ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনী

সংক্ষিপ্ত জীবনী

তিনি হলেন আবু জা’ফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালামা আল আজদী আত্-ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ। তিনি ছিলেন হাদীছের হাফেয, ইমাম, ফকীহ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং মিশরের হানাফী ফকীহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম। ঐতিহাসিকদের বিশুদ্ধ মতে ২৩৯ হিজরী মোতাবেক ৮৫৩ খৃস্টাব্দে তিনি মিশরের ত্বহা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব-পুরুষগণ যেহেতু ইয়ামানের প্রখ্যাত আজদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাই তাকে আজদী বলা হয়। আর তিনি যেহেতু মিশরের ত্বহা নামক গ্রামে জন্ম-গ্রহণ করেন, তাই তার জন্মস্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তাকে ত্বহাবী বলা হয়।

জন্ম ও শৈশব

তিনি দ্বীনদার ও আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, সে হিসাবে শিশুকাল থেকে তিনি দ্বীনি পরিবেশে প্রতিপালিত হন। শৈশবকাল থেকেই তার মধ্যে ইলম অর্জনের প্রতি অসাধারণ অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত তিনি তার পিতা মুহাম্মাদ ইবনে সালামার নিকট থেকে শাফেঈ ফিকহ এর মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। সে সময় তার মামা আবু ইবরাহীম আল-মুযানী ইমাম শাফেঈর সবচেয়ে বড় শিষ্য এবং শাফেঈ মাযহাবের সবচেয়ে বিচক্ষণ ফকীহ ছিলেন। তার পরিবারের অন্যরাও শাফেঈ ফিক্‌হ এর অনুসারী ছিলেন। তাই তিনিও প্রথম জীবনে শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি শাফেঈ মাযহাব পরিত্যাগ করে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে যান।

শিক্ষালাভ

লেখা-পড়ার বয়সে উপনীত হওয়ার সাথে সাথে তিনি জ্ঞানার্জন শুরু করেন। তার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় তার মামা আবু ইবরাহীম ইসমাঈল ইবনে ইয়াহইয়া আল-মুযানী রহিমাহুল্লাহ এর নিকট। তার মামা আবু ইবরাহীম ছিলেন ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহর ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ এবং ইমাম শাফেঈর ইলমের ভান্ডার। তার মামার নিকট থেকে সর্বপ্রথম জ্ঞান চর্চা শুরু করলেও জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করার মানসে স্বীয় আবাসস্থল থেকে মিশরে আসেন। এ ছাড়াও তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য অনেক জায়গা সফর করেন। যেখানেই কোনো জ্ঞান তাপসের সন্ধান পেতেন, তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং জ্ঞান পিপাসা নিবৃত করতেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ২৬৮ হিজরীতে সিরিয়া গমন করেন। তা ছাড়া বাইতুল মুকাদ্দাস, আসকালান ইত্যাদি স্থানে সফর করে বিভিন্ন মনীষী থেকে হাদীছ ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন।

ফিকহ শাস্ত্রে তার জ্ঞানের সীমা প্রশস্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি অনেক ফিকহী মাস‘আলার ক্ষেত্রে দিশেহারা হতে লাগলেন। তার মামার নিকট এসব মাস‘আলার কোনো সমাধান খুঁজে পেতেন না। এসব মাস‘আলার সমাধানের ক্ষেত্রে তিনি তার মামার আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তিনি দেখলেন, তার মামা শাফেঈ মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এসবের কোনো সমাধান না পেয়ে ইমাম আবু হানীফার ছাত্রদের কিতাবসমূহের প্রতি প্রায়ই ইঙ্গিত করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর মতকে প্রাধান্য দিতে লাগলেন। তার মামা ইসমাঈল আল-মুযানী হানাফী মাযহাবের যেসব মাস‘আলা গ্রহণ করেছেন, তা তিনি مختصر المزني (মুখতাসারুল মুযনী) নামক কিতাবে সংকলন করে করেছেন।

ইমাম ত্বহাবীর মাযহাব পরিবর্তন

প্রথম জীবনে তিনি শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার বোধশক্তি বৃদ্ধি যতই বাড়তে থাকে তার সামনে জ্ঞানার্জন ও গবেষণার দ্বার ততই উন্মুক্ত হতে থাকে। এ সময় হানাফী মাযহাবের প্রতি তার মামার আগ্রহ দেখে ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিতে লাগলেন এবং দ্বীনের মূলনীতি ও শাখা মাস‘আলাসমূহের ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতিগুলো অধ্যায়ন করতে লাগলেন।

বলা হয়ে থাকে যে, তাকে যখন মাযহাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো, জবাবে তিনি বলেছেন, আমার মামা মুযানী হানাফী মাযহাবের গ্রন্থসমূহ অধিক অধ্যায়ন করতেন। তাই আমিও মামার অনুসরণ করে হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলো অধ্যায়ন শুরু করি। আমার কাছে শাফেঈ মাযহাবের তুলনায় হানাফীদের দলীল-প্রমাণগুলো অধিক মজবুত ও অকাট্য মনে হলো। তাই আমি শাফেঈ মাযহাব ছেড়ে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করি।

অতএব ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর মাযহাব সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন করার পর তিনি তার মাযহাব পরিবর্তন করলেন এবং শাফিঈ মাযহাব ছেড়ে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হলেন। তবে হানাফী মাযহাব গ্রহণ তাকে কতিপয় মাস‘আলায় ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর মতের বিরোধিতা করতে এবং অন্যান্য ইমামের মতকে প্রাধান্য দিতে মোটেই বাধা দিতে পারেনি। মূলতঃ তিনি ইমাম আবু হানীফার অন্ধ অনুসরণকারী ছিলেন না। অন্যান্য গবেষক আলিমের মতোই তিনি সুস্পষ্ট দলীলের অনুসরণ এবং ইমামের কথার বিপরীত হলেও তিনি দলীলকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি শুধু মনে করতেন যে, ফিক্বহের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ এর পদ্ধতিই সর্বোত্তম। তাই তিনি এ ধারাতেই চলতেন এবং তাকে অনুসরণ করতেন। এ জন্যই আপনি দেখবেন যে, তার হাদীছের কিতাব: شرح معاني الأثر ‘শারহু মা‘আনিল আছার’ এর অনেক স্থানেই ইমাম আবু হানীফার মতের বিপরীত মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

ইবনে যাওলাক রহিমাহুল্লাহ এর উক্তিতে আমাদের কথার সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, আমি শাইখের পুত্র আবুল হাসান আলী ইবনে আবু জা’ফর ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কাযী আবু উবাইদ হারবুওয়াই এর ফযীলত ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, কাযী আবু উবাইদ আমাকে বিভিন্ন মাস‘আলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। একদা তিনি আমাকে একটি মাস‘আলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তার জবাব দিলাম। আবু উবাইদ হারবুওয়াই বললেন, এটি ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ এর মত নয়। আমি তাকে বললাম, হে কাযী আবু উবাইদ! আবু হানীফা যা বলেছেন, আমিও কি তা বলতে বাধ্য? তিনি বললেন, আমি তো তোমাকে ইমামের মুকাল্লিদ মনে করতাম। আমি বললাম, গোঁড়া ও পক্ষপাতী লোক ব্যতীত অন্য কেউ তাকলীদ করতে পারে না। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, নির্বোধ লোকেরাও তাকলীদ করে। অতঃপর কাযী আবু উবাইদ ও ইমাম ত্বহাবীর মধ্যকার এ বিতর্কটি মিশরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো এবং একটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ হয়ে গেলো। পরবর্তীতে লোকেরা এটি মুখস্ত করে রেখেছে। এ বিতর্কটি ইমাম ত্বহাবীর সত্যান্বেষী হওয়ার প্রমাণ করে।

ইমাম আবু হানীফার মাযহাব গ্রহণ এবং তার মাযহাব বর্জন সম্পর্কে ইবনে খাল্লিকান বলেন, একদা তার মামা মুযানী সম্ভবত রাগান্বিত হয়ে তাকে বললেন, আল্লাহর কসম! তোমার মধ্যে আমি ভালো কিছু দেখছি না। এতে ইমাম ত্বহাবী রাগান্বিত হয়ে মামার মজলিস ত্যাগ করে আবু জা’ফর ইবনে আবু ইমরান হানাফীর দারসে যোগদান করে হানাফী ফিকহে পান্ডিত্য অর্জন করলেন এবং সমসাময়িক আলেমদের চেয়েও উচ্চ আসনে উন্নীত হলেন।


শাইখের আক্বীদা-বিশ্বাস

যদিও তিনি ফিক্বহী মাস‘আলায় হানাফী ছিলেন, কিন্তু আক্বীদার মাস‘আলায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত, আহলে হাদীছ ও আছারের অনুসারী ছিলেন। তবে আক্বীদাহর কতিপয় মাস‘আলায় মুরজি‘আ ফকীহদের মত পোষণ করেছেন। তার রচিত ‘আল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া’ এর মধ্যে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। সকল মাযহাবের মুসলিমদের নিকট আক্বীদা সংক্রান্ত এটি একটি প্রামাণ্য পুস্তিকা। এর রয়েছে ছোট-বড় অনেক ব্যাখ্যা। আমরা সেগুলো থেকে আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক সংকলিত شرح العقيدة الطحاوية নামক ব্যাখ্যা গ্রন্থটি অনুবাদ করছি।


শাইখের উস্তাদগণ

তার মামা মুযানী এবং আবু জা’ফর আল-হানাফী ছাড়াও আরো অনেক উস্তাদের নিকট থেকে তিনি জ্ঞানার্জন করেন। ২৬৮ হিজরীতে সিরিয়ায় তিনি কাযী আবু হাযেমের সাথে সাক্ষাৎ করেন তার ও সেখানকার অন্যান্য আলেমের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বলা হয়েছে যে, তার তিন শতাধিক উস্তাদ ছিল। ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই ইলম অর্জনের প্রতি তার অত্যধিক আগ্রহ ছিল। মিশরের উস্তাদদের নিকট থেকে ইলম অর্জনের পাশাপাশি সেসময় বিভিন্ন ইসলামী অঞ্চল থেকে মিশরে কোনো আলেমের আগমনের সংবাদ শুনলেই তিনি তার সার্বক্ষণিক শিষ্যত্ব গ্রহণ করতেন এবং তার ইলমী ভান্ডারের সাথে অন্যান্য আলেমদের ইলম একত্রিত করতেন। তার উস্তাদদের মধ্যে রয়েছেন,

(১) হাদীছের ইমাম আহমাদ ইবনে শুআইব ইবনে আলী আন্ নাসাঈ (মৃত: ৩০৩ হি:)

(২) নির্ভরযোগ্য বিশিষ্ট আলেম আহমাদ ইবনে আবু ইমরান আল-কাযী (মৃত: ২৮০ হি:)

(৩) ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ইবনে ইউনুস আল-বাগদাদী (মৃত: ৩০৪ হি:)

(৪) তার মামা প্রখ্যাত ফকীহ ইসমাঈল ইবনে ইয়াহইয়া আল-মুযানী (মৃত: ২৬০ হি:)

(৫) ইমাম শাফেঈর প্রসিদ্ধ ছাত্র বাহার ইবনে নসর আল-খাওলানী (মৃত: ২৬৭ হি:)

ইমাম ত্বহাবীর ছাত্রগণ

ইমাম ত্বহাবী তার যুগে ইলমের বিভিন্ন শাখায় পান্ডিত্য অর্জনে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেন। বিভিন্ন মাস‘আলার তাহকীক (বিশ্লেষণ) ও দলীলের সুক্ষ্ম মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাই তার ইলমের ভান্ডার থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য বিভিন্ন ইসলামী অঞ্চল থেকে ছাত্রগণ দলে দলে এসে তার মজলিসে ভিড় জমাতে থাকে। ছাত্রগণ তাকে অত্যন্ত সম্মান দিতেন। তার সুযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন,

(১) মিশরের কাযী আহমাদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে হাম্মাদ (মৃত: ৩২৯ হি:)

(২) ঐতিহাসিক আব্দুর রহমান ইবনে আহমাদ (মৃত: ৩৪৭ হি:)

(৩) সুলায়মান ইবনে আহমাদ ইবনে আইয়্যুব আত্-তাবারী (মৃত: ৩৬০ হি:)

(৪) الكامل في الجرح والتعديل গ্রন্থকার আব্দুল্লাহ বিন আদী আল-জুরজানী (মৃত: ৩৬৫ হি:)


আলেমদের দৃষ্টিতে ইমাম ত্বহাবী

অনেক আলেম ইমাম ত্বহাবীর প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি ছিলেন

ثقة ثبت فيقه عاقل حافظ دين له اليد الطولى في الفقه والحديث

অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য, সুদৃঢ়, ফকীহ, বিচক্ষণ, হাদীছের হাফেয এবং ধর্মভীরু আলেম। ফিকহ এবং হাদীছ শাস্ত্রে তার গভীর জ্ঞান ছিল।

ইবনে ইউনূস বলেন, ইমাম ত্বহাবী ছিলেন নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত, সুদৃঢ়, ফকীহ এবং বিচক্ষণ আলেম। তার যামানায় তার সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।

ইমাম ইবনে কাছীর রহিমাহুল্লাহ বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে বলেন, তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং হাদীছের সুদক্ষ হাফেযদের অন্যতম। ইমাম ইবনে কাছীর রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, তিনি ছিলেন হানাফী ফকীহ, প্রচুর কল্যাণকর ও মূল্যবান গ্রন্থের লেখক।

জামাল উদ্দীন আবুল মাহাসিন ইউসুফ ইবনুল আমীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, তিনি ছিলেন ফিকহ, হাদীছ, আলেমদের মতভেদ, আরবী ভাষা, নাহু-সরফ, ব্যাকরণ ইত্যাদি শাস্ত্রের ইমাম।

তার ইলমী খেদমত

সঠিক তথ্য উদঘাটন, সংকলন, সংগ্রহ, সুন্দর ও সাবলীল উপস্থাপনার দিক থেকে তার লেখনীগুলো অনন্য। তিনি যেসব মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন, তার মধ্য রয়েছে,

(১) আহকামুল কুরআনিল কারীম

(২) ইখতেলাফুল উলামা

(৩) শারহু মা‘আনিল আছার। এতে তিনি দলীলসহ ফিক্হ এর মাস‘আলাসমূহ আলোচনা করেছেন। এতে তিনি মতভেদপূর্ণ ফিকহী মাস‘আলাগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে দলীলগুলোও উল্লেখ করেছেন। মাস‘আলা ও দলীলগুলো উল্লেখ করার পর সেগুলো পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করে তার কাছে যেটি সুস্পষ্ট হয়েছে, সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কিতাবটি ছাত্রদেরকে গভীর জ্ঞান অর্জনের প্রশিক্ষণ দেয়, ফিকহী মাস‘আলাগুলোতে আলেমদের মতভেদের কারণ সম্পর্কেও অবগত করে এবং দলীল থেকে হুকুম-আহকাম নির্গত করার যোগ্যতা বৃদ্ধি করে। এর মাধ্যমে ছাত্রদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়।

(৪) ছহীহুল আছার

(৫) আস্ সুনানুল মাছুরাহ

(৬) মুশকিলুল আছার। যেসব হাদীছ বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরস্পর সাংঘর্ষিক মনে হয়, মুশকিলুল আছার গ্রন্থে তিনি সেসব হাদীছ উল্লেখ করে বৈপরীত্ব ও অসংগতি দূর করেছেন এবং তা থেকে বিভিন্ন হুকুম-আহকাম নির্গত করেছেন।

(৭) আল-আক্বীদাতুত ত্বহাবীয়া। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাগুলো এতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটি আলেমদের নিকট আক্বীদার একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। এর বহু ব্যাখ্যা রয়েছে। মূল পুস্তিকাটি যেভাবে সকল মাযহাবের অনুসারীগণ কবুল করে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি এর ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোও সেভাবে গৃহীত হয়েছে। আমরা যে ব্যাখ্যাটির অনুবাদ করতে যাচ্ছি, তা আলেমদের নিকট অত্যন্ত মূল্যবান একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এটি বিশেষভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে।

(৮) শারহুল জামে আল-কাবীর

(৯) শারহুল জামে আস-সাগীর

(১০) কিতাবুশ শুরুত

(১১) আন্ নাওয়াদের আল ফিকহীয়াহ

(১২) الرد على أبي عبيد (মুতাযেলী ইমাম আবু উবাইদের প্রতিবাদ)

(১৩) الرد على عيسى بن أبان (ঈসা বিন আবানের প্রতিবাদ)।

(১৪) المختصر في الفقه । এ ছাড়া রয়েছে তার আরো অনেক মূল্যবান গ্রন্থ, যা দ্বারা মুসলিম জাতি কিয়ামত পর্যন্ত উপকৃত হতে থাকবে।

ইমামের মৃত্যু

ইবনে খাল্লিকান وفيات الاعيان গ্রন্থে ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ এর ওফাত প্রসঙ্গে বলেন যে, যুগ শ্রেষ্ঠ ফকীহ, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী জ্ঞান তাপস আল্লামা আবু জাফর ত্বহাবী ৩২১ হিজরী মোতাবেক ৯৩৩ খৃস্টাব্দে ৮২ বছর বয়সে যিলকদ মাসের বৃহস্পতিবার রাতে মিসরে ইন্তিকাল করেন। সেখানকার গোরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি তাকে নাবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎ কর্মশীলদের সাথে জান্নাতুল ফেরদাউছে স্থান দাও। আমাদের সকলকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। আমীন!