যিকর আরবী শব্দ। বাংলায় এর অর্থ স্মরণ করা বা স্মরণ করানো। পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাব যে, যে
কোনো প্রকারে মনে, মুখে, অন্তরে, কর্মের মাধ্যমে, চিন্তার মাধ্যমে, আদেশ পালন করে বা নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর নাম,
গুণাবলী, বিধিবিধান, তাঁর পুরস্কার, শাস্তি ইত্যাদি স্মরণ করা বা করানোকে ইসলামের পরিভাষায় যিকর বা আল্লাহর যিকর বলা হয়। তবে কুরআন ও সুন্নাহে ‘যিকর’ বলতে সাধারণভাবে কোনো না কোনোভাবে মুখের ভাষায় ‘আল্লাহর স্মরণ’ করাকে বুঝানো হয়। মুখের সাথে মনের ও কর্মের স্মরণ থাকতে হবে। শুধু কর্মের স্মরণ বা শুধু মনের স্মরণও যিকর। তবে কুরআন ও হাদীসে যিকরের নির্দেশের ক্ষেত্রে, যিকরের ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে বা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যিকর বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বত্র মূলত মুখের উচ্চারণের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ বুঝানো হয়েছে। আমরা পরবর্তী আলোচনায় তা বিস্তারিত দেখতে পাব।
উপর্যুক্ত ব্যাপক অর্থে ঈমান ও নেককর্ম সবই ‘যিকর’ বলে গণ্য। এ জন্য প্রশস্ত অর্থে বেলায়াতের পথের উপরোল্লিখিত আট
পর্যায়ের সকল কর্মকেই এক কথায় ‘যিকর’ বলে অভিহিত করা যায়। এভাবে যিকর ও বেলায়াত পরস্পরে অবিচ্ছেদ্য বা প্রায় সমার্থক। উপরের হাদীসে আমরা দেখেছি যে, বেলায়াতের পথের কর্ম দুই পর্যায়ের: ফরয ও নফল। নফল পর্যায়ের যিকরকে বেলায়াতের পথে অন্য সকল নফল ইবাদতের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে হাদীস শরীফে। সর্বোপরি, আত্মশুদ্ধির জন্য কুরআন-হাদীসে যিকরের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এজন্য আমরা এই গ্রন্থে বেলায়াতের পথের বর্ণনায় ‘যিকর’ বিষয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা করব। আল্লাহর কাছে তাওফীক ও কবুলিয়্যত প্রার্থনা করছি।