উপদেশ ৩৫. আল্লাহর পথে দাওয়াতের গুরুত্ব আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ حَسَدَ إِلاَّ عَلَى إِثْنَيْنِ رَجُلٌ أَتَاهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُوْمُ بِهِ أَنَاءَ اللَّيْلِ وَأَنَاءَ النَّهَارِ وَ رجُلٌ أَتَاهُ اللهُ مَالاً فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ أَنَاءَ اللَّيْلِ وَ أَنَاءَ النَّهَارِ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মাত্র দু’টি বিষয়ে হিংসা করা চলে। (১) এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন, যা দ্বারা সে মানুষকে দিন রাত দাওয়াত দেয়। (২) এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ অর্থ দিয়েছেন, যা থেকে সে রাত দিন দান করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৩)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِيْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَ يَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِيْنَةُ وَ غَشِيَتْهَمَ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَ ذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَّا بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে (মসজিদ বা মাদরাসায়) সমবেত হয়ে তাঁর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং তা জানার জন্য পরস্পর আলোচনা করে, তখন তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে। ফেরেশতাগণ রহমতের চাদর দ্বারা তাদেরকে ঘিরে থাকেন। আল্লাহ তাঁর নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে গর্বভরে তাদের কথা উল্লেখ করেন (দেখ তারা আমাকে না দেখে কিভাবে আমার কিতাব চর্চা করছে, আমি কি তাদের ক্ষমা করে দিব না?)। যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪; বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/১৯৪ ‘ইলম’ অধ্যায়)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئًا وَ مَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مَنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিক পথের দাওয়াত দেয় তার জন্য ঐ পরিমাণ নেকী রয়েছে, যে পরিমাণ নেকী উক্ত দাওযাতের অনুসারীগণ পাবে। কিন্তু তাদের নেকী বিন্দুমাত্র কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দাওয়াত দেয় তার জন্য ঐ পরিমাণ পাপ রয়েছে, যে পরিমাণ পাপ উক্ত পথের অনুসারীগণ পাবে। কিন্তু তাদের পাপ বিন্দুমাত্রও কম করা হবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৮; বাংলা মিশকাত ১ম খন্ড, হা/১৫১ ‘কিতাব ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ)।

عَنْ عُمَرَ بْنِ عَوْفٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الدِّيْنَ بَدَأَ غَرِيْبًا وَ سَيَعُوْدُ كَمَا بَدَأَ فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءِ وَهُمُ الَّذِيْنَ يُصْلِحُوْنَ مَا أَفْسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدِيْ مِنْ سُنَّتِيْ.

আমর ইবনে আউফ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই ইসলাম সংখ্যালঘু অথবা দুর্বল অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছে, আবার ঐ অবস্থায় ফিরে যাবে। তবে তারাই সফলকাম, যারা আমার পর বিনষ্ট সুন্নাতকে দাওয়াতের মাধ্যমে সংশোধন করবে’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/১৭০-এর টীকা দ্রঃ; বাংলা মিশকাত ১ম খন্ড, হা/১৬২)।

উল্লিখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে, দাওয়াত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (ছাঃ) দাওয়াতের উপর যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছেন। মানুষের ভ্রান্ত হ’তেসঠিক পথে ফিরে আসার বড় মাধ্যম হচ্ছে এই দাওয়াত। দাওয়াত শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত হওয়ার বড় অসীলা। দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজ যেমন শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত হয়, তেমনি দাঈও বড় নেকীর হক্বদার হন। কাজেই এই অন্যায়, অরাজকতা ও লুটতরাজ পূর্ণ সমাজে এবং সুদ-ঘুষ, অন্যায়-অবিচার, নারী নির্যাতন, নারী নগ্নতা ও বেহায়াপনায় পূর্ণ সমাজে দাওয়াত দান একান্ত যরূরী।

عَنْ أَبِيْ عَبْسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَغْبَرَتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ.

আবু আবস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে চলে কারো দু’পা ধুলায় মলিন হ’লে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৯৪; বাংলা মিশকাত ৭ম খন্ড, হা/৩৬২০)।

عَنْ أنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَغَدْوَةٌ فِيْ سبِيْلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে সকাল সন্ধ্যায় কিছু সময় ব্যয় করা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছূর চেয়েও উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৯২; বাংলা মিশকাত ৭ম খন্ড, হা/৩৬১৮)।

عن سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا.

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, একদিন আল্লাহর পথে সময় ব্যয় করা অথবা প্রস্ত্তত থাকা পৃথিবী এবং তার উপর যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়েও উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৯১; বাংলা মিশকাত ৭ম খন্ড, হা/৩৬১৭ ‘জিহাদ’ অধ্যায়)।

অতএব যারা কেবলমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য দাওয়াত প্রদান করে, তাদের জন্য আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত রযেছে। তারা ইহকালে ও পরকালে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি। তাদেরকে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতারা ঘিরে রাখবে।

عَنْ جَابِرٍ رَضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَيِّدُ الشُّهَدَاءِ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَرَجُلٌ قَامَ إِلَى إِمَامٍ جَائِرٍ فَأَمَرَهُ وَنَهَاهُ فَقَتَلَهُ.

জাবের (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (ছাঃ) বলেছেন, শহীদদের সর্দার হচ্ছেন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে হামযাহ (রাঃ) এবং সেই ব্যক্তিও তাঁর মত মর্যাদার অধিকারী, যে ব্যক্তি স্বৈরাচারী শাসকের পাশে দাঁড়াল তাকে ভাল কাজের আদেশ করল এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করল, তখন সে (স্বৈরাচারী শাসক) তাকে হত্যা করল (তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩০৮)