রাহে বেলায়াত প্রথম অধ্যায় - বেলায়াত ও যিকর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
জ. মাসনূন যিকরের শ্রেণীবিভাগ - ৮. রাসূল (সা.)-এর উপর সালাত-সালাম জ্ঞাপক বাক্যাদি - চতুর্থ ভাগ

৯. আল্লাহর কালাম পাঠের যিকর

আমরা ইতঃপূর্বে দেখেছি যে, কুরআনের নামই ‘যিকর’। সর্বশ্রেষ্ট আল্লাহর যিকর কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনের অর্থ অনুধাবন করা, কুরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা করা, কুরআন শিক্ষা করা, কুরআন শিক্ষা দান করা, কুরআনের আলোচনা করা ও সর্বোপরি কুরআনের নির্দেশ অনুসারে কর্ম করা - এগুলি সবই যিকর। শুধু তাই নয়। এগুলিই সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর।

পূর্বের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, সর্বশ্রেষ্ট যিকর: ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’, ‘সুব‘হানাল্লাহ’, ইত্যাদি। কিন্তু অন্যান্য সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, এ সকল যিকরের শ্রেষ্ঠত্ব কুরআনের পরে। কুরআনই সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর। বাকি যিকরের শ্রেষ্ঠত্বের কারণও কুরআনের অংশ হওয়া।

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন :

أفضل الكلام بعد القرآن أربع وهي من القرآن لا يضرك بأيهن بدأت “سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلّا الله، والله أكبر


“কুরআনের পরে সর্বোত্তম বাক্য চারটি, এই বাক্যগুলিও কুরআনের অন্তর্ভুক্ত। তুমি চারটির যে বাক্যই প্রথমে বল কোনো ক্ষতি নেই : ‘সুব‘হানাল্লাহ’, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’।[1]


(ক) কুরআনী যিকরের বিশেষ ফযীলত

এভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কুরআনই শ্রেষ্ঠতম যিকর। অন্যান্য যিকরের শ্রেষ্ঠত্বের কারণও কুরআনের অংশ হওয়া। অনেক হাদীসে কুরআন কেন্দিক যিকরের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এক হাদীসে আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

إِنَّكُمْ لَا تَرْجِعُونَ إِلَى اللَّهِ بِشَيْءٍ أَفْضَلَ مِمَّا خَرَجَ مِنْهُ يَعْنِي الْقُرْآنَ


“আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে (আল্লাহর নৈকট্য পেতে) তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট থেকে যা এসেছে তার চেয়ে, অর্থাৎ কুরআনের চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই।” হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।[2]

আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

مَا تَقَرَّبَ الْعِبَادُ إِلَى اللَّهِ بِمِثْلِ مَا خَرَجَ مِنْهُ يَعْنِي الْقُرْآنَ


“বান্দাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য বা বেলায়েত অর্জনের জন্য তাঁর থেকে যা বেরিয়ে এসেছে সেই কুরআনের মতো আর কিছুই নেই।” তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন আবার সনদের কিছু দুর্বলতাও বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী গবেষকগণ হাদীসটির সনদকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।[3]

সকল মুহাদ্দিস, ফকীহ ও বুজুর্গ একবাক্যে বলেছেন যে, সকল যিকরের শ্রেষ্ঠ যিকর কুরআন তিলাওয়াত।[4] তাবে তাবেয়ী সুফিয়ান সাওরী (মৃ. ১৬১ হি) বলেনঃ

أفضل الذكر تلاوة القران في الصلاة ثم تلاوة القران في غير الصلاة ثم الصوم ثم الذكر


“সর্বোত্তম যিকর সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত, এরপর সালাতের বাইরে কুরআন তিলাওয়াত। এরপর সিয়াম। এরপরে অন্যান্য যিকর।”[5]

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেছেন:

من شغله القران (قراءة القران) عن ذكري ومسئلتي أعطيته أفضل ثوب السائلين وفضل القران على سائر الكلام كفضل الله على خلقه


“যাকে কুরআন তিলাওয়াত বা কুরআন চর্চা আমার যিকর থেকে ও আমার কাছে প্রার্থনা করা থেকে ব্যস্ত রাখে তাঁকে আমি প্রার্থনাকারীদেরকে যা প্রদান করি তার সর্বোত্তম সাওয়াব প্রদান করি। সকল কথার উপর কুরআনের মর্যাদা ঠিক অনুরূপ যেমন সকল সৃষ্টির উপর আল্লাহর মর্যাদা।” হাদীসটির সনদে কিছু দুর্বলতা আছে বলে মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন। তবে হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন।[6]

