ইসলামী শিক্ষা ও যিকিরের মজলিসই হল সর্ব শ্রেষ্ঠ মজলিস। আর সে মজলিসে যদি মানব জাতির সর্বোত্তম ব্যক্তি উপস্থিত থাকেন যাতে তিনি তাঁর হাদীস ও যাবতীয় শিক্ষা ও নির্দেশিকা দিবেন তা কেমন হতে পারে? তাঁর মজলিসের বিশুদ্ধতা ও তাঁর আত্মীক নির্মলতার প্রমাণই হল, ভুলকারীকে সংশোধন করে দেয়া, অজ্ঞকে শিক্ষা দেয়া, উদাসিন-গাফেলকে সতর্ক করা। তাঁর মজলিসে উত্তম কথা ও কার্যক্রম ব্যতীত অন্য কোন কিছুই তিনি মেনে নিতেন না। কেউ কথা বলা আরম্ভ করলে যদিও চুপ থেকে তার কথাগুলি তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রবণ করতেন তবে তিনি কারো গীবত, পরনিন্দা ও অপবাদ দেয়া কোন ক্রমেই মেনে নিতেন না। এজন্যে তিনি অন্যের সম্মান রক্ষায় এ সব ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করতেন।

উতবান বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قام النبي - صلى الله عليه وسلم - يصلي فقال: «أين مالك بن الدخشم»؟ فقال رجل: ذلك منافق لا يحب الله ولا رسوله، فقال النبي - صلى الله عليه وسلم -: «لا تفعل ذلك، ألا تراه قد قال لا إله إلا الله يريد بذلك وجه الله، وإن الله قد حرم على النار من قال: لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله».

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়িয়ে বললেন: মালেক বিন আদ্দাখশামকে দেখছিনা কেন? এক ব্যক্তি বলল: সে তো মুনাফিক। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পছন্দ করে না। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি এ কথা বলো না। তুমি কি জানো না, সে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি কামনায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই” পাঠ করেছে! আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে ঐ ব্যক্তির উপর হারাম করেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি কামনায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই” পাঠ করবে!।[1]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া থেকে নিষেধ করেছেন এবং তেমনিভাবে অন্যের অধিকার খর্ব করা থেকেও নিষেধ করেছেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:

«ألا أنبئكم بأكبر الكبائر»؟ قلنا: بلى يا رسول الله، قال: «الإشراك بالله، وعقوق الوالدين» وكان متكئًا فجلس فقال: «ألا وقول الزور» فما زال يكررها حتى قلنا: ليته سكت».

আমি কি তোমাদের সর্বাধিক বড় গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? আমরা বললাম নিশ্চয়ই, হে আল্লাহর রাসূল! অবহিত করুন। তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা ও পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসে ছিলেন, অত:পর তিনি উঠে বসে বললেন: সাবধান তোমরা মিথ্যা কথা হতে এবং তা বার বার বলছিলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা বলতে লাগলাম এখন যদি তিনি চুপ হতেন।[2]

মুমিন জননী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-র প্রতি অগাধ ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তার কর্তৃক গীবত করাটা কঠোরভাবে দমন করে তার ভয়বহতা বর্ণনা করেছেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

قلت للنبي - صلى الله عليه وسلم - حسبك من صفية كذا وكذا، قال بعض الرواة: تعني قصرها، فقالت: «لقد قلت كلمة لو مزجت بماء البحر لمزجته».

আমি বললাম: হে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়েছে, হয়েছে ঐ সেই সাফিয়া। অন্য বর্ণনায় এসেছে- অর্থাৎ তিনি উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন ঐ বেঁটে সাফিয়া। এ কথা শুনে তিনি বলেন: তুমি এমন কথা বলেছ, তা যদি সাগরে মিশ্রণ করা হতো তবে সাগরের পানিকে পরিবর্তন করে দিতো।[3]

অন্য ভায়ের দোষ গোপনের মাধ্যমে সম্মান রক্ষাকারীকে সুসংবাদ দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«من ذب عن عرض أخيه بالغيبة كان حقًا على الله أن يعتقه من النار».

যে ব্যক্তি অন্য ভায়ের গীবত দমন করে তার সম্মান রক্ষা করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।[4]

[1] বুখারী, হাদিস: ৫৪০১; মুসলিম, হাদিস: ৩৩

[2] বুখারী, হাদিস: ২৫৫৪

[3] আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৭৫

[4] আহমাদ, হাদিস: ২৭৬০৯