উপদেশ ৩৮. বিদ্যায় ত্রুটি জাতির ধ্বংস আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

আল্লাহ বলেন, وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا ‘হে নবী! আপনি বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমার বিদ্যা বেশী করে দাও’ (ত্বা-হা ১১৪)। অত্র আয়াত প্রমাণ করে বিদ্যা আল্লাহর নিকট চাইতে হবে। তিনি আরো বলেন,فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ ‘অতঃপর আপনি জেনে নিন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই এবং আপনার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন’ (মুহাম্মাদ ১৯)। আল্লাহকে কিছু বলতে হলে প্রথমে বিদ্যা অর্জন করতে হবে। তিনি অন্যত্র বলেন, الرَّحْمَنُ، عَلَّمَ الْقُرْآنَ، خَلَقَ الْإِنْسَانَ، عَلَّمَهُ الْبَيَانَ ‘রহমান। তিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সবকিছুর বিবরণ শিক্ষা দিয়েছেন’ (রহমান ১-৪)। অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেন, فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لاَ تَعْلَمُوْنَ ‘তোমরা জ্ঞানী মানুষের নিকটে জিজ্ঞেস কর যদি তোমাদের জানা না থাকে’ (আম্বিয়া ৭)। তিনি আরো বলেন, اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ، خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ، الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ، عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ‘পড়ুন, আপনার প্রতিপালকের নামে। যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন জমাট বাধা রক্তপিন্ড হতে। আপনি পড়ুন, আপনার প্রতিপালনক সম্মানিত। যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষ যা জানত না’ (আলাক্ব ১-৫)। অন্যত্র তিনি বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ‘হে নবী! আপনি বলুন, অন্ধব্যক্তি ও চক্ষুষ্মান কি সমান? তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর না কেন?’ (আন‘আম ৫০)। অত্র আয়াত প্রমাণ করে একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত বিদ্যায় আল্লাহর পরিচয় দিয়ে আরম্ভ হয়েছে। এ আয়াতে বিদ্বানকে চক্ষু ওয়ালার সাথে এবং অশিক্ষিত মানুষকে অন্ধ ব্যক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُو الْأَلْبَابِ ‘হে নবী! আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী আর যারা জ্ঞানী নয় তারা কি সমান? নিশ্চয়ই জ্ঞানী মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে’ (যুমার ৯)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيْرُ، وَلاَ الظُّلُمَاتُ وَلاَ النُّوْرُ، وَلاَ الظِّلُّ وَلاَ الْحَرُوْرُ، وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ وَلاَ الْأَمْوَاتُ ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান হতে পারে না। অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে না। ছায়া ও রোদ সমান হতে পারে না। আর জীবিত ও মৃত সমান হতে পারে না’ (ফাতির ১৯-২২)। অত্র আয়াতে শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষের মাঝে চারটি পার্থক্য দেখানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلاَّ الْعَالِمُوْنَ ‘সেসব দৃষ্টান্তগুলি আমি মানুষের জন্য পেশ করেছি। যারা জ্ঞানী একমাত্র তারাই ঐসব দৃষ্টান্ত জানবে ও বুঝবে’ (আনকাবূত ৪৩)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন, إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম তারাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী বড় ক্ষমাশীল’ (ফাতির ২৮)।

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَضْلُ الْعِلْمِ خَيْرٌ مِنْ فَضْلِ الْعِبَادَةِ وَخَيْرُ دِيْنِكُمُ الْوَرَعُ.

হুযায়ফ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইলমের মর্যাদা ইবাদতের মর্যাদার চেয়ে অনেক বেশী। আর তোমাদের উত্তম দ্বীন হল পরহেযগারিতা’ (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১০০)।

عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالِ الْمَرَادِي رضي الله عنه قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ متكىء على برد له أحمر فَقُلْتُ لَهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ جِئْتُ أَطْلُبُ الْعِلْمَ فَقَالَ مَرْحَبًا بِطَالِبِ الْعِلْمِ إِنَّ طَالِبَ الْعِلْمِ تحفه الملائكة بأجنحتها ثم يركب بعضهم بعضا حتى يبلغوا السماء الدنيا من محبتهم لما يطلب.

ছাফওয়ান ইবনু আসসাল (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম, তখন তিনি লাল চাদর গায়ে দিয়ে হেলান দিয়ে মসজিদে বসে ছিলেন। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি ইলম অর্জন করতে এসেছি। তিনি বললেন, ইলম অর্জনকারীর জন্য স্বাগতম। নিশ্চয়ই ইলম অর্জনকারীকে ফেরেশতাগণ তাদের ডানা দ্বারা ঘিরে থাকেন। অতঃপর তারা পরস্পর ঘিরে আকাশের দিকে যেতে থাকে। এমনকি ইলম অর্জনকারীর ভালবাসায় তারা প্রথম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়’ (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১০৫)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَقُولُ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلاَّ ذِكْرَ اللهِ وَمَا وَالاَهُ وَعَالِمًا وَمُتَعَلِّمًا.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘পৃথিবী অভিশপ্ত। আর এতে যা কিছু আছে সবই অভিশপ্ত। তবে আল্লাহর যিকির এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে তারা অভিশপ্ত নয়। আর আলেম ও যারা ইলম অর্জন করে তারা অভিশপ্ত নয়’ (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১১৪)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে মানুষকে পৌঁছাতে থাক, যদিও একটি আয়াত হয়। বানী ইসরাঈলের নিকট হতে শুনা কথা বলতে পার, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্ত্তত করে নেয়’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৮৮)।

عَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللهُ يُعْطِي-

মু‘আবিয়া (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন। আর আমি নিছক বণ্টনকারী এবং দান করেন আল্লাহই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৯০)।

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٍ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الْحَقِّ وَرَجُلٍ آتَاهُ اللهُ الْحِكْمَة فَهُوَ يقْضِيْ بهَا وَيُعَلِّمُهَا-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত কেউ ঈর্ষার পাত্র নয়। প্রথম ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন দান করেছেন এবং সাথে সাথে তাকে তা সত্যের পথে বা সৎকাজে ব্যয় করার প্রবল মনোবলও দান করেছেন এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত দান করেছেন আর সে তাকে কাজে লাগায় এবং (লোকদের) শিক্ষা দেয়’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ,মিশকাত হা/১৯২)।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ، إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল (ও তার ছওয়াব) বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল (এগুলির ছওয়াব বন্ধ হয় না), (১) ছাদাক্বায়ে জারিয়া, (২) ইলম-যার দ্বারা (লোকের) উপকার সাধিত হয় এবং (৩) সুসন্তান- যে তার জন্য দো‘আ করে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৩)।