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুবারাকপূরী বলেন: “যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাকার ফলে অন্যান্য যিকর ও দু’আ করতে সময় পায় না আল্লাহ তাঁকে তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে দেন। প্রার্থনাকারীদের প্রয়োজন ও মনোবাঞ্ছনা যেভাবে পূরণ করেন তার চেয়ে বেশি ও উত্তমভাবে তাঁর প্রয়োজন তিনি মিটিয়ে দেন। হাদীসের শেষ বাক্য দ্বারা উপরের বিষয়ের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যেহেতু কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর ও সর্বোত্তম দু‘আ, তাই কুরআনে মাশগুল বান্দার পুরস্কারও সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ।[7]


(খ) কুরআন শিক্ষার ফযীলত

কুরআন তিলাওয়াত, চর্চা, গবেষণা, কুরআনের অর্থ চিন্তা করা, অনুধাবন করা, শিক্ষা, শেখান ইত্যাদি সবই যিকর ও সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর। যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত, অর্থ অনুধাবন, আলোচনা, শিক্ষা গ্রহণ, শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি কাজে রত থাকেন তাহলে

স্বভাবতই তিনি উপরের হাদীসসমূহে বর্ণিত যিকরের ফযীলতসূমহ অর্জন করবেন এবং সর্বোত্তম পর্যায়ে অর্জন করবেন। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে কুরআন কেন্দ্রিক যিকরসমূহের অতিরিক্ত ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে এ বিষয়ে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করছি। কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দানের ফযীলতের বিষয়ে আবু হুরারইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ


“তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দান করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।”[8]

উকবা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমরা মসজিদে নববী সংলগ্ন সুফফাতে বসে ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে এসে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি চায় যে, প্রতিদিন মদীনার উপকণ্ঠে আকীক প্রান্তরে যেয়ে কোনো পাপে, অন্যায়ে, আত্মীয়স্বজনের ক্ষতিতে লিপ্ত না হয়ে দুটি বিশাল উঁচু চুট ওয়ালী উটনী নিয়ে ফিরে আসবে? আমরা বললামঃ আমরা প্রত্যেকেই তা পছন্দ করি। তিনি বলেনঃ

أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ ، أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ ، وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ ، وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الإِبِلِ


“তোমরা কেন মসজিদে যেয়ে আল্লাহর কেতাবের দুটি আয়াত শিক্ষা করছ না বা পাঠ করছ না? কারণ কুরআনের দুটি আয়াত শিক্ষা করা দুটি অনুরূপ উষ্ট্রীর চেয়ে উত্তম। তিনটি তিনটির চেয়ে ও চারটি চারটির চেয়ে উত্তম।”[9]


আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

يَا أَبَا ذَرٍّ لأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللهِ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ مِائَةَ رَكْعَةٍ وَلأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ بَابًا مِنَ الْعِلْمِ عُمِلَ بِهِ أَوْ لَمْ يُعْمَلْ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ أَلْفَ رَكْعَةٍ


“হে আবু যার, (মসজিদে বা কোথাও) যেয়ে কুরআন করীমের একটি আয়াত শিক্ষা করা তোমার জন্য ১০০ (একশত) রাক’আত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (মসজিদে বা কোথাও) যেয়ে ইল্মের একটি অধ্যায় শিক্ষা করা তোমরা জন্য ১০০০ (একহাজার) রাক’আত সালাত আদায় করা থেকে উত্তম।” হাফিয মুনযিরী হাদীসটির সনদ হাসান বলেছেন। কেউ কেউ সনদের দুর্বলতা দেখিয়েছেন।[10]


