রাহে বেলায়াত দ্বিতীয় অধ্যায় - বেলায়াতের পথে যিকরের সাথে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

(৮) নামীমাহ বা চোগলখুরী

গীবতের আরেকটি পর্যায় ‘নামীমাহ’, ‘চোগলখুরী’ অর্থাৎ কানভাঙ্গানো বা কথা লাগান। একজনের কাছে অনুপস্থিত কারো কোনো দোষত্রুটি আলোচনা গীবত। আর যদি এমন দোষত্রুটি আলোচনা করা হয় যাতে দুই ব্যক্তি মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয় তাহলে তাকে আরবীতে ‘নামীমাহ’ বলা হয়। এটি গীবতের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ ও জঘন্যতম কবীরা গোনাহের একটি। সত্য কথা লাগানোও নামীমাহ, যেমন সত্য দোষ বলা গীবত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

لا يدخل الجنة قنات


“চোগলখোর বা কানভাঙ্গানিতে লিপ্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”[1]


মনে করুন ‘ক’ ‘খ’-এর কাছে ‘গ’ সম্পর্কে কিছু গীবত বা খারাপ মন্তব্য করেছে। ‘খ’ ‘ক’-এর মুখ থেকে সেগুলি শুনে কোনো প্রতিবাদ না করে গীবত শোনার পাপে পাপী হয়েছে। এখন এই পাপকে বহুগুণে বৃদ্ধি করার জন্য সে ‘গ’-এর নিকট এসে ‘ক’-এর কথাগুলি সব বলে দিল। এভাবে ‘খ’ গীবত শোনা, গীবত করা ও নামীমাহ করার পাপে লিপ্ত হলো। এই দুর্বল ঈমান ব্যক্তি ‘গ’-এর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য তার প্রভু মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টি, গজব ও শাস্তি চেয়ে নিল।


মুহতারাম পাঠক, মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য মিথ্য কথা বলা জায়েয, কিন্তু সম্পর্ক নষ্টকারী সত্য কথা জায়েয নয়। এছাড়া এসকল গীবত ও নামীমা হতে লিপ্ত মানুষদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। যদি কেউ আপনার কাছে এসে আপনার কোনো ভাই সম্পর্কে এধরনের কথা বলে তাহলে তাকে থামিয়ে দিন। এই লোকটি চোগলখোর। সে সত্যবাদী হলেও আপনার শত্রু। আপনার হৃদয়ের প্রশান্তি, প্রবিত্রতা ও আপনার ভাইয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়। আল্লাহ আমাদেরকে চোগলখোরী ও চোগলখোর থেকে হেফাযত করুন ; আমীন।


সম্মানিত পাঠক, অহঙ্কার, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, গীবত, নামীমা ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক হৃদয়জাত অনুভূতি থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়, যথাসম্ভব সর্বদা নিজের জাগতিক ও পারলৌকিক উন্নতি, নিজের দোষত্রুটি সংশোধন ও তাওবার উপায় ইত্যাদির চিন্তায় মনকে মগ্ন রাখা। আত্মপ্রশংসার প্রবণতা রোধ করে আত্ম সমালোচনার প্রবণতা বৃদ্ধি করা। ‘আমার ভালগুণাবলী তো আছেই। সেগুলির প্রশংসা করে বা শুনে কি লাভ। আমার ভুলত্রুটি কি আছে তা জেনে এবং সংশোধিত করে আরো ভাল হতে হবে’ এই চিন্তাকে মনের মধ্যে বদ্ধমূল করতে হবে।


অন্য কোনো মানুষের কথা মনে হলে, আলোচনা হলে বা কেউ তাঁর প্রশংসা করলে মনের মধ্যে পরশ্রীকাতরতা, হিংসা বা অহংকার আসতে পারে। এজন্য এ সকল ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে নিজের মনে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ভাল ধারণা বদ্ধমূল করা, তার প্রশংসায্যেক্তিক ও উচিত বলে নিজের মনকে বিশ্বাস করানো, তার ভাল গুণাবলীর কথা মনে করে তাকে শ্রদ্ধা করতে নিজের মনকে উদ্ধুদ্ধ করা প্রয়োজন। ক্রমান্বয়ে এভাবে আমরা এ সকল কঠিন ও ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারব।

[1] বুখারী আস-সহীহ ৫/২২৫০; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১০১।