা হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্কের উপর সর্বপ্রথম ফরয হলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্য প্রদান করা। স্রষ্টার পরিচয় লাভ করার জন্য কিংবা প্রভুর মারেফত হাসিলের উদ্দেশ্য চিন্তা-গবেষণা করা অথবা স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে দ্বিধা-দ্বন্দে থাকা মোটেই বৈধ নয়।[3]

বরং সালাফদের সকল ইমামের ঐক্যমতে বান্দার উপর সর্বপ্রথম আবশ্যক হলো তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা। তারা আরো ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কোন মানুষ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে উহার সাক্ষ্য প্রদান করে থাকলে, বালেগ হওয়ার পর তাকে ঐ সাক্ষ্য নবায়ন করার আদেশ প্রদান করা হবে না।

বরং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর অথবা ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করার বোধশক্তি অর্জন করার পরপরই তাকে পবিত্রতা অর্জন, ছলাতের মাসায়েল শিক্ষা এবং তা বাস্তবায়ন করার আদেশ দেয়া হবে। কোনো ইমাম এটি আবশ্যক করেননি যে, সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হলে অভিভাবক তার সন্তানকে তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য নবায়ন করার আদেশ করবে। যদিও তার স্বীকারোক্তি প্রদান করা সকল ইমামের ঐকমত্যে মুসলিম হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম ওয়াজিব এবং ছলাত আবশ্যক হওয়ার পূর্বেই তার স্বীকারোক্তি প্রদান করা জরুরী।

কিন্তু সে যেহেতু ছলাত ফরয হওয়ার বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করেছে, তাই এখন তার পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই।

এখানে এমন কিছু মাস‘আলা রয়েছে, যা ফকীহগণ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন প্রকাশ্যে তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করার পূর্বেই কেউ ছ্বলাত কায়েম করল কিংবা ইসলামের অন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করলো, কিন্তু প্রকাশ্যে তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দিলো না, সে মুসলিম হিসাবে গণ্য হবে কি না?

এ ক্ষেত্রে সঠিক কথা হলো ইসলামের কাজগুলো সম্পাদন করার মাধ্যমে সে মুসলিম হিসাবে গণ্য হবে। সুতরাং তাওহীদই হলো এমন বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করে এবং তাওহীদই শেষ বিষয়, যা নিয়ে বান্দা দুনিয়া থেকে বের হয়ে যায়। যেমন নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ»

‘‘দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় যার শেষ বাক্য হবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’।[4]

সুতরাং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বপ্রথম ওয়াজিব এবং এটিই সর্বশেষ ওয়াজিব।

">
তাওহীদের সংজ্ঞা ও তার প্রকারভেদঃ

জানা উচিত, যে তাওহীদসহ আল্লাহ তা‘আলা তার রসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং যাসহ সমস্ত আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে, তার তিনটি অংশ রয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্যসমূহ যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই তা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রথম অংশ হলো তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ: আর তা হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলাকে তার মহান কর্মগুলোতে একক সত্তা হিসাবে বিশ্বাস করা এবং ঈমান রাখা যে, মহান আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা, রিযিকদাতা, সৃষ্টিজগতের সকলের কার্যাবলী পরিচালনাকারী, তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী। এগুলোতে তার কোনো শরীক নেই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, (اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ) ‘আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা’ (সূরা যুমার: ৬২)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি ছয়দিনে আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন, তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। এমন কোন শাফায়াতকারী নেই, যে তার অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে। আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রব। কাজেই তোমরা তারই ইবাদত করো। এরপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সূরা ইউনুস: ৩)।

তাওহীদের এ অংশে আরবের মুর্তিপূজারী মুশরিকরা ঈমান রাখতো, যদিও তাদের অধিকাংশই পুনরুত্থান ও হাশর-নাশর অস্বীকার করত। কিন্তু এ ঈমান তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করায়নি। কারণ তারা আল্লাহর সাথে অন্যান্য বাতিল মাবুদকে শরীক করতো, তার ইবাদতের সাথে মূর্তি ও অন্যান্য বস্তুরও ইবাদত করতো এবং তারা রসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান আনয়ন করেনি।

দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে তাওহীদুল ইবাদাহ: যাকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বলেও নামকরণ করা হয়ে থাকে। আর উলুহিয়্যাহ অর্থই ইবাদত। তাওহীদের এ অংশটিই মুশরিকরা অস্বীকার করেছিল, যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তাদের থেকে উল্লেখ করেছেন, তার নিমেণাক্ত বাণীতে,

وَعَجِبُوا أَنْ جَاءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ

‘আর কাফেররা আশ্চর্য হলো যে, তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন ভীতি প্রদর্শনকারী আসলো এবং কাফেররা বললো, এ তো যাদুকর, মিথ্যাবাদী। সে কি সব ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে দিয়েছে? নিশ্চয় এটি এক আশ্চর্য বিষয়’ (সূরা সোয়াদ: ৪-৫)। অনুরূপ আরও বহু আয়াত রয়েছে।

তাওহীদের এ অংশ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া, তিনিই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য সত্তা হওয়া এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত বাতিল হওয়া সাব্যস্ত করে। এটিই কালেমা লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ এর প্রকৃত অর্থ। কেননা এ কালেমার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلباطِلُ

‘এটা এজন্য যে, আল্লাহই একমাত্র সত্য মাবুদ, তাকে ছাড়া তারা অন্য যাকেই আহবান করে সে সবই বাতিল’। (সূরা আল-হাজ্জ: ৬২)

তৃতীয় অংশ হলো তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত: আর তা হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে এবং রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছহীহ সুন্নাহতে আল্লাহ তা‘আলার যেসব অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণ সেগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করা, সেগুলোকে মহান আল্লাহর জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতে সাব্যস্ত করা এবং কোনো প্রকার বিকৃতি কিংবা অস্বীকার অথবা কোনো প্রকার ধরণ নির্ধারণ বা সাদৃশ্য নির্ণয় ব্যতীত তাতে বিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু বলেন,

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

‘বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমূখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তার সমতুল্য কেউই নেই’। (সূরা আল-ইখলাস: ১-৪) তিনি আরও বলেন,

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِير

‘তার সদৃশ কোনো কিছু নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা আশ-শূরা: ১১)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে অতি সুন্দর নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাকে সেগুলো দিয়েই আহবান করো এবং তার নামের ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত, তাদেরকে বর্জন করো। তারা যা কিছু করছে তার ফল অবশ্যই পাবে’। (সূরা আল-আরাফ: ১৮০)

অনুরূপ আল্লাহ সুবহানাহু সূরা আন-নাহলের ৬০ নং আয়াতে বলেন,

وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

‘আর আল্লাহর জন্যই উত্তম উদাহরণ, আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’’ এ অর্থে আরও অনেক আয়াত রয়েছে। এখানে উত্তম উদাহরণ বলতে এমন সুউচ্চ গুণাগুণ বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনো অপূর্ণতা নেই। আর এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত তথা রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল ছাহাবী, উত্তমভাবে তাদের অনুসরণকারী তাবেঈগণের অভিমত যে, তারা আল্লাহর সিফাত তথা গুণাগুণ সম্পন্ন আয়াত ও হাদীছসমূহকে যেভাবে এসেছে সেভাবে ছেড়ে দিতেন, সেগুলোর অর্থকে মহান আল্লাহ সুবহানাহুর জন্য সদৃশ নির্ধারণ ছাড়াই সাব্যস্ত করতেন।

অনুরূপভাবে তারা মহান আল্লাহ সুবহানাহুকে তার সৃষ্টির কারও সাথে তুলনা করা থেকে পবিত্র করতেন। কিন্তু সেগুলোকে (কুরআন ও হাদীছে) উল্লেখিত গুণাগুণ সম্পন্ন ভাষ্যসমূহকে তারা অর্থহীন করতেন না। আর তারা যা বলেছেন সেটার মাধ্যমেই কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসমূহ একই সূত্রে গাঁথা সম্ভব এবং এর মাধ্যমেই যারা তাদের বিরোধিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে দলীল-প্রমাণাদি উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আর মহান আল্লাহর নিমেণাক্ত বাণীতে তাদেরকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে:

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা আত-তাওবা: ১০০)

মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন তার একান্ত অনুগ্রহে আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহই সাহায্যকারী।

--------------


[1]. শাইখের এ কথার মধ্যে যুক্তিবিদ, দার্শনিক ও কালামশাস্ত্রবিদ এবং আহলে সুন্নাতের আলেমদের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। যুক্তিবিদ ও দার্শনিকরা স্রষ্টার পরিচয় এবং অন্যান্য বিষয় সাব্যস্ত করতে গিয়ে বিবেক-বোধশক্তি ও যুক্তির উপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা আল্লাহর পরিচয় এবং অন্যান্য যেসব গায়েবী বিষয়ের ক্ষেত্রে সঠিক আক্বীদাহ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, তা কেবল আল্লাহ তা‘আলার তাওফীক এবং তার অশেষ অনুগ্রহের কারণেই তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। মূলতঃ তারা অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও আল্লাহর তাওফীকের উপর নির্ভর করেন।

[2]. ছহীহ বুখারী হা/২৫ ও ছহীহ মুসলিম হা/২০, আবূ দাউদ হা/২৬৪১, তিরমিযী হা/২৬০৮।

[3]. মুতাযেলা এবং অন্যান্য বিদ‘আতীদের মতে ঈমান ও গায়েবী বিষয়সমূহের ব্যাপারে চিন্তা-গবেষণা করাই প্রাপ্ত বয়স্কের উপর সর্বপ্রথম আবশ্যক। নাউযুবিল্লাহ

[4]. ছহীহ: সুনানে আবু দাউদ, হা/৩১১৬।