এখানে আমাদের বুঝতে হবে যে, এ সকল হাদীসে কুরআন শিক্ষা বলতে কুরআন বুঝা, অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা ও তার বিধানাবলী শিক্ষা করা বুঝান হয়েছে। আমরা আজ ইসলামের মূল প্রেরণা, অনুভূতি ও শিক্ষা থেকে শত যোজন দূরে সরে এসেছি। একদিন আমার এক বাংলাদেশী বন্ধুকে এক মিশরীয় বন্ধুর সাথে পরিচয় করে দিয়ে বললামঃ আমার বন্ধু হাফিজ অমুক। মিশরীয় বন্ধু বললেন, তাই! হাফিজ!! একলক্ষ হাদীস মুখস্থ আছে? আমি বললামঃ না, না, তা নয়। হাফিযে কুরআন। কুরআন মুখস্থ আছে। মিশরীয় বন্ধু বললেন, মুসলিম উম্মাহর আগের দিনে প্রত্যেক আলিম, বরং সকল শিক্ষার্থিই কুরআন মুখস্থ করতেন। কুরআন মুখস্থকারীকে বিশেষভাবে কখনো হাফিজ বলা হতো না। সকলেই তো কুরআন মুখস্থ করেছেন, কাজেই কে কাকে হাফিজ বলবেন। লক্ষাধিক হাদীস মুখস্থ করতে পারলে তাকে হাফিজ বলা হতো। এখন আর কেউ হাদীস মুখস্থ করতে পারি না। অধিকাংশ শিক্ষিত মুসলিম বরং অধিকাংশ আলিম হাফিজ নন। এজন্য কুরআনের হাফিজকেই হাফিজ বলা হচ্ছে। হয়ত এমন দিন আসবে, যেদিন একপারা কুরআন মুখস্থ করলেই তাকে সসম্মানে হাফিজ বলা হবে!

কুরআন শিক্ষা, তিলাওয়াত, শোনা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই এই অবস্থা। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশে এবং সাহাবী-তাবেয়ীগণের ভাষায় ও কর্মে এগুলি সবই ছিল অর্থ বুঝা ও হৃদয়ঙ্গম করা ও জীবনকে সে অনুসারে পরিচালিত করার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমরা কুরআন শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র না বুঝে দেখে দেখে উচ্চারণ শিক্ষাকেই বুঝি। এর চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করি না।


আমরা জানি যে, সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণের ভাষা ছিল আরবী। আরবী ভাষা বুঝার ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সকলের শীর্ষে। তা সত্ত্বেও তাঁরা কুরআনের ৫/১০ টি আয়াতের বেশি একবারে শিখতেন না। ৫/১০টি আয়াত শিখে, সেগুলির অর্থ, ব্যাখ্যা, নির্দেশনা ও কিভাবে তা পালন করতে হবে সবকিছু না শিখে পরবর্তী আয়াত তাঁরা শুরু করতেন না। এমনকি অনেক সাহাবী ১০/১২ বৎসর ধরে একটি সূরা শিক্ষা করেছেন। অর্থ না বুঝে এবং আমল না করে শুধুমাত্র কুরআন তিলাওয়াত করাকে তাঁরা অন্যায় বলে জেনেছেন। বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।

প্রখ্যাত তাবেয়ী আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ যাঁরা আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন তাঁরা বলেছেনঃ

أَنَّهُمْ كَانُوا يَأخُذُونَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ آيَاتٍ فَلَا يَأْخُذُونَ فِي الْعَشْرِ الْأُخْرَى حَتَّى يَعْلَمُوا مَا فِي هَذِهِ مِنَ الْعِلْمِ وَالْعَمَلِ قَالَ فَعَلِمْنَا الْعِلْمَ وَالْعَمَلَ


“তাঁরা যখন দশটি আয়াত শিখতেন, তখন সেই দশটি আয়াতের মধ্যে যা কিছু ইলম ও আমল আছে সব না শিখে পরবর্তী দশ আয়াত শেখা শুরু করতেন না।”[11]

ইবনু মাস’ঊদ, উবাই ইবনু কা’ব, উসমান (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁদেরকে দশ আয়াত শিক্ষা দিতেন। তাঁরা এই দশ আয়াতের মধ্যে যত প্রকার আমল আছে সব না শিখে পরবর্তী আয়াত শিখতে শুরু করতেন না। এভাবে তিনি তাঁদেরকে কুরআন ও আমল একত্রে শিক্ষা দান করতেন।[12]


আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আট বৎসর ধরে সূরা বাকারাহ শিক্ষা করেছেন। উমার (রাঃ) বার বৎসর ধরে সূরা বাকারাহ শিক্ষা করেন। যেদিন তাঁর সূরা বাকারা শিক্ষা সমাপ্ত হয় সেদিন তিনি আল্লাহর শুকরিয়া জানাতে একটি উট জবাই করে খাওয়ান।[13]


আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, “আমাদের যুগের মানুষেরা কুরআন শিক্ষার পূর্বে ঈমান অর্জন করতেন। মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর কুরআনের কোনো সূরা নাযিল হলে সে সময়ের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে সেই সূরার আহকাম, হালাল, হারাম, কোথায় থামতে হবে, ইত্যাদি সবকিছু শিখে নিতেন। এরপর এমন মানুষদের দেখছি, যাঁরা ঈমানের আগেই কুরআন শিখছে। কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে জানে না কুরআন তাকে কি নির্দেশ প্রদান করছে, কি থেকে নিষেধ করছে এবং কোথায় তাকে থামতে হবে। এরা কুরআনকে শুধু দ্রুত পড়ে যায় যেমন করে বাজে খেজুর ছিটিয়ে দেওয়া হয় তেমনভাবে।” হাদীসটির সনদ সহীহ।[14]


আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহান মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবীগণ যারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ তাঁদের অনেকেই কুরআন করীমের দুই-একটি সূরা মাত্র জানতেন। তবে তাঁরা কুরআন অনুসারে জীবন পরিচালনার তাওফীক পেয়েছিলেন। আর এই উম্মতের শেষ জামানার মানুষেরা ছোট, বড়, অন্ধ সকলেই কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন অনুসারে কর্ম করতে পারবে না।[15]

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন,

اعْلَمُوا مَا شِئْتُمْ أَنْ تَعْلَمُوا فَلَنْ يُؤْجِرَكُمُ اللَّهُ بِعِلْمٍ حَتَّى تَعْمَلُوا


“তোমরা যা ইচ্ছা যত ইচ্ছা ইলম অর্জন কর। কিন্তু যতক্ষণ না তোমরা ইলমকে আমলে পরিণত করবে বা ইলম অনুসারে জীবন পরিচালনা করবে ততক্ষণ আল্লাহ তোমাদেরকে কোনো পুরস্কার বা সাওয়াব প্রদান করবেন না।[16]

[1] মুসনাদ আহমাদ ৫/২০, নং ২০২৩৬, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৮৮। হাদিসটির সনদ সহীহ।

[2] হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৭৪১, মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩২৭, নং ২১১৯।

[3] সুনান তিরমিযী ৫/১৭৬, মুসনাদ আহমাদ ৫/২৬৮, তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৮/১৫১, আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদ, আস-সুন্নাহ ১/১৩৬, মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩২১, মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১৮৫।

[4] ইবনু খুযাইমা, সহীহ ইবনু খুযাইমা ১/১০৪, আব্দুর রাউফ মানাবী, ফাইযুল কাদীর ১/৫৪৯, ২/৪৭, আযীম আবাদী, আউনুল মা’বুদ ৩/৪৪।

[5] আবু নুআইম আল-ইসবাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৭/৬৭।

[6] সুনান তিরমিযী ৫/১৮৪, আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদ, আস-সুন্নাত ১/১৫০, বাইহাকী শু’আবুল ঈমান ২/৩৫৩, ইবনু হাজার ফাতহুল বারী ৯/৬৬, হাশিয়াতু ইবনুল কাইয়েম ১৩/৫০, উমর ইবনু আলী ওয়াদীইয়াশী, তুহফাতুল মুহতাজ ২/১৭৩, মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১৯৬।

[7] মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১৯৬-১৯৭।

[8] সহীহ বুখারী ৪/১৯১৯।

[9] সহীহ মুসলিম ১/৫৫২, নং ৮০৩।

[10] ইবনু মাজাহ ১/৭৯, নং ২১৯, মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩২৯।

[11] মুসনাদ আহমাদ ৫/৪১০, বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/১১৯, ইবনু আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ ৬/১১৭, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/১৬৫।

[12] তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯।

[13] বাইহাকী, শু’আবুল ঈমান ২/৩৩১, তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯।

[14] মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/১৬৫।

[15] তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯।

[16] ইবনুল মুবারাক, কিতাবুয যুহদ ১/২১, আবু নুআইম, হিলইয়া ১/২৩৬, তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